আশ্বাস দিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ছবি: নির্মল বসু।
মা মারা গিয়েছেন বহুকাল আগে। বাবারও মৃত্যু হয়েছে। দাদা মিঠুন সংসারের হাল ধরেছিল। বাজ পড়ে আচমকাই সব শেষ। মিঠুনের বোন প্রিয়ঙ্কা এখন পড়েছে অথৈ জলে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় সন্দেশখালির দক্ষিণ আখাড়তলার অর্জুন সর্দারপাড়ার এই কিশোরী। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে। কিন্তু মা-বাবা চলে যাওয়ার পরে যে দাদার ভরসায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি, সেই দাদার মৃত্যুতে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না প্রিয়ঙ্কা। সব দেখেশুনে মেয়েটির পড়ার খরচ রাজ্য সরকার নেবে বলে প্রতিশ্রুতি মিলেছে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের তরফে।
মঙ্গলবার প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ওই এলাকায় এসে দেখা করেছেন মন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন সাংসদ ইদ্রিশ আলি, দোলা সেন প্রমুখ। তাঁদের সামনে কান্নায় ভেঙে প়ড়ে প্রিয়ঙ্কা বলে, ‘‘স্যার আমি পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। মায়ের পরে বাবার মৃত্যুতে স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছিল। দাদা বলেছিল, চিন্তা করতে হবে না বোন। আমি কলকাতায় কাজ করে তোর ইচ্ছে পূরণ করব। কিন্তু এখন তো সব শেষ।’’ কিছুক্ষণের জন্য বাকস্তব্ধ হয়ে পড়েন মন্ত্রীও। তারপরে মেয়েটির মাথায় হাত রেখে বলেন, ‘‘চিন্তা করো না। পঞ্চায়েতকে বলছি, যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের দেখাশোনা করবে তারা। প্রতি পরিবারের একজন করে জেলাপরিষদ নয় তো পঞ্চায়েতে চাকরি দেওয়া হবে। অসুস্থদের কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’’ প্রিয়ঙ্কার পড়ার দায়িত্বও নেবে সরকার, প্রতিশ্রুতি দেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
এ ছাড়াও মৃত পরিবার-পিছু ৪ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। মৃতদের পরিবারের হাতে এ দিন নগদ ২৫ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁরা সন্দেশখালিতে এসেছেন বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবুরা।
গত রবিবার দুপুরে সন্দেশখালির ওই এলাকায় ফুটবল মাঠে বাজ পড়ে মারা গিয়েছে মিঠুন মুন্ডা, শুভজিৎ সর্দার, অমিত সর্দার এবং নারায়ণ সর্দার। আহত হয় কয়েক জন। পরিস্থিতি দেখে মাঠের বেশির ভাগ লোক পালিয়ে গেলেও সুখেন সর্দারের উপস্থিত বুদ্ধিতে প্রাণে বেঁচে যায় চার জন। এ দিন মন্ত্রী সুখেনের প্রশংসা করেন। বলেন, ‘‘তোমার জন্য চার জন জীবন ফিরে পেয়েছে। আমরা ঠিক করেছি, আগামী ১৪ অগস্ট জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তোমাকে পুরস্কৃত করব।’’
এ দিন গ্রামের চার ছেলের মৃত্যুতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল মাঠবাজারে। মন্ত্রী-সাংসদেরাও যান সেখানে। দুর্গতদের পাশে থাকার প্রসঙ্গ তুলে বাম আমলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা করে পূর্বতন জমানার সমালোচনা করেন ইদ্রিশ, দোলারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy