Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মাছ চুরির অভিযোগে পিটিয়ে খুন তরুণকে

বাবা-মায়ের চোখের সামনেই মাছ চুরি করার অভিযোগে দফায় দফায় পিটিয়ে মারা হল বছর সতেরো-আঠারোর ছেলেকে। শুক্রবার ভোরে হাড়োয়ার এই ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রঙ। নিহত বিশ্বনাথ দাসের পরিবারের দাবি, তারা বিজেপি সমর্থক। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের উপরে চাপ ছিল।

নিহত বিশ্বনাথের শোকার্ত মা ও বাবা।  ছবি: নির্মল বসু।

নিহত বিশ্বনাথের শোকার্ত মা ও বাবা। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

বাবা-মায়ের চোখের সামনেই মাছ চুরি করার অভিযোগে দফায় দফায় পিটিয়ে মারা হল বছর সতেরো-আঠারোর ছেলেকে। শুক্রবার ভোরে হাড়োয়ার এই ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রঙ। নিহত বিশ্বনাথ দাসের পরিবারের দাবি, তারা বিজেপি সমর্থক। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের উপরে চাপ ছিল। তা না মানায় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে বিশ্বনাথকে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুই তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের দাবি, বিশ্বনাথের ‘উপদ্রবে’ খেপে গিয়ে এলাকার মানুষ তাকে গণধোলাই দিয়েছে।

ঘটনাস্থল হাড়োয়ার উচিলদহ-গড় কোয়াটি গ্রাম। বিশ্বনাথের বাবা রণজিৎবাবু মৎস্যজীবী। তিনি জানিয়েছেন, এ দিন ভোরে চিৎকারে ঘুম ভাঙে। বেরিয়ে শুনতে পান, এলাকার তৃণমূল সমর্থক মনোরঞ্জন দাসের বাড়িতে এক মাছচোরকে বেঁধে রাখা হয়েছে। গিয়ে দেখেন, তাঁরই ছোট ছেলে বিশ্বনাথকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটাচ্ছে জনতা।

ইতিমধ্যে বিশ্বনাথের মা গুলুরানিও ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, “মনোরঞ্জনের হাতে-পায়ে ধরে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলি। ওরা কথা কানেই তুলল না!” গুলুরানিদেবীর অভিযোগ, ভেড়ি-মালিক মনোরঞ্জন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা তাঁদের বলছিলেন, “তোরা বিজেপি করিস। বিজেপির বাবাদের ডেকে নিয়ে আয়। দেখি, কে বাঁচায়!” মারের চোটে বিশ্বনাথ এক সময়ে নেতিয়ে পড়ে। তখন তাঁকে টেনেহিঁচড়ে কাছেই একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাঠে নিয়ে গিয়ে আর একপ্রস্ত পেটানো হয়। ইতিমধ্যে থানায় খবর দেন বিশ্বনাথের বাবা-মা। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই মারা যায় ছেলেটি। মনোরঞ্জন দাস-সহ ন’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন রণজিৎবাবু। মনোরঞ্জন ও তার এক ভাই রমেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে এক থলি বাগদা চিংড়ি পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, মাছ চুরির অভিযোগে এর আগে জেলও খেটেছে বিশ্বনাথ।

বিজেপির হাড়োয়া ব্লক সভাপতি তাপস রুদ্র বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদের দলের এক কর্মীকে খুন করল তৃণমূলের লোকজন।” তৃণমূলের ব্লক নেতা সঞ্জু বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘কেউ অন্যায় করলে পুলিশ তাকে ধরুক। আমাদের সমর্থকদের পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

ঘটনার পর থেকে গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য। পুলিশ টহল দিচ্ছে। ধৃত মনোরঞ্জনের স্ত্রী জয়ন্তী দাসের দাবি, তাঁদের মেছোভেড়িতে বিশ্বনাথকে মাছ চুরি করতে দেখেন তাঁর দুই দেওর। ছেলেটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ঠিক হয়েছিল পুলিশে জানানো হবে। তার আগেই গ্রামের মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে গণধোলাই দেয় বিশ্বনাথকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fish theft beaten to death southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE