Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘হেরিটেজ’ ঘোষণা হোক, দাবি শহরবাসীর

পরতে পরতে ইতিহাসের স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠেছে অধুনা গোবরডাঙা শহর। যার ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিচার করে গোবরডাঙাকে ‘হেরিটেজ’ শহর ঘোষণারও দাবি আছে স্থানীয় মানুষের। ‘ভিলেজ অব থিয়েটার’ নামে খ্যাত এই শহরকে যাতে পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দেওয়া যায়, সেই দাবিও বহু দিনের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, চণ্ডীতলার চণ্ডীপীঠ, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের শিবমন্দির ও স্নানের ঘাট, গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় পরিবারের রাজবাড়ি (যা জমিদার বাড়ি হিসাবে পরিচিত), প্রসন্নময়ী কালী ও দ্বাদশ শিব মন্দির, সূর্যঘড়ি, ফেয়ারি হল, শাহজাহানের আতরদান, ফ্রেঞ্চ ক্লক, চাইনিজ মিংভাজ বা ফুলদানি সিংহদ্বার, নহবতখানা, গন্ধর্বপুরে ব্রাহ্মমন্দির, সাহাপুরের মঙ্গলালয়, নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ, গৈপুরের ওলাবিবির দরগা, কুণ্ডুপুকুরের শিবমন্দির, খাঁটুরার জোড়া শিবমন্দির, গড়পাড়া ও রঘুনাথপুরের মসজিদের মতো বহু স্থাপত্য এখনও মাথা উঁচু করে উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

ইংরেজদের তৈরি করা অতিথিশালা ‘ফেয়ারি হল’। ছবি: শান্তনু হালদার।

ইংরেজদের তৈরি করা অতিথিশালা ‘ফেয়ারি হল’। ছবি: শান্তনু হালদার।

সীমান্ত মৈত্র
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

পরতে পরতে ইতিহাসের স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠেছে অধুনা গোবরডাঙা শহর। যার ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিচার করে গোবরডাঙাকে ‘হেরিটেজ’ শহর ঘোষণারও দাবি আছে স্থানীয় মানুষের। ‘ভিলেজ অব থিয়েটার’ নামে খ্যাত এই শহরকে যাতে পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দেওয়া যায়, সেই দাবিও বহু দিনের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, চণ্ডীতলার চণ্ডীপীঠ, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের শিবমন্দির ও স্নানের ঘাট, গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় পরিবারের রাজবাড়ি (যা জমিদার বাড়ি হিসাবে পরিচিত), প্রসন্নময়ী কালী ও দ্বাদশ শিব মন্দির, সূর্যঘড়ি, ফেয়ারি হল, শাহজাহানের আতরদান, ফ্রেঞ্চ ক্লক, চাইনিজ মিংভাজ বা ফুলদানি সিংহদ্বার, নহবতখানা, গন্ধর্বপুরে ব্রাহ্মমন্দির, সাহাপুরের মঙ্গলালয়, নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ, গৈপুরের ওলাবিবির দরগা, কুণ্ডুপুকুরের শিবমন্দির, খাঁটুরার জোড়া শিবমন্দির, গড়পাড়া ও রঘুনাথপুরের মসজিদের মতো বহু স্থাপত্য এখনও মাথা উঁচু করে উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

অতীতে গোবরডাঙা এলাকাটি ছিল কুশদহ বা কুশদ্বীপের অন্তর্গত। কুশদ্বীপের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ছিল যমুনা নদী। একদা স্রোতস্বিনী যমুনা আজ অবশ্য নাব্যতা হারিয়ে মজে যেতে যেতে মৃতপ্রায়। এখানকার ইতিহাস ঘেঁটে ও প্রবীণ মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গোবরডাঙার আদি বাসিন্দাদের বেশিরভাগই এসেছিলেন সপ্তগ্রাম থেকে। প্রায় চারশো বছরেরও পুরনো এই জনপদের ইতিহাস।

১৮৭০ সালে গোবরডাঙা পুরসভা গঠিত হয়। গোবরডাঙা বাজারের কাছে জমিদার সারদাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের জমিতে পুরভবন তৈরি হয়। তখন জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২২০০। ওয়ার্ড ছিল ৪টি। প্রথম চেয়ারম্যান হন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন।

শ্রীশচন্দ্র ছিলেন খাঁটুরার বাসিন্দা। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহযোগী। ১৮৫৬ সালে বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বিধবা বিবাহ আইন সরকারি অনুমোদন লাভ করলে শ্রীশচন্দ্র সামাজিক নিয়ম ও প্রচলিত সংস্কারকে উপেক্ষা করে সে বছরের ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে বর্ধমানের বাল্য বিধবা কালীমতীকে বিয়ে করেন। এমনকী, মা সূর্যমণিদেবীর নিষেধও অগ্রাহ্য করে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রীশচন্দ্র। সেই ছিল প্রথম বিধবা বিবাহ। বিবাহ বাসরে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে রমাপ্রসাদ রায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহের মতো প্রথিতযশা মানুষ। শ্রীশচন্দ্রের বিধবা বিবাহের ঘটনা আজও গোবরডাঙাবাসী স্বগর্বে মনে রেখেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি শ্রীশচন্দ্র বনগাঁর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন।

পুরসভা তৈরির আগে গোবরডাঙা ছিল বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত। এখানকার মানুষের নানা প্রয়োজনে ও সরকারি কাজে বসিরহাটে যাতায়াত করতে হত। সেই যাতায়াত ছিল খুবই কষ্টসাধ্য, খরচও হত প্রচুর। যমুনা ও ইছামতী নদী পেরিয়ে তাদের যেতে হত। বারাসত মহকুমা তৈরি হওয়ার পরে গোবরডাঙা তার সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে।

পুরসভার দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে যমুনা নদী, পূর্ব দিকে কঙ্কনা বাওর ও রত্না খাল, উত্তরে ইছাপুর খাল। কলকাতা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরের এই শহরে অতীতে যমুনা নদীর ধারে ছিল বহু চিনির কল। এখানকার আখের লাল চিনির কদর ছিল গোটা দেশে। তা বাইরে রফতানিও হত। খাঁটুরা উত্তর পাড়ায় ছিল লবণ কারখানা। নীল চাষও হত। এখানকার সরকার পাড়ায় নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ দেখেছেন অনেক প্রবীণ মানুষ। এখানকার বাসিন্দা প্রমথনাথ বসু জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উচ্চপদে চাকরি করেছেন। তিনি ময়ূরভঞ্জ লৌহ খনি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর নামেই তৈরি হয়েছিল গোবরডাঙার টাউন হল।

১৯৪৭ সালে তৈরি হয় গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ। গোবরডাঙা খাঁটুরা হাইস্কুল স্থাপিত হয় ১৮৫৬ সালে। যা দেশের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন হাইস্কুল। গোবরডাঙা হাই ইংলিশ স্কুল ও খাঁটুরা মিডল ইংলিশ স্কুল দু’টি মিলে তৈরি হয়েছিল খাঁটুরা উচ্চ বিদ্যালয়। এলাকার শিক্ষা প্রসারে স্কুলটির অবদান প্রচুর, এমনটাই মত গোবরডাঙাবাসীর।

অধুনা বাংলাদেশের যশোহর জেলার সারসা গ্রাম থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছিলেন খেলারাম মুখোপাধ্যায়। গোবরডাঙায় মুখোপাধ্যায় জমিদার বংশের পত্তন করেন তিনি। গাইঘাটার ইছাপুরে ছিল তাঁর মামার বাড়ি। স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, খেলারাম বাড়ি ছেড়ে মামার বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সেখানেও বেশিদিন ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে তিনি যশোহরের কালেক্টর সাহেবের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর সেরেস্তাদার হিসাবে কাজ শুরু করেন। ওই কালেক্টরের আগ্রহ ও পরামর্শে খেলারাম পরিশোধযোগ্য অর্থে গোবরডাঙা নিলামে কেনেন। এরপরই শুরু হয় গোবরডাঙা জমিদারি। কথিত আছে, দেবী কালীর আর্শীবাদে খেলারামের স্ত্রী দ্রৌপদী একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। দেবী কালীর প্রসন্নে ছেলে হওয়ায় খেলারাম তাঁর ছেলের নাম রাখেন কালীপ্রসন্ন। তারপর থেকে বংশের প্রত্যেক ব্যক্তির নামের সঙ্গে ‘প্রসন্ন’ শব্দটি যুক্ত হয়ে আসছে বলে জানালেন ওই বংশের অষ্টম পুরুষ স্বপনপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খেলারাম স্বপ্নে দেখা দেবী মূর্তির আদলে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে প্রসন্নময়ী কালীমন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন। খেলারাম শুরু করলেও কাজ শেষ হওয়ার আগেই মারা যান। তাঁর পুত্র কালীপ্রসন্ন ১২২৯ বঙ্গাব্দে প্রসন্নময়ী কালীমন্দির ও বারোটি শিবমন্দির স্থাপন করেছিলেন। স্বপনবাবু বলেন, “প্রসন্নময়ী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৩৩ বছর পরে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালীমায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসমণিদেবী একবার এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে প্রসন্নময়ী কালীমন্দিরে এসেছিলেন।”

প্রসন্নময়ী কালীমন্দির তৈরির পর থেকে জমিদারদের প্রচলিত ঐতিহাসিক গোষ্ঠবিহার উত্‌সব ও মেলা চালু হয় যমুনার তীরে। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ থেকে ওই মেলা শুরু হয়। গোষ্ঠবিহার উত্‌সবের জনপ্রিয়তা আজ গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। জমিদার বাড়ি সদস্যেরা ওই মেলার সঙ্গে যুক্ত। অতীতে যমুনা নদীতে বড় বড় নৌকায় করে ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হতেন। মেলায় মশলার হাট বসত, এখনও যা চলছে। ওই উত্‌সবের মাধ্যমেই গোবরডাঙায় নববর্ষের সূচনা হত। এক সময়ে ওই উত্‌সবে একটি খেপা ষাঁড়ের সামনে শূকর ছানা ফেলে হত্যার প্রথা ছিল। তা অবশ্য এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

খেলারামের পত্তন করা জমিদারবাড়ি বা প্রসন্নভবনের অস্তিত্ব আজ আর নেই। তবে জমিদার বাড়িতে গেলে এখনও চোখে পড়বে ইংরেজদের তৈরি করা অতিথিশালা ‘ফেয়ারি হল’। সাহেবরা সেটিকে তৈরি করেছিলেন একতলা হিসাবে। জমিদারদার পরে সেটিকে দোতলা করেন। জমিদার বাড়িতে এখনও কিছু ঐতিহাসিক দুর্লভ জিনিসপত্র সযত্নে রাখা আছে।

জমিদারিতে ‘সেটেলমেন্ট’ প্রথা চালু করেন জমিদার বংশের গিরিজাপ্রসন্ন। তাতে খুশি হয়ে পঞ্চম জর্জ তাঁকে ‘রাজা’ খেতাব দিতে চান। কিন্তু তত দিনে গিরিজাপ্রসন্নের রায়বাহাদুর খেতাব পাওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে তিনি আর ওই সম্মান নিতে চাননি। পরবর্তী সময়ে ওই রাজা সম্মানের পরিবর্তে গিরিজাপ্রসন্ন ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি তরবারি চেয়ে নেন। আসলটির হুবহু আদলে সম পরিমাণ সোনা দিয়ে তৈরি একটি তরবারি তাঁকে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে দেওয়া হয়।

এলাকার প্রবীণ মানুষজন জানালেন, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এখানে এসেছিলেন বলে শোনা যায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নীলদর্পণ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্র, রামতনু লাহিড়ি, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, কাজি নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো বহু মনীষী কোনও না কোনও সময়ে এখানে এসেছিলেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক প্রভাবতীদেবী সরস্বতী, হাসিরাশি দেবী এই শহরের বাসিন্দা। শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক উষাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ও গোবরডাঙার সন্তান। আইএস হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মধু বসু, মুরলীধর বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিশিষ্ট মানুষের তালিকাটি সমৃদ্ধ করেছেন।

সব মিলিয়ে গোবরডাঙার হেরিটেজ শহরের মর্যাদা অনেক আগেই পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন এখানকার মানুষ। অরিন্দম দে নামে এক শিক্ষক ও নাট্যকর্মী বললেন, “সরকার বিভিন্ন শহরকে হেরিটেজ ঘোষণা করছেন। আমাদের শহটিরও ওই তালিকায় পিছিয়ে থাকা উচিত নয়।” নৃত্যশিল্পী বনাণী বসুর কথায়, “শহরটি খুবই প্রচীন। এখানকার ইতিহাস, স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা নিয়ে খুব সহজেই শহরটিতে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।

কয়েক বছর আগে বামেরা পুরসভার ক্ষমতায় থাকাকালীন শহরটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার উদ্যোগ করা হয়েছিল। তত্‌কালীন পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য জেলাশাসক ও হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে দাবি জানিয়েছিলেন। তারপর অবশ্য প্রক্রিয়া খুব বেশি এগোয়নি।

গোবরডাঙার বর্তমান পুরপ্রধান তৃণমূলের সুভাষ দত্ত জানান, সামনেই পুরভোট। তার আগে আর এলাকাটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে ফের ক্ষমতায় এলে তাঁদের পুরবোর্ড গোবরডাঙাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলবেন। শহরটিকে হেরিটেজ ঘোষণার বিষয়েও উদ্যোগ করা হবে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE