Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেকে বাড়ি নিতে এসে বাবার হাতে ধরানো হল ডেথ সার্টিফিকেট

ছেলের মিশনে ছুটি পড়ল। সকালেই কথা হয়েছিল ফোনে। বলেছিল, তাড়াতাড়ি এসে নিয়ে যাও আমাকে। ছেলেকে আনতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাবা। গিয়ে শুনলেন, অসুস্থ হয়ে পড়ায় ছেলেকে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পরে বাবার হাতে ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হল। গোটা ঘটনায় হতভম্ব মানজুর আলম (১৩) নামে ওই ছেলেটির পরিবার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায়। দেহ আটকে রেখে টাকি রাস্তা অবরোধ করে জনতা।

মানজুর

মানজুর

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

ছেলের মিশনে ছুটি পড়ল। সকালেই কথা হয়েছিল ফোনে। বলেছিল, তাড়াতাড়ি এসে নিয়ে যাও আমাকে। ছেলেকে আনতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাবা। গিয়ে শুনলেন, অসুস্থ হয়ে পড়ায় ছেলেকে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পরে বাবার হাতে ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হল।

গোটা ঘটনায় হতভম্ব মানজুর আলম (১৩) নামে ওই ছেলেটির পরিবার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায়। দেহ আটকে রেখে টাকি রাস্তা অবরোধ করে জনতা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে বেড়াচাঁপার কাউকেপাড়ার রহমতে আলম মিশনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মানজুরের দেহ মেলে মিশন চত্বরেরই পুকুর থেকে। মিশন কর্তৃপক্ষের দাবি, সকাল ৬টা নাগাদ ওই পুকুরে বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিল মানজুর। ৭টা নাগাদ তাকে দেখতে না পেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রদের খোঁজ করতে বলেন কর্তৃপক্ষ। মিশনের সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘ছুটির দিন থাকায় বাড়ি যাবে বলে একটু ভোরে উঠে বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল মানজুর। পুকুরপাড়ে তার গামছা এবং জুতো পাওয়া যায়। জলে নেমে তল্লাশি চালানো হয়। ওই ছাত্রের দেহ মিললে তাকে আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, মৃতের কোমরে এবং গলায় দাগ রয়েছে। প্রাথমিক অনুমান, তা আঁচড়ের দাগ। মানজুরের পরিবারের অবশ্য দাবি, তাকে পিটিয়ে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য, এই ঘটনায় সিরাজুলকে গ্রেফতার করতে হবে। মিশনটিও বন্ধ করে দিতে হবে।

গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ।

মানজুরের বাড়ি কলকাতার নিউ টাউনের কেএলসি থানার হাতিসালা এলাকায়। বাবা আব্দুল মান্নান মোল্লা ক্যানিংয়ের মঠেরদিঘি হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। বছর দু’য়েক ধরে মানজুর ওই মিশনের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছিল। আব্দুল মান্নান পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ছুটি পড়েছে বুধবার থেকেই। বাড়ি ফিরবে বলে ভোরে ফোন করে ছেলে। ছেলেকে আনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন মান্নান ও মানজুরের মামা মনিরুল সরকার। সকাল ৮টা নাগাদ মিশনে পৌঁছন তাঁরা।

মিশন কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানান, ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ছেলে মারা গিয়েছে। আব্দুল বলেন, ‘‘ছেলে সাঁতার জানত। তা সত্ত্বেও কী ভাবে জলে ডুবে গেল, তা পরিষ্কার নয়। মিশন থেকে প্রথমে বলা হয় ও অসুস্থ। তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখানে গেলে ডাক্তারবাবু ছেলের ডেথ সাটিফিকেট আমাদের হাতে দিয়ে জানান, সে মারা গিয়েছে।” ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলেই তাঁর দাবি।

এই খবর পেয়ে আব্দুলের আত্মীয়-পরিজনেরা দেগঙ্গা থানায় আসেন। ইতিমধ্যে মানজুরের দেহ থানায় নিয়ে আসা হয়। ময়না-তদন্তের জন্য তা বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে দেহ আটকে রেখে মানজুরের পরিবারের লোকজন দাবি তোলেন, মিশনের সম্পাদককে গ্রেফতার করতে হবে। তা নিয়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। থানার সামনে টাকি রাস্তা অবরোধ করে শুরু করে জনতা। স্থানীয় বাসিন্দারাও তাতে সামিল হন। খবর পেয়ে বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে আসেন। তাতেও উত্তেজনা কমেনি।

ইতিমধ্যে খবর গিয়েছে আব্দুল মান্নানের প্রতিবেশী তথা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের কাছে। বেলা দেড়টা নাগাদ তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও হাজির হন। পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরে তাঁরা দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে। আরাবুল বলেন, ‘‘আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, পরিকল্পনা করেই ছেলেটিকে খুন করা হয়েছে। তদন্তে তা প্রমাণিত হলে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে।’’ এরপরে ময়না-তদন্তের জন্য দেহ বারাসাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসডিপিও সুবীরবাবু জানান, আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ছাত্রের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। মিশন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আহাসান আলি মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। মানজুরের মামা মনিরুল সরকার বলেন, ‘‘সাঁতার জানা একটা ছেলে মিশনের সামনে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গেল। অথচ কেউ তাকে দেখতে পেল না, সেটা সত্যি খুবই অদ্ভুত।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE