Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাত-পায়ের শিরা, গলার নলি কেটে আত্মঘাতী যুবক

চাকরি না পেয়ে অবসাদে ভুগছিল ছেলেটি। বাবা-মা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ছেলেকে নিয়ে পুরী ঘুরে আসবেন, তাতে যদি ছেলের মন একটু ভাল হয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। হাত-পা-গলার শিরা কাটা অবস্থায় উদ্ধার হল সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (২৫) দেহ। পরিবারটির দাবি, চাকরি না পাওয়ার অবসাদেই আত্মঘাতী হয়েছে সে।

সুমন।

সুমন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

চাকরি না পেয়ে অবসাদে ভুগছিল ছেলেটি। বাবা-মা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ছেলেকে নিয়ে পুরী ঘুরে আসবেন, তাতে যদি ছেলের মন একটু ভাল হয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। হাত-পা-গলার শিরা কাটা অবস্থায় উদ্ধার হল সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (২৫) দেহ। পরিবারটির দাবি, চাকরি না পাওয়ার অবসাদেই আত্মঘাতী হয়েছে সে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদুড়িয়ার রেজিস্ট্রি অফিস মোড়ে বাড়ি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দুই ছেলে শোভন আর সুমন। শোভন কাজ করেন সেনাবাহিনীতে। সোমবারই ফিরেছিলেন। ঠিক ছিল বুধবার আত্মীয়-পরিজন মিলে বেড়াতে যাবেন পুরীতে। সেই মতো গোছগাছ চলছিল।

সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ দোতলার ঘর থেকে নীচে নামেন সুমন। মা ঝর্ণাদেবী ছেলেকে হাত-মুখ ধুয়ে জলখাবার খেতে বলেন। তখনও স্বাভাবিক ছিল ছেলে। মাকে বলে, “আমি একটু আসছি।” বলে ফের উঠে যায় দোতলায় নিজের ঘরে। বড় ছেলে অনেক দিন পরে বাড়ি ফিরেছে, সেই খুশিতে সকাল সকাল বাজারের থলি হাতে বেরিয়ে পড়েন ব্যবসায়ী আশিসবাবু।

বেলা ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে শোনেন, ছেলের ঘরের দরজা বন্ধ। কু-ডাকে বাবার মন। টেনশনে হাত থেকে পড়ে যায় বাজারের থলি। সোমবারই কলকাতায় নিউরোলজির ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুমনকে। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, কেন রোগ নেই ছেলের। চাকরির পেতে মরিয়া ছেলেটি অবসাদে ভুগছে। চিৎকার-চেঁচামেচিতেও সুমন দরজা না খোলায় প্রতিবেশীরা জানলা দিয়ে মুখ বাড়ান। দেখা যায়, খাট-মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ব্লেড দিয়ে হাত-পায়ের শিরা আর গলার নলি কেটে ফেলেছেন সুমন।

সদ্য সন্তানহারা পিতা।

পুলিশ জানায়, দ্রুত দরজা ভেঙে সুমনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে সুমনের। কাঁদতে কাঁদতে মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন ঝর্ণাদেবী। চোখের জল সামলাতে পারছিলেন না আশিমবাবু। তাঁর ভাই মিহির বলেন, “লেখাপড়ায় বড় ভাল ছিল ছেলেটা। ক্রিকেটটাও ভাল খেলত। বসিরহাট কলেজ থেকে বিএসসি করার পরে কম্পিউটার নিয়ে পড়েছে। চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছিল।” বাদুড়িয়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বুবাই মুখোপাধ্যায় বলেন, “মিশুকে স্বভাবের ছেলে ছিল সুমন। একটা চাকরির জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে নিজেকে শেষ করে দেবে, তা কেউ ভাবতে পারেনি।” এ দিন বিকেলে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে সুমনের দেহ ময়না-তদন্তের পরে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ।

মিহিরবাবু বলেন, “ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সুমন বলছিল, আমি সমুদ্র দেখতে যাব না। তলিয়ে যাওয়া মানুষ আরও তলিয়ে যাওয়ার ভয় পায়।’’ সেই ভয় যে এমন পেয়ে বসবে তরতাজা ছেলেটাকে, তা সত্যিই ভাবতে পারেননি কেউ।

ছবি: নির্মল বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE