Advertisement
১১ মে ২০২৪

চার ঘণ্টা কচুরিপানায় ডুবে থেকেও ধরা পড়ল যুবক

জমাট কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে ছিল অভিযুক্ত। পালানোর জো নেই। কারণ কচুরিপানা পেরিয়ে সাঁতরানোর সুযোগই নেই। শুধু নাকটুকু বের করে শ্বাস নিয়েছে পাক্কা চার ঘণ্টা ধরে। মাঝে মাঝে চোখ তুলে দেখে নিয়েছে পুলিশের খানা-তল্লাশির নমুনা। শেষ রক্ষা অবশ্য হল না। ধরা পড়ে গিয়েছে সুশান্ত মণ্ডল নামে ওই যুবক।

সুশান্তর খোঁজে তল্লাশি ইছামতীতে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

সুশান্তর খোঁজে তল্লাশি ইছামতীতে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:১২
Share: Save:

জমাট কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে ছিল অভিযুক্ত। পালানোর জো নেই। কারণ কচুরিপানা পেরিয়ে সাঁতরানোর সুযোগই নেই। শুধু নাকটুকু বের করে শ্বাস নিয়েছে পাক্কা চার ঘণ্টা ধরে। মাঝে মাঝে চোখ তুলে দেখে নিয়েছে পুলিশের খানা-তল্লাশির নমুনা। শেষ রক্ষা অবশ্য হল না। ধরা পড়ে গিয়েছে সুশান্ত মণ্ডল নামে ওই যুবক।

গোপালনগর থানার গঙ্গানন্দপুরের গাজিপুরের বাসিন্দা সুশান্তর বেআইনি মদের কারবার আছে বলে অভিযোগ। মদ কিনতেই মঙ্গলবার বনগাঁর একটি দোকানে এসেছিল সে। খবর ছিল পুলিশের কাছে। ধরা পড়ে যায়। থানায় নিয়ে আসা হয় তাকে। ডিউটি অফিসার যখন নাম-ধাম লিখছেন, সে সময়ে এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সুশান্ত। ‘ধর ধর’ করে তাড়া করেন দুই সিভিক পুলিশ কর্মী। থানার পাশেই রায়ব্রিজ। সেখানে এক ফুচকা বিক্রেতা গোলমাল বুঝে ধরে ফেলেন সুশান্তকে। তাঁর হাত ছাড়িয়ে ওই যুবক লাফ দেয় নদীতে। তত ক্ষণে ছুটতে ছুটতে এসে পড়েছেন দুই সিভিক পুলিশও। সকলের নজর এড়িয়ে নিমেষে কচুরিপানার ভিড়ে মিশে যায় সুশান্ত।

থানা থেকে আসামী পালিয়েছে, এই খবর জানাজানি হওয়ার পরে শোরগোল পড়ে যায় পুলিশ মহলে। বিশেষত, সোমবারই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে বাংলাদেশি এক অভিযুক্ত পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে। আখতার ওরফে আবদুল জব্বর হাওয়াদারকে ওই দিনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে সে ভর্তি ছিল। পুলিশ পাহারা থাকা সত্ত্বেও সন্ধ্যার দিকে পালায় সে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের মতে, হাসপাতালে অভিযুক্তদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকার ফলেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

গত কালই ওই ঘটনার পরে মঙ্গলবার ফের এক অভিযুক্ত পলাতক হওয়ায় স্বভাবতই পুলিশ কর্তাদেরও কপালে ঘাম জমে। ইছামতীতে নৌকো নামিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। তত ক্ষণে সেতুর উপরে হাজার লোকের ভিড়। কেউ বলছে, “ওই তো মাথা দেখা গেল।” পাশ থেকে কেউ শুধরে দিয়ে বলছে, “কী যে বলিস, ও তো প্লাস্টিকের টুকরো।” কেউ রে রে করে উঠছে, “ওই তো ঘাই মারল।” আবার উড়ে আসছে সংশোধনী, “ও সব চোখের ভুল। এত ক্ষণে ডুব সাঁতার দিয়ে কোথায় কেটে পড়েছে কে জানে।” পুলিশ কর্তারাও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন কপালের ঘাম মুছছেন। বেলা ৩টের পর থেকে ভিড়ও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ফুচকা-চা-ডিমভাজার স্টল লাগে লাগে।

এ দিকে, সন্ধে নামছে হুড়মুড় করে। আলো আনার ব্যবস্থা করে পুলিশ। নদীর পাড়ে হ্যালোজেন জ্বালিয়ে চলতে থাকে খানা-তল্লাশি। কিন্তু কচুরিপানায় ঢাকা নদীতে নৌকো করে ঘোরাও তো মুশকিল। ধীরে ধীরে ভরসা কমতে থাকে পুলিশ কর্মীদেরও। পাড়ে দাঁড়িয়ে তখন হতাশ জনতাও।

তখন সন্ধে প্রায় ৭টা। হঠাৎই মাঝির বৈঠা গিয়ে লাগে শক্ত কিছুতে। হইহই করে ওঠেন সকলে। দেখা যায়, জলের নীচে ঘাপটি মেরে বসে সুশান্ত। এত ক্ষণ জলে ডুবে থাকায় গায়ের রঙ তখন প্রায় ফ্যাকাশে। তাকে জল থেকে তুলে পাঠানো হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। দীর্ঘ উত্তেজনায় কপাল রগড়ে রগড়ে ঘাম মুছে অবশেষে ভিজে রুমাল পকেটে পোড়েন পুলিশ কর্তারা। ‘যাক বাবা, বাঁচা গেল’ অনেকের মুখেই ঘুরে ফিরে আসছিল শব্দগুলো। সঙ্গে, যুদ্ধজয়ের হাসি।

বছর বত্রিশের সুশান্তর দাবি, সে আদৌ পালাতে চায়নি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে লোকলজ্জার হাত থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE