Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দিনভর অচেনা মুখের ভিড় দাপিয়ে বেড়ালো বসিরহাটে

মোটরবাইক নিয়ে বহিরাগতদের দাপাদাপি, বোমা-গুলি, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট— শনিবার দিনভর এমন নানা ঘটনার সাক্ষী থাকল বসিরহাট। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন এক ভোটার। খুর চালানো হয়েছে প্রার্থীর পিঠে। আক্রমণের নিশানা হয়েছে পুলিশ। মাথা ফেটেছে প্রিসাইডিং অফিসারের। উত্তর ২৪ পরগনার টাকি, বাদুড়িয়া ও বসিরহাট পুরসভায় ভোট ঘিরে ক’দিন ধরেই বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছিল।

বসিরহাটের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জখম কংগ্রেস প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।

বসিরহাটের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জখম কংগ্রেস প্রার্থী। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু ও সীমান্ত মৈত্র
বসিরহাট ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

মোটরবাইক নিয়ে বহিরাগতদের দাপাদাপি, বোমা-গুলি, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট— শনিবার দিনভর এমন নানা ঘটনার সাক্ষী থাকল বসিরহাট। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন এক ভোটার। খুর চালানো হয়েছে প্রার্থীর পিঠে। আক্রমণের নিশানা হয়েছে পুলিশ। মাথা ফেটেছে প্রিসাইডিং অফিসারের।

উত্তর ২৪ পরগনার টাকি, বাদুড়িয়া ও বসিরহাট পুরসভায় ভোট ঘিরে ক’দিন ধরেই বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছিল। আশঙ্কা মতোই ভোটের দিন এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে অচেনা মুখের দল। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখেও মুখ ফিরিয়ে বসে থেকেছে পুলিশ— উঠছে এমন অভিযোগও।

শুক্রবার গভীর রাত থেকেই শুরু হয়েছিল তাণ্ডব। শনিবার ভোর থেকে ‘অ্যাকশন’ করতে নামে বহিরাগতরা। ভ্যাবলা স্টেশনের কাছে ১৭-১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জনকল্যাণ স্কুলে বুথের বাইরে বোমা-গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএমের লোকজন রুখে দাঁড়ালে তারা পিছু হটে। দুষ্কৃতীদের হামলার প্রতিবাদে ট্রেন অবরোধ করে জনতা। এলাকায় এসে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশও। হরিশপুরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৮০ থেকে ৮৪ বুথগুলিতে বোমা-গুলি ছোড়া শুরু হলে প্রতিরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সুকেশ ঘোষাল দুষ্কৃতীদের হাতে আহত হন। নিউটাউনের এক দুষ্কৃতীকে আটকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় জনতা।

কিন্তু বেলা বাড়তেই বহিরাগতদের হাতে একের পর এক বুথ দখলের খবর আসতে থাকে বসিরহাট-টাকি-বাদুড়িয়ার নানা প্রান্ত থেকে। ভ্যাবলা কালীবাড়ির কাছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে বহিরাগতরা বোমা-গুলি নিয়ে হামলা চালায়। স্‌প্লিন্টার লেগে জখম হন রমেশ চট্টোপাধ্যায় নামে এক ভোটার। দুষ্কৃতীরা গুলি চালাতে চালাতে পালায়। ক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় অবরোধ শুরু করে। অভিযোগ, সে সময়ে সাংবাদিকদের এলাকায় ঢুকতে বাধা দেয় দুষ্কৃতীরা। গাড়ি লক্ষ করে ছুটে আসে গুলি। তাণ্ডবের প্রতিবাদে পথ অবরোধ করেন এলাকার মানুষ। অন্য সরকারি কাজে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন মিনাখাঁ থানার এক এসআই। তিনি জনতার ক্ষোভের সামনে পড়ে যান। লাঠির ঘায়ে মাথা ফাটে তাঁর। ওই এলাকাতেই বারাসত থেকে আসা বহিরাগত এক দুষ্কৃতীকে পিটিয়ে পুলিশে দেন ভোটাররা।

১, ৩, ১৫, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু বুথের বাইরেও দুষ্কৃতীরা গুলি-বোমা ছোড়ে। ভয় দেখিয়ে বেশ কিছু ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয় ভোটারদের। অবাধে শুরু হয় ছাপ্পা। যার প্রতিবাদে কয়েকটি বুথে ভোট বাতিলের দাবি তুলে ইভিএম ভাঙচুর করে জনতা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের নলকোড়ায় বহিরাগতদের গুলি-বোমার তাণ্ডব রুখতে গিয়ে দুই পুলিশকর্মী ইটের ঘায়ে জখম হন। কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। টাকির ২ এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট চলছিল। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসারকেও মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। পরে ভোটারেরা দু’টি ইভিএম মেশিন ভাঙচুর করে।

বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য ও সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহার অভযোগ, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের পুলিশ সাহায্য করেছে। বসিরহাটের ৭টি এবং টাকির ৪টি বুথে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন শমীকবাবুরা। বহু জায়গায় শাসক দল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ কংগ্রেস নেতা অমিত মজুমদারের। বহু বুথে ফের ভোট নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন বিরোধীরা। যদিও তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলির পাল্টা দাবি, বিরোধীরাই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়েছিল বসিরহাটে। সাধারণ মানুষ তাদের রুখে দিয়েছেন। সন্ত্রাসের অভিযোগ মিথ্যা।

বনগাঁয় কোনও ভোটেই সাধারণত বড় সন্ত্রাস দেখা যায় না। কিন্তু এ বার ব্যতিক্রম ঘটল। শুক্রবার রাত থেকেই উত্তেজনা ছিল। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থীর স্বামী তথা তাঁর নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করা হয়। শনিবার ভোটের দিন বিরোধী এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ওয়ার্ডেরই বনগাঁ হাইস্কুলের বুথে। আরও বেশ কিছু বুথে এজেন্টদের বের করে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বহিরাগতরা ছাপ্পা ভোট দিতে গেলে মারপিট বাধে। পুলিশ লাঠি চালিয়ে সকলকে ছত্রভঙ্গ করে। ভোটের নামে এখানে প্রহসন হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE