Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চার শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগে বিতর্ক স্কুলে

ফলতা ব্লকের একটি স্কুলে চার জন শিক্ষকের ‘রহস্যজনক’ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাত্র চার দিনের জন্য ক্লাস নেওয়ার পরে হঠাৎই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন ওই চার জন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নাম করে শতলকলসা উচ্চবিদ্যালয়ে ওই শিক্ষকদের নিয়োগ বেআইনি বলে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা। কারণ, পুরো বিষয়টিতে স্কুলের পরিচালন কমিটিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

শান্তশ্রী মজুমদার
ফলতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৮
Share: Save:

ফলতা ব্লকের একটি স্কুলে চার জন শিক্ষকের ‘রহস্যজনক’ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।

১ সেপ্টেম্বর থেকে মাত্র চার দিনের জন্য ক্লাস নেওয়ার পরে হঠাৎই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন ওই চার জন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নাম করে শতলকলসা উচ্চবিদ্যালয়ে ওই শিক্ষকদের নিয়োগ বেআইনি বলে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা। কারণ, পুরো বিষয়টিতে স্কুলের পরিচালন কমিটিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

গত ২৮ আগস্ট ওই চার জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অপর্ণা মাঝি, সম্বিত ঘটক, পরশ বল্লভ এবং সঙ্গীতা সাহা যথাক্রমে জীবন বিজ্ঞান, ইংরেজি, ভূগোল এবং ইতিহাস বিষয়ে নিযুক্ত হন বলে তাঁরা শিক্ষকদের জানান। প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত পুরকাইত বাকি শিক্ষকদের সঙ্গে ওই চার জনের পরিচয় করে দেন। স্কুলের প্রভিশনাল রুটিনে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় সকলের। সে সময়েই বিষয়টি নিয়ে স্কুলেই প্রতিবাদ শুরু হয়। স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হলে তা পরিচালন কমিটির অনুমোদনেই করা হয়। কিন্তু এই চার জনের নিয়োগের আগে কোনও আলোচনা করা হয়নি।”

ইতিমধ্যে শিক্ষক দিবসের পর দিন থেকে কোনও কারণ না দেখিয়েই স্কুলে আসছেন না ওই চার জন। ঘটনার কথা কানে পৌঁছয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবজ্যোতি বোড়ালের কাছে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পরে স্কুলের শূন্যপদের তালিকা খতিয়ে দেখি দেখা যায়, ওই স্কুলে এখনই নিয়োগের কোনও জায়গা নেই। আমরা প্রধান শিক্ষককে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের ওই চার জন শিক্ষক বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। বৃত্তিমূলক ক্ষেত্রটা আমাদের বিষয় নয়।” বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, এখন এই মহকুমার স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শতলকলসা স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য ইলেকট্রিক্যাল, টেলরিং, কমিউনিকেটিভ ইংলিশের মতো বিষয় থাকলেও জীবন বিজ্ঞান, ভূগোল এবং ইতিহাসের মতো বিষয়গুলি কখনওই বৃত্তিমূলক শিক্ষার অধীনে নয়। স্কুল পরিচালন সমিতির এক শিক্ষক প্রতিনিধি জানালেন, মূল বিষয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের ক্লাসের সূচি এক সঙ্গে থাকতে পারে না। প্রধান শিক্ষক এটা কী ভাবে করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। স্কুল সূত্রের খবর, এই বিতর্ক সামনে আসতেই ওই চার জন শিক্ষকের নাম রেজিস্টার খাতা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্কুলের রুটিনে ওই চার জন শিক্ষকের একজন নাম সই করেছেন। ইতিহাসের শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত সঙ্গীতা সাহা অবশ্য দাবি করেন, “আমরা ওই স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলাম। এর বেশি বলব না।” কিন্তু কেন হঠাৎ স্কুলে আসা বন্ধ করেছেন, তা নিয়ে সদুত্তর মেলেনি তাঁর কাছে।

জানা গিয়েছে, বৃত্তিমূলক শিক্ষার কোনও পাঠ্যক্রমেই শিক্ষকদের মাত্র ৫-৬ দিনের জন্য নিয়োগ করা হয় না। কাকতালীয় ভাবে মহকুমার আরও কয়েকটি স্কুলেও একই রকম ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বুড়ুল হাইস্কুলেও একই রকম ভাবে চার জন এসে দাবি করেছিলেন, তাঁদের কাছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশপত্র রয়েছে। তাঁরা আদালতের নির্দেশে স্কুলে যোগ দিতে চান। কিন্তু যে হেতু এখনও কমিশনের তরফে স্কুলে সুপারিশপত্র পাঠানো শুরু হয়নি, তাই তাঁদের নিয়োগ করতে চাননি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবপ্রসাদ মণ্ডল। তিনি বলেন, “এখন নিয়োগ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। কমিশন স্কুলে শিক্ষকদের নি‌য়োগের যে সুপারিশপত্র আলাদা করে পাঠায়, তা-ও আমি পাইনি। কী ভাবে ওঁদের যোগদান করতে দেব স্কুলে?” প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি শতলকলসা স্কুলের ওই চার শিক্ষক এ রকমই কোনও দাবি করেছিলেন, যা যাচাই না করেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিয়োগ করে ফেলে? নাকি, কোনও রাজনৈতিক নেতার চাপে এই পদক্ষেপ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? প্রধানশিক্ষক সঞ্জিতবাবু দাবি করেন, ওই শিক্ষকদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তারপর নিজেরাই ছেড়ে চলে গিয়েছেন। রুটিনে তাঁদের নাম দেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, “যোগ্যতা থাকলে তাঁদের ক্লাস নিতে দেওয়া যেতেই পারে। এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE