Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাগদা ও গাইঘাটার পুজো নজর টানছে গোটা জেলার

দুর্গাপুজোর পাশাপাশি কালীর আরাধনাতেও বনগাঁ মহকুমা এখন আর পিছিয়ে নেই। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আলোর উত্‌সবের কেন্দ্রবিন্দু এখন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লক। কয়েক বছর ধরে কালীপুজোর মান এখানে ক্রমবর্ধমান। মূলত হেলেঞ্চা ও সংলগ্ন এলাকা ঘিরেই এখানকার মানুষ পুজোর আয়োজনে মেতে ওঠেন। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে হাজার হাজার মানুষ রাত জাগেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগদা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

দুর্গাপুজোর পাশাপাশি কালীর আরাধনাতেও বনগাঁ মহকুমা এখন আর পিছিয়ে নেই।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আলোর উত্‌সবের কেন্দ্রবিন্দু এখন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লক। কয়েক বছর ধরে কালীপুজোর মান এখানে ক্রমবর্ধমান। মূলত হেলেঞ্চা ও সংলগ্ন এলাকা ঘিরেই এখানকার মানুষ পুজোর আয়োজনে মেতে ওঠেন। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে হাজার হাজার মানুষ রাত জাগেন।

শুধু বাগদা থানা এলাকারই নয়, বনগাঁ মহকুমার, এমনকী ও পার বাংলার মানুষও এখানে পুজো দেখতে আসেন। ক্লাবগুলির মধ্যে চলে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা। পুলিশের তরফে দীপ সম্মান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। পুলিশের হিসেবে এ বারে বড় পুজোর সংখ্যা পনেরোটি। ভিড় সামাল দিতে জেলা পুলিশের তরফে বড়সড় বাহিনী পাঠানো হয়েছে।

বাগদার বহু মানুষ কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে বা বিদেশে থাকেন। কালীপুজোর সময় তাঁরা বাড়ি ফেরেন। কেনাকাটা করেন। এটাই তাঁদের প্রধান উত্‌সবে পরিণত হয়েছে। কোথাও মণ্ডপ তৈরি হয়েছে তিব্বতের বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে। কোথাও বা থিম মিকি মাউস। পুজো আয়োজনের পাশাপাশি পুজোর উদ্যোক্তারা সমাজসেবার কাজেও নিজেদের যুক্ত করেছেন এখানে।

দর্শক আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় প্রথম দিকে যে পুজোগুলি থাকবে, তার মধ্যে নবারুণ সঙ্ঘ অন্যতম। গুজরাটের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। মণ্ডপের ভেতরে থাকছে মনীষীদের মূর্তি। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিসেবা ও দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। পুজোর বয়স ৩৫ বছর। বাগদা একাদশ ক্লাব তাদের ২৪ তম বছরে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। রয়েছে সমাজ সচেতনার উপর কাটআউট। যোগেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের থিম, পুরুলিয়া। দেখা যাবে বিখ্যাত ছৌ নাচ। পুরুলিয়া থেকে শিল্পীরা আসছেন। তাঁত বোনা, ধান ঝাড়া, গরুর গাড়ি ইত্যাদি জীবন্ত মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। মেলাও বসবে পুজো প্রাঙ্গণে।

হেলেঞ্চা দিঘির পাড় যুবগোষ্ঠী তাদের ১৮ তম বর্ষে থিমে নিখোঁজ পর্বত আরোহী ছন্দা গায়েনকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও ঝর্ণা। হেলেঞ্চা বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ তিব্বতের বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে। থাকছে বস্ত্রদান কর্মসূচি। হেলেঞ্চা সবুজ সঙ্ঘের ২৫ তম বছরের থিম মিকি মাউস। কাঁথির শিল্পীরা মিলে তৈরি করেছেন। জীবন্ত মডেল থাকবে। দেখা যাবে ছোটা ভীম, গোপাল ভাঁড়কেও। বৈচেডাঙা নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব এ বার প্লাস্টিকের বোতল ও ছিপি দিয়ে কাল্পনিক মণ্ডপ তৈরি করেছে।

আপনজন ক্লাবের ৪৭ তম বর্ষের মণ্ডপ কৈলাসনাথ পর্বতের অনুকরণে। গুহার মধ্যে ঢুকে প্রতিমা দেখতে হবে। হেলেঞ্চা স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো এ বার ২৬ বছরের। স্টিলের চামচ-বাটি দিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। আলোতে দেখা যাবে বিশ্ব সৃষ্টি থেকে মানুষের বিবর্তন। কৃষ্ণচন্দ্রপুর নেতাজি সঙ্ঘ তৃতীয় বর্ষে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে কাল্পনিক মণ্ডপ তৈরি করেছে। চুয়াটিয়া পাঁচ মাইল মিলন পল্লি ঐকতান সঙ্ঘ ওড়িশার দেবকী মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছে। আলো-শব্দ প্রক্ষেপণে লালন ফকিরের গান গাওয়া দেখা ও শোনা যাবে।

বাগদার হেলেঞ্চার মতো গাইঘাটার চাঁদপাড়া ও সংলগ্ন এলাকাকে কেন্দ্র করেও উত্‌সবের উন্মাদনা শুরু হয়েছে। এখানেও জাঁকজমক করে চলছে কালীর আরাধনা। বকচরা পুকুরপাড়ের প্যারাডাইস ক্লাবের পুজোতে দেখা যাবে জীবন্ত প্রতিমা। শান্তিপুর থেকে জীবন্ত মডেল আসছে। বস্ত্রদানের আয়োজন হচ্ছে। সেকাটি মঠপাড়ার এগিয়ে চলো নবীন সঙ্ঘ তাদের ৩৫ তম বছরে ইতালির একটি গির্জার আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। উদ্যোক্তাদের কাছে সাধারণ মানুষ নিজে থেকেই এসে চাঁদা দিয়ে যান। গৌরবোজ্জ্বল সঙ্ঘ তাদের নবম বর্ষে রথের আদলে কাল্পনিক মণ্ডপ তৈরি করেছে। মণ্ডপের বাইরে থাকছে হোগলা পাতার কাজ। ভেতরে বোতামের কাজ। আলোতে দেখা যাবে গ্রামের হাট।

চাঁদপাড়া বিএম পল্লি অ্যাথলেটিক রকস্টার ক্লাবের পুজো মহিলা পরিচালিত। ১৬তম বর্ষে তাঁদের কোনও সম্পাদক নেই। যে যার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে পালন করেন। এঁদের থিম বাল্যবিবাহ রোধ, পালস পোলিও শিবির, নারী ও শিশু পাচার। চৌরঙ্গি ক্লাবের পুজো ৪৬ বছরের। পাট দিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। পাটের প্রতিমা। শিবের জটা থেকে ফোয়ারা বেরোবে। দিগন্ত সঙ্ঘ মাদুর কাঠি দিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়ছে। কালীর এখানে দেখা যাবে অগ্নিবীণা মূর্তি। সুভাষ সঙ্ঘের পুজোর বৈশিষ্ট্য ২৬ ফুট উঁচু কালী। শিবাজী সঙ্ঘের থিম পোড়োবাড়ি। দেবীপুর নবীন সঙ্ঘ তাদের ৩৭ তম বর্ষে প্লাই থার্মোকল দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে কেনিয়ার একটি মন্দিরের আদলে। এ ছাড়া ঠাকুরনগর এলাকাতেও কয়েকটি ভাল পুজো হয়।

বনগাঁ শহরের কালীপুজো মানে বাবুপাড়ার নবারুণ সঙ্ঘ। এ বার ৪৪ তম বছরে তারা মণ্ডপ করেছে লণ্ডনের বিড়লা কৃষ্ণ মন্দিরের আদলে। মণ্ডপের দেওয়াল জুড়ে দেখা যাচ্ছে রামায়ণের নানা কাহিনি। বৃহস্পতিবার পুজোর উদ্বোধন করতে আসবেন বলিউডের নায়িকা মহিমা চৌধুরী। এ ছাড়া, হিন্দু মহাসভার পুজো ও গাঁড়াপোতা এলাকার কয়েকটি পুজো উল্লেখযোগ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bagda gaighata kali puja kali pujo southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE