Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মফুলের ধাঁচে মণ্ডপ-আলোকসজ্জা এ বার নজর কাড়ছে বসিরহাটের পুজোয়

কোথাও দেখা যাচ্ছে পদ্মফুল। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে গ্রাম। প্রজাপতির জীবনচক্র থেকে শুরু করে কাচের মণ্ডপ। এ সব কিছুই এ বার মিলবে বসিরহাটের পুজো মণ্ডপগুলিতে। কষ্টি পাথরের দেবী দুর্গা বা সোনালি রঙের ছটায় তৈরি হয়েছে গোল্ডেন লোটাস মন্দির যা দেখতে দূর দূর থেকেও লোক আসবেন বলে দাবি পুজো কমিটিগুলির।

বসিরহাটের উই দ্য গ্রিন ক্লাবের রংবাহারি মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।

বসিরহাটের উই দ্য গ্রিন ক্লাবের রংবাহারি মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৪
Share: Save:

কোথাও দেখা যাচ্ছে পদ্মফুল। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে গ্রাম। প্রজাপতির জীবনচক্র থেকে শুরু করে কাচের মণ্ডপ। এ সব কিছুই এ বার মিলবে বসিরহাটের পুজো মণ্ডপগুলিতে। কষ্টি পাথরের দেবী দুর্গা বা সোনালি রঙের ছটায় তৈরি হয়েছে গোল্ডেন লোটাস মন্দির যা দেখতে দূর দূর থেকেও লোক আসবেন বলে দাবি পুজো কমিটিগুলির।

নৈহাটিতে মণ্ডপ হচ্ছে পদ্মফুলের আদলে। আবার কোথাও আলো দিয়ে তৈরি হয়েছে পদ্মফুল। এলাকায় চারিদিকে এত পদ্মফুল। এ কি সম্প্রতি বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের ভোটের ফলের জের?

এ প্রশ্নের উত্তরে কয়েকটি ক্লাবের উদ্যোক্তারা বলেন, “তেমনটা নয়। পদ্মফুলের আদলে মণ্ডপের একটি রূপ দেওয়া হয়েছে মাত্র। তা ছাড়া, দুর্গাপুজোর প্রধান ফুলই তো পদ্ম ফুল। পদ্ম ছাড়া পুজো অসমাপ্ত থেকে যায়।” এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই জানালেন তাঁরা।

ফাইবার, টিন এবং চটের উপর প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠের। এই মণ্ডপের প্রতিমা শিল্পী দেবীপ্রসাদ দাস বলেন, “একটু অন্য রকম করে সাজানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি মানুষের ভাল লাগবে।” ক্লাবের পক্ষ থেকে দীপ রায়চৌধুরী বলেন, “মণ্ডপের সামনে একটি বিশালাকার শিবের মূর্তি আমাদের বিশেষ আকর্ষণ।” ইটিন্ডা রোডের ধারে সঙ্ঘশ্রী মণ্ডপের আকর্ষণও পদ্মফুল। নৈহাটি তরুণ সঙ্ঘের এ বারের থিম নানা মাপের প্লাস্টিকের বোতল, ছিপি, জরি, প্লাস্টিকের গামলা, চুমকি, এবং অভ্র দিয়ে হাতি। তার সঙ্গে রয়েছে অনেক রকমের পুতুল। এগুলি দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। একশো ফুট উঁচু খড়ের মন্দির করছে বদরতলা রিক্রিয়েশন ক্লাব। মেদিনীপুরের কাঁথির শিল্পীরা এই মণ্ডপটি সাজাচ্ছেন। ক্লাব সম্পাদক প্রিয়ব্রত সরকার বলেন, “মন্দিরের থিম সোনার বালা। মণ্ডপের সামনে থাকছে বিচালির তৈরি শিবলিঙ্গ। যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে।” টাকির সৈয়দপুর সর্বজনীন দুর্গোত্‌সব কমিটি যেমন সীমান্তবর্তী ইছামতীর ধারে গ্রামের মধ্যে গ্রাম্য পরিবেশ তৈরি করেছে। তেমনি শহরের মধ্যে আস্ত একটা গ্রাম তৈরি করে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বসিরহাটের নিউ উদয় সঙ্ঘ। আবার এ দিকে সুন্দর কারুকাজে মণ্ডপ ভরিয়ে তুলেছে মিলন সঙ্ঘ।

দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের অনুকরণে চটের উপর থার্মোকলের কারুকাজে দুর্গা মণ্ডপ তৈরি করেছে দেশবন্ধু অ্যাথেলেটিক্স ক্লাব। অন্য দিকে, চন্দননগরের আলো দিয় গোটা পাড়া আলোকিত করেছে নবারুণ সঙ্ঘ। ব্রিক সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজস্থানের মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করেছে। এদের চলমান দুর্গা দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ বলে দাবি ক্লাব কর্তৃপক্ষের। বাজারপাড়া সর্বজনীন দুর্গোত্‌সব কমিটির অন্যতম আকর্ষণ বলতে কুমারটুলি থেকে আনা কষ্টি পাথরের উপর অপূর্ব সাজের সুন্দর দুর্গাপ্রতিমা। যুবক সঙ্ঘের স্থায়ী মণ্ডপের মধ্যে সুন্দর প্রতিমা দর্শকদের মুগ্ধ করবে দেবদুত সঙ্ঘ। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডপ। একশো বছর পূর্তিতে ইয়ং স্টার ক্লাব চট, কাপড়, থার্মোকল এবং প্লাইউড দিয়ে তৈরি করেছে দুর্গামণ্ডপ। প্রগতি সঙ্ঘের আকর্ষণ বলতে কাচ, বেত এবং কাপড় দিয়ে শিস মহলের আদলে মণ্ডপ। কাঁচের বিশাল ঝাড় বাতি এবং আলোর মালা এই ক্লাবের বিশেষ আকর্ষণ। যুবকবৃন্দ, দেবদূত সঙ্ঘ, আর্শীবাদ, বিধান সঙ্ঘ, প্রভাতী সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ, অর্ঘ্য সঙ্ঘ, সাহিত্য সঙ্ঘ, বলাকা ক্লাব। এদের কারও আলো, কারও মণ্ডপ সজ্জা দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে। নৈহাটি শক্তি সঙ্ঘ তৈরি করেছে বিশালাকায় অ্যানাকন্ডার মণ্ডপ। প্রতিমা দর্শন করতে গেলে সাপের মুখের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।

বরাবরের মতো এ বারেও সুন্দর মণ্ডপ হিসেবে যুবক সঙ্ঘ, দি মুন ক্লাব, নেতাজি সঙ্ঘ, জাগ্রত সঙ্ঘ, কল্লোল, আশ্রমপাড়া, আজাদহিন্দ সঙ্ঘ, টাউন ক্লাব, নবপল্লি, নবীন সঙ্ঘ ও স্বরূপনগরে হটাতগঞ্জ ও শাঁড়াপুল বাজার কমিটি, কৈজুড়ি পঞ্চাননতলা পুজো কমিটি নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের। বিদ্যুত্‌ সঙ্ঘের বই খাতা দিয়ে তৈরি হওয়া মণ্ডপটিও বেশ সুন্দর। থার্মোকল কেটে বিশাল মন্দির তৈরি করেছে বাদুরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী সঙ্ঘ। চন্দননগরের আলোর সজ্জিত আইফেল টাওয়ার। অগ্নিবীণা ক্লাবের কৃষ্ণনগর থেকে আনা প্রতিমা মুগ্ধ করবে দর্শকদের। ক্রিকেট বল সহ রং-বেরঙের প্লাস্টিক বল দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। কৃষ্ণনগরের প্রতিমা ও চন্দননগরের আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে পাইওনিয়র ক্লাব। বাদুড়িয়ার মুক্তি সঙ্ঘ, অভিযাত্রী সঙ্ঘ, নবশ্রী সঙ্ঘ, যুব শান্তি সঙ্ঘের পাশাপাশি টাকি রিক্রিয়েশন ক্লাব, থুবা ব্যায়াম সমিতি, আর্কিড, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং, মিলন সমিতি এবং হিঙ্গলগঞ্জের টাইগার ক্লাব সুন্দর মণ্ডপ এবং প্রতিমার পাশাপাশি ঝকমকে আলোর ব্যবস্থা করেছে। হিঙ্গলগঞ্জ পল্লি উন্নয়ন সংস্থার এ বারের থিম, ফেস বুক। পথের দাবি গ্রামাট্রিক ক্লাবের আকর্ষণ, উত্তারাখন্ডের কৈলাশ পর্বত। শঙ্কর সমিতির থিম, বটগাছ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

basirhat pujo southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE