সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিমুখতা নিয়ে বাজার চলতি ধারণা যে খুব ভুল নয়, ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লক অফিসে শুক্রবার সকালে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে তা টের পাওয়া গেল। পরিষেবার হাল, অফিসের পরিবেশ, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কর্মীদের ব্যবহার সে কথাই প্রমাণ করে।
সকাল ১০টায় সরকারি অফিস চালু হওয়ার কথা। ১৫ মিনিট পর্যন্ত বাড়তি অপেক্ষা করা যেতে পারে বলে সরকারি নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু কোথায় কী? শুক্রবার বেলা ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত মোট ১৭টি ঘরে মাত্র ২ জন কর্মীর দেখা মিলল টেবিলে। এক জন ১৬ নম্বর ঘরে অ্যাকাউন্টসের কর্মী, অন্য জন ১০ নম্বর ঘরের ক্লার্ক। তখনও বিডিও আসেননি। কিন্তু বোলসিদ্ধি থেকে নিজের বোনকে সঙ্গে করে শংসাপত্রের কাজ করাতে এসেছিলেন গৌতম ঘরামি। তিনি প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, “আজ আর বোনের ক্লাস হল না। কাজটা সেরে বোনকে স্কুলে পৌঁছে দেব ভেবেছিলাম। কত ক্ষণ আরও অপেক্ষা করতে হবে জানি না।” ঘড়িতে সাড়ে ১০টা বাজলে একে একে কর্মী, আধিকারিকেরা আসতে শুরু করলেন। বিডিও নির্মাল্য বাগচি যখন ঢুকলেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় বেলা পৌনে ১১টা। তারও পরে একে একে এলেন যুগ্ম বিডিও এবং আরও কয়েকটি দফতরের কর্মীরা। যে যার মতো এসে বিডিও দফততের রাখা হাজিরা খাতায় সই করে দিয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু বিডিও-র সে দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। কাজের চাপেই হবে হয় তো!
দফতরে এসেই অবশ্য কাজ শুরু করলেন না কর্মীরা। ৬ নম্বর ঘরে বসল খানিক গল্পগুজবের আসর। দেশ-কাল-সমাজ নিয়ে নানা গুরুগম্ভীর আলোচনা হল। এরই মধ্যে সংখ্যালঘু দফতরে আসতে শুরু করেছে ছাত্রছাত্রীরা। বিডিও একা হাতে তাঁদের সেই সব কাগজপত্রে সই-সাবুদ করে ৭ নম্বর ঘরের সংখ্যালঘু আধিকারিক শেখ আরিফ মহম্মদের কাছে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু কোথায় তিনি? লাইন বাড়তে থাকে ৭ নম্বর ঘরের কাছে। এই সময় সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের তরফে চলছে প্রি ম্যাট্রিক এবং পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের ফর্ম তোলা এবং জমা করার কাজ। ফর্ম জমা করতে স্থানীয় মঞ্জিতা থেকে এসেছিল ডায়মন্ড হারবার হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মাসুদুর রহমান। তারও এ দিন আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। কারণ, সংখ্যালঘু দফতরের ওই কাজের দায়িত্বে থাকা কর্মী এ দিন এসে পৌঁছন প্রায় ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ। কাস্ট সার্টিফিকেট নিতে আসা গৌতম ঘরামি অফিস থেকে বেরোলেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে। বিডিও অবশ্য দাবি করেছেন, এ দিন তিনি নিজে এবং দফতরের সব কর্মীই সময় মতো এসেছেন। তাঁর কথায়, “১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত অফিসে আসতে পারেন কর্মীরা। তবে তারপরে এলে অর্ধেক বেলা ছুটি ধরে নিতে হবে। এ রকম ছুটি আজ কাউকেই নিতে হয়নি।”
নেতড়া থেকে এসেছিলেন নীলিমা মিস্ত্রি। বর্ষায় তাঁদের ঘর ভেঙে গিয়েছে। মাথা গোঁজার জন্য একটি ত্রিপলের ভীষণ প্রয়োজন। পঞ্চায়েত দফতর ভেরিফিকেশন করে দেখার পরেও এ দিন তিনি তা পাননি। অফিসে ঢুকতেই দফতর নির্দেশিকার যে বোর্ডটি বাঁ দিকে রয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবে বেশ কিছু ঘর এবং দফতরের মিল নেই। ফলে অনেকেই ভুল ঘরে ঢুকে পড়ে কর্মী, অফিসারদের বিরক্তির কারণ হচ্ছেন। একই অবস্থা হয়েছিল নীলিমা দেবীরও। প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে তিনি বলেন, “ত্রাণের ঘর বন্ধ। লোকজন নেই। আমি কী ভাবে ত্রিপল পাবো, সে ব্যাপারে কেউ তো কিছুই বলতে পারছেন না। বর্ষায় কষ্ট হচ্ছে।” তবে বিডিও জানিয়েছেন, ত্রাণের কর্মীরা শুনানিতে গিয়েছে। পঞ্চায়েতে ত্রিপল পাঠানো হলেই তিনি তা পাবেন।
কবিরা অঞ্চল থেকে শ্রম দফতের কাজ সারতে এসেছিলেন সফিক মোল্লা। তিনি অবশ্য দফতরের কাজে সন্তুষ্ট। একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাসুলডাঙা থেকে আসা এক ছাত্রীও। দফতেরর দু’টি তলাতেই শৌচালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। নোংরা, অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধযুক্ত। কোনও মতে পা ফেলতে হয়। দফতেরর নীচের তলায় ২ নম্বর ঘরের পাশে ভাঙা আলমারিতেই রয়েছে জরুরি কাগজপত্র। ইলেকট্রিক মিটারের তারের কাছে ডাঁই করা দুর্ঘটনাপ্রবণ পিচবোর্ডের কার্টন। নোটিসবোর্ড পরিষ্কার করা হয় না দীর্ঘ কাল। দফতরের পরিষেবা ও কাজের পরিবেশ নিয়ে কোনও অভিযোগ, প্রস্তাব থাকলে তার জন্য বাক্স রয়েছে। কিন্তু তাতে তালাই নেই। তবে এই সব অভিযোগও মানতে চাননি বিডিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy