Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চেক নিয়ে প্রতারণা, যুবককে পিটিয়ে পুলিশে দিল জনতা

চেক জাল করে হাজার হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এক যুবককে গণধোলাই দিল জনতা। শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের উত্তর কাঁকড়া গ্রামে। খবর পেয়ে বসিরহাট থানার পুলিশ গিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে ওই যুবককে উদ্ধার করে। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাট এলাকার নাকাশি গ্রামের বাসিন্দা তুহিনশুভ্র হালদার নামে ওই যুবককে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বাকিদের খোঁজ চলছে।”

ধৃত তুহিন।—নিজস্ব চিত্র।

ধৃত তুহিন।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০০:২১
Share: Save:

চেক জাল করে হাজার হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এক যুবককে গণধোলাই দিল জনতা। শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের উত্তর কাঁকড়া গ্রামে। খবর পেয়ে বসিরহাট থানার পুলিশ গিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে ওই যুবককে উদ্ধার করে। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাট এলাকার নাকাশি গ্রামের বাসিন্দা তুহিনশুভ্র হালদার নামে ওই যুবককে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বাকিদের খোঁজ চলছে।” ধৃতকে রবিবার বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৫ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি গ্রামবাসীদের কয়েক জনের মোবাইলে ফোন করে নানা টোপ দেওয়া হচ্ছিল। কখনও এ ভাবে জেনে নেওয়া হচ্ছিল ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ডের নম্বর। কখনও সামান্য টাকার চেক দিলে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ দেওয়া হবে বলেও ফোন আসছিল। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে ইতিমধ্যেই বসিরহাটের কয়েক জন মানুষ বহু টাকা খুইয়েছেন।

কয়েক দিন আগে উত্তর কাঁকড়া গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী আবু জাহেরের কাছে একটি নামী কোম্পানির নাম করে ফোন আসে। বলা হয়, ৫০ টাকার চেক দিয়ে তাদের কোম্পানির একজন গ্রাহক হলে বড় অঙ্কের টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। আবু জাহের বলেন, “মাত্র ৫০ টাকার কথা। চেক দিয়ে দিয়েছিলাম। এক যুবক নিতে এসেছিল। কয়েক দিন পরে দেখি, ব্যাঙ্কে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই চেকের বিনিময়ে ৪৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কে অভিযোগ করলে জানানো হয়, গত ২৭ ডিসেম্বর শঙ্কর দেবনাথ নামে কোনও এক ব্যক্তি ওই চেক ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছে।” ওই ব্যবসায়ীর অনুমান, চেকের উপরে লেখা ৫০ সংখ্যাটিকে কোনও ভাবে কারসাজি করে ৪৯ হাজার করে নেওয়া হয়েছিল।

সম্প্রতি ফের ফোন আসে জাহেরের কাছে। এ বার বলা হয়, ১০০ টাকার চেক দিলে ৫-২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাইয়ে দেওয়া হবে। এএ বার আর ফাঁদে পা দেননি জাহের। চেক দেবেন বলে কথা দেন তিনি। বলেন, চেক যেন কেউ এসে নিয়ে যায়। সেই মতো, শনিবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে আসে তুহিনশুভ্র নামে ওই যুবক। তাকে ধরে শুরু হয় গণধোলাই।

তুহিন পুলিশকে জানিয়েছে, সে প্রতারণা সংস্থার সামান্য এক কর্মী। কলকাতায় দুই মহিলা-সহ পুরোদস্তুর ১৫ জনের একটি দল আছে। কী ভাবে সামান্য টাকার চেক নিয়ে তাতে বেশি অঙ্কের টাকা লিখে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার টাকা তুলে নেওয়া যাবে, তা নিয়ে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

চক্রের মূল পাণ্ডার নাম দেবাশিস দাস এবং শুভঙ্কর বাগদি। কম্পিউটারে বিশেষ পারদর্শী ওই দুই যুবক এবং দুই মহিলা কী ভাবে চেকে টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করে, তা-ও তুহিনের থেকে জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। তুহিন জানিয়েছে, কাকে কত টাকার ঋণ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কত টাকার চেক চাওয়া হবে, সে বিষয় নিয়ে আগে খোঁজ-খবর করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। এ জন্য এলাকায় এসে ওই ‘শিকার’-এর সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করত প্রতারকেরা। কিন্তু জাহেরের থেকে যে আগে এক বার চেক নেওয়া হয়েছিল, তা কোনও ভাবে ভুলে দিয়ে ফের তাঁকে ফোন করে বসাতেই ধরা পড়ে গেল চক্রের এক জন। জাহেরের আবার দাবি, পুলিশের হাতে ওই যুবককে তুলে দেওয়ার পর থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য তাঁকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE