Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণের অভিযোগে জনতা পেটাল প্রধান শিক্ষককে

নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছিল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীরা ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করল। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ছিনিয়ে নিয়ে জনতা ফের চড়াও হয় প্রৌঢ় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পুলিশের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। পুলিশ কর্মীরাও চড়-থাপ্পর খেয়েছেন। পরে অবশ্য কোনও মতে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে পুলিশ।

তখনও চলছে মার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

তখনও চলছে মার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোপালনগর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৮
Share: Save:

নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছিল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীরা ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করল। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ছিনিয়ে নিয়ে জনতা ফের চড়াও হয় প্রৌঢ় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পুলিশের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। পুলিশ কর্মীরাও চড়-থাপ্পর খেয়েছেন। পরে অবশ্য কোনও মতে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু করে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগরের কৈখালি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালনগর থানার ওসি লিটন মৃধা, সংলগ্ন গাইঘাটা থানার ওসি অনুপম চক্রবর্তীরা বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থ‌লে পৌঁছন। বনগাঁ থানার থেকেও পুলিশ আসে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত আশ্বাস মেলে পুলিশের তরফে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাটি আদিবাসী অধ্যুষিত। কৈখালি প্রাথমিক স্কুলে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ৮৩ জন। আদিবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েদের সংখ্যাই বেশি। স্কুলে একজন মহিলা পার্শ্বশিক্ষক-সহ মোট শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা চার জন। পার্শ্বশিক্ষিকা এ দিন স্কুলে আসেননি। প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎকুমার মণ্ডল ওরফে অসিত দীর্ঘ দিন ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। গ্রামবাসীদের দাবি, এর আগেও প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। মোটা টাকা নিয়ে স্কুল থেকে জাল শংসাপত্র বিক্রির অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এ দিন বেলা ১টা নাগাদ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক আদিবাসী পরিবারের ছাত্রীর শরীর খারাপ হয়। সে প্রধান শিক্ষকের ঘরে গিয়েছিল ছুটি চাইতে। ওই ছাত্রীর কথায়, ‘‘ছুটি চাইতে স্যারের ঘরে গেলে উনি আমাকে পড়া বোঝাবেন বলে বই খুলতে বলেন। তারপর আমাকে চেয়ারে বসিয়ে আমার জামাপ্যান্ট খুলে খারাপ ব্যবহার করেন।’’

ঘটনার পরে মেয়েটি বাড়ি ফিরে মাকে ঘটনা জানায়। মেয়ের মায়ের কথায়, ‘‘হঠাৎ স্কুল থেকে মেয়ে বাড়ি ফিরে আসায় একটু অবাক হয়েছিলাম। কেন সে বাড়ি ফিরে এল জিজ্ঞাসা করতেই ও প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলে।’’

ঘটনা জানাজানি হতেই গ্রামের মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা বেলা দেড়টা নাগাদ স্কুলে চড়াও হয়ে প্রধান শিক্ষককে মারধর শুরু করেন। সহশিক্ষক গোপাল সর্দার তাঁকে বাঁচাতে গেলে তিনিও জনতার হাতে মার খান।

খবর পেয়ে গোপালনগর থানার পুলিশ আসে। গাড়িতে চালক-সহ মোট পাঁচ জন পুলিশকর্মী ছিলেন। পুলিশ ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপরে চড়াও হয়। পুলিশের গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। গাড়ি উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করে। মহিলারা পুলিশের গাড়ি থেকে প্রধান শিক্ষককে বের করে এনে ফের মারধর শুরু করেন। সঙ্গে যোগ দেন পুরুষেরাও। পুলিশ কর্মীরা প্রধান শিক্ষককে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গেলে তাঁরাও প্রহৃত হন। মাটিতে ফেলে পেটানো হয় অসিতবাবুকে।

নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগে প্রাথমিক স্কুলের প্রৌঢ় প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করলেন গ্রামবাসীরা।

ইতিমধ্যে আরও পুলিশ কর্মী এসে প্রধান শিক্ষককে জোর করে স্কুলের একটি ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে বেরনোর পথে জনতা ফের চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। প্রধান শিক্ষক কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। কোনও মতে বলেন, ‘‘গোটাটাই মিথ্যা অভিযোগ।’’

স্কুলের দুই শিক্ষক গোপাল সর্দার এবং সুজনকুমার দাস বলেন, ‘‘আমরা স্কুলের দোতলায় ক্লাস নিচ্ছিলাম। নীচে প্রধান শিক্ষক কী করেছেন, তা আমরা জানি না। তা ছাড়া, ব্যক্তিগত ভাবে আমরা ওঁর অতীতের কাজকর্ম সম্পর্কেও জানি না। তবে ঘটনা যাই হোক না কেন, এ ভাবে মারধর করাটা সমর্থন করা যায় না।’’ গোপালবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটির জ্বর এসেছিল। বলেছিলাম, প্রধান শিক্ষককে বলে বাড়ি যেতে। আমিই ওর বই-পত্তর গুছিয়ে দিই। তারপরে কী হয়েছে জানি না।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি সম্রাট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক যদি এমন ঘটিয়ে থাকেন, তবে তা নিন্দনীয়। আমরা বিভাগীয় তদন্ত করে ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE