শনিবার কারমাইকেল শিল্ডের ফাইনালের একটি উত্তেজনাপূর্ণ মূহুর্ত।—নিজস্ব চিত্র।
মাঠভর্তি দর্শক। মুখোমুখি কলকাতার দুই দল। প্রথমার্ধেই লাল কার্ড। টানটান লড়াইয়ে পেন্ডুলামের মতো এক বক্স থেকে অন্য বক্সে ছুটল বল।
শনিবার বসিরহাট স্টেডিয়ামে শতবর্ষপ্রাচীন কারমাইকেল শিল্ডের ফাইনালের হা়ড্ডাহা়ড্ডি লড়াইয়ে বাজিমাত করল ইউনাইটে়ড স্পোর্টস। এই মরসুমে আইএফএ শিল্ডের পরে আরও একটি ঐতিহাসিক শিল্ড জিতল কলকাতার এই দলটি। এ দিন ভবানীপুর ক্লাবকে তারা ১-০ গোলে হারিয়ে দেয়। খেলার একমাত্র গোলটি করেন দীপঙ্কর সরকার। এ দিন সকাল থেকেই গোটা শহর ছিল স্টেডিয়ামমুখী। কলকাতা ময়দানের দুই প্রথমসারির দলের খেলা দেখতে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ভরতে শুরু করে গোটা মাঠ। স্টেডিয়ামে জায়গা না পেয়ে অনেককে স্টেডিয়াম সংলগ্ন পাঁচিল, বাড়ির ছাদে উঠেও খেলা দেখতে দেখা যায়। এ দিন শুরু থেকেই খেলার মেজাজ ছিল চড়া সুরে বাঁধা। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে খেলা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে লাল কার্ড দেখেন ভবানীপুরের ইন্দ্রজিৎ দাস। দশজন হয়ে যায় ভবানীপুর। এর পর দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিটের মাথায় জয়সূচক গোলটি করেন ইউনাইটেডের দীপঙ্কর সরকার। গোলশোধের অনেক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ভবানীপুর। ফাইনালের সেরা সেরা হয়েছেন জয়ী দলের মহম্মদ ফরিদ আলি মণ্ডল। পাঁচটি গোল করে প্রতিযোগিতার সেরা হন প্রান্তিকের রাখেশ হাজরা। এ দিন খেলাটি পরিচালনা করেন প্রতীক মণ্ডল, উত্তম ভট্টাচার্য়, রুহুল আমিন এবং মোক্কাবেল গাজি।
এ দিনের ফাইনালে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলার ও কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী। জেলার মাঠে দর্শক ঠাসা স্টেডিয়াম দেখে খুশি আয়োজক ও অতিথিরা। প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার দাবি করেন, ‘‘রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ফুটবলের জন্য গ্রাম-গঞ্জে ছুটে যাচ্ছেন। সুন্দরবন থেকে জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিচ্ছেন। দেশের অন্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই কাজ করছেন বলে আমার জানা নেই।’’ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস, অলোক দাস, মহম্মদ রফিক, লালকমল ভৌমিক, অভিনেতা টাবুন মুন্সি, সম্পূর্ণা লাহিড়ি সহ-বেশ কয়েকজন। ছিলেন বসিরহাটের মহকুমা শাসক শেখর সেন, সাংসদ ইদ্রিশ আলি। খেলা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বসিরহাটের মহকুমা শাসক শেখর সেন। উদ্যোক্তাদের পক্ষে দীপেন্দু বিশ্বাস, পরাগ মৈত্র, সুকমল বসু জানান, গত ১৪ জুন বসিরহাটের ৯টি এবং কলকাতার ৪টি দলকে নিয়ে শতবর্ষের কারমাইকেল শিল্ডের খেলা শুরু হয়েছিল। দীপেন্দুবাবু বলেন, ‘‘বসিরহাটের মানুষ আমাদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাঠে এই রকম দর্শক সমাগম হলে আগামী দিনে বসিরহাট স্টেডিয়ামে কলকাতার বড় দলগুলিকে খেলতে দেখা যাবে।’’
এ দিন বসিরহাট মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে জয়ী ইউনাইটেড স্পোর্টসকে শিল্ডের রেপ্লিকা, সুদৃশ্য ট্রফি এবং ৭৫ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়। রানার্স ভবানীপুর স্পোর্টিংকে সুদৃশ্য ট্রফি এবং ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতার সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন মহুয়া সঙ্ঘের শুকদেব ঘোষ। সেরা ডিফেন্ডার প্রান্তিক দলের বাপস মণ্ডল। সেরা প্রশিক্ষক হয়েছেন ইউনাইটে়ড স্পোটর্সের মধুসূদন ঘোষ। ফেয়ার প্লে ট্রফি পায় বিজেএফসিসি। প্রতিযোগিতার সেরা রেফারি হন উত্তম ভট্টাচার্য়। ফাইনাল দেখতে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়। আয়োজকরা জানান, শতবর্ষপ্রাচীন কারমাইকেল শিল্ডের মাথায় ইংল্যান্ডের রানির মাথার মুকুট রয়েছে। সেই শিল্ড নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে কলকাতার ব্রিটিশ কাউন্সিল। তাই মূল শিল্ডটি না দিয়ে শিল্ডের রেপ্লিকা দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy