Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খুনের বদলা নিতেই পাল্টা খুন হয় সাত্তার

বছর দশেক আগে ঘটে যাওয়া একটি খুনের বদলা নিতেই সম্প্রতি খুন করা হয়েছিল বনগাঁর গাঁড়াপোতার বাসিন্দা সাত্তার মণ্ডলকে। সাত্তার খুনের তদন্তে নেমে বনগাঁ থানার পুলিশ বাপি বর্মন নামে এক ব্যক্তিকে রবিবার গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করেই পুলিশ জানতে পেরেছে, বছর দশেক আগে স্থানীয় ভরতপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বাড়িতে সকালে চড়াও হয় সাত্তার ও তার দলবল।

বাপি বর্মন।

বাপি বর্মন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৯
Share: Save:

বছর দশেক আগে ঘটে যাওয়া একটি খুনের বদলা নিতেই সম্প্রতি খুন করা হয়েছিল বনগাঁর গাঁড়াপোতার বাসিন্দা সাত্তার মণ্ডলকে। সাত্তার খুনের তদন্তে নেমে বনগাঁ থানার পুলিশ বাপি বর্মন নামে এক ব্যক্তিকে রবিবার গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করেই পুলিশ জানতে পেরেছে, বছর দশেক আগে স্থানীয় ভরতপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বাড়িতে সকালে চড়াও হয় সাত্তার ও তার দলবল। ওই ব্যক্তি তখন বাড়িতে তখন ভাত খেতে বসেছিল। অভিযোগ, তাকে গুলি করে, বোমা মেরে খুন করে সাত্তারবাহিনী। ওই ব্যক্তি ছিল সাত্তারের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর। ওই খুনেরই বদলা হিসাবে সাত্তারকেও খুন হতে হয়।

১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বনগাঁর কলমবাগান বাজার এলাকার একটি দোকানে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল সাত্তার। তখন দুষ্কৃতীরা গাড়িতে এসে তাকে গুলি করে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। সাত্তারের বিরুদ্ধেও পুলিশের খাতায় বহু খুন, অপহরণ, মাদক পাচার-সহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। খুনের ঘটনার পরে সাত্তারের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তৃণমূলের লোকজন ঘটনার পিছনে রয়েছে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়েছিল, দুষ্কৃতীদের নিজেদের গোলমালের জেরেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে। সাত্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ভাই গণেশ বিশ্বাস ও মোল্লাহাঁটির বাসিন্দা স্বপন সর্দার-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। পুলিশ বাপি-সহ ওই খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি দু’জন হল গণেশ বিশ্বাস ও পরেশ বর্মন। গণেশের বাড়ি গাঁড়াপোতা এলাকায়। পরেশ নদিয়ার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, স্বপন সর্দার গোপালনগরের খাবরাপোতা এলাকায় ইউনূস মণ্ডল নামে এক যুবককে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে এখন জেলহাজতে রয়েছে। পুলিশ সাত্তারকে খুনের ঘটনায় তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চলেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সাত্তারের খুনিদের গ্রেফতারের জন্য একটি বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। ওই টিম দিন কয়েক আগে ওড়িশার পারাদ্বীপে গিয়ে দু’দিনের চেষ্টায় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় জেলে-মাঝিদের মধ্যে থেকে বাপিকে পাকড়াও করে আনে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে রবিবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক বাপিকে ন’দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কে এই বাপি?

পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় মাছ ব্যবসায়ী বাপির বাড়ি স্থানীয় ভরতপুর কলোনিতে। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোনও অতীতে অপরাধের রেকর্ড নেই। তিনি নিজে বহু বার ট্রলারে করে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছেন জেলেদের সঙ্গে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাত্তারকে খুনের উদ্দেশ্যে বাপিই সুপারি কিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দুষ্কৃতীদের সংগঠিত করে সে। তবে খুনের পরিকল্পনা করেছিল অন্য কেউ কেউ। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” পুলিশের দাবি, বাপি জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন, সাত্তারকে খুনের জন্য মোট চার জন বাপিকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি হাতে পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। কেন ওই কাজে জড়ালেন? পুলিশকে বাপি জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে একটি অস্ত্রপচার করতে হবে। বহু টাকার প্রয়োজন ছিল। সে কারণেই রাজি হয়ে যান।

পুলিশের দাবি, বছর দশেক আগে যে ব্যক্তিকে সাত্তার খুন করেছিল, তার দুই আত্মীয় ও অন্য দু’জন খুনের ছক কষে। বাপিকে ব্যবহারের কারণ, সাত্তারের সঙ্গে বাপির সুসম্পর্ক। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাপি নদীয়ার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল গণেশের মাধ্যমে। ঘটনার দিন যে দোকানে সাত্তার খুন হয়, সেখানে বাপিও উপস্থিত ছিল। কিন্তু দুষ্কৃতীরা অপারেশন চালানোর কিছু ক্ষণ আগে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে যান। ধৃতকে জেরা করে পুলিশের ধারণা, এলাকায় সাত্তারের প্রভাব কমানো ও আর্থিক ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েও কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গে সাত্তারের বিরোধ চলছিল। তারাও সাত্তারের বিরুদ্ধে বাপিকে কাজে লাগিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, এলাকার একটি জমি ও বাওরের দখল নিয়েও দুষ্কৃতীদের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ তৈরি হয়েছিল। সাত্তার খুনের পিছনে ওই কারণও রয়েছে। ভাস্করবাবু বলেন, “তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, সকলকেই গ্রেফতার করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE