বাঁ দিকে উপর থেকে, পারমিতা চৌধুরী, রাই বসু, মহুয়া মিত্র, কবিতা রায়, শোভা মুখোপাধ্যায় ও ভারতী দত্ত। ছবি: শান্তনু হালদার।
ওঁরা জানালেন, এলাকায় শান্তি ফিরেছে। পথেঘাটে বেরিয়ে দিনে-রাতে তাঁদের আর আতঙ্কিত হয়ে থাকতে হয় না। চারিদিকে আলো বসেছে। রাস্তাঘাটও ঝকঝকে। বহু দিন তাঁরা এলাকায় গুলি-বোমার আওয়াজ শোনেননি। সকলেরই দাবি, ‘‘গোবরডাঙার এই শান্তি যেন চিরস্থায়ী হয়।’’
তবে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের কিছু প্রত্যাশা আছে। যার মধ্যে অন্যতম, এলাকার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর সংস্কার। দীর্ঘদিন হল একদা স্রোতস্বিনী নদীটি মজে গিয়েছে। স্রোত বলে এখন কিছু নেই। কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে নদী। অতীতে গোবরডাঙার মানুষ ওই নদী দিয়ে জল পথে যাতায়াত করতেন। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সে সব এখন গল্পের মতো মনে হয় আধুনিক প্রজন্মের কাছে। নদী মজে যাওয়ায় মশার উপদ্রবও বেড়েছে।
শ্মশানের পরিকাঠামো এখন অনেকটাই উন্নত। আগে বৃষ্টিতে বর্ষার সময় শ্মশান চত্ত্বর জলমগ্ন হয়ে যেত। এখন আর সে দিন নেই। তবে মহিলারা চাইছেন, বিদ্যুতিক চুল্লি বসুক। এখনও সব বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছয়নি। রয়েছে আর্সেনিক সমস্যা। অনেকেই জল কিনে খান। গৃহবধূরা চাইছেন, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাক পরিস্রুত পানীয় জল।
চালু হোক দূর পাল্লার বাস পরিষেবা। কারণ, এখান থেকে সড়ক পথে বারাসত ও কলকাতার মধ্যে কোনও পরিবহণ ব্যবস্থা নেই। আর এলাকার একমাত্র হাসপাতাল গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে এলাকার মানুষ আর হাসপাতাল বলে ভাবেন না। কোনও আধুনিক চিকিৎসা এখানে পাওয়া যায় না বলে গৃহবধূরা জানালেন।
কথা হচ্ছিল স্থানীয় চ্যাটার্জিপাড়ার বধূ পারমিতা চৌধুরীর সঙ্গে। বললেন, ‘‘পথেঘাটে প্রচুর আলো লাগানো হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ আর নেই।’’ পুর প্রশাসনের কাছে তাঁর দাবি, ‘‘দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে আমার আবেদন, যে শান্তি গোবরডাঙার এখন রয়েছে তা যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়।’’ পারমিতাদেবী জানালেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরসভার গাড়ি ময়লা নিয়ে আসে। সব মিলিয়ে খুশি তিনি।
স্থানীয় বাবুপাড়ার বধূ রাই বসু এমএ ফাইনাল ইয়ারের পড়ুয়া। ভাল আবৃত্তি করেন। জানালেন, গোবরডাঙা শিল্প-সংস্কৃতির শহর। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, আধুনিক টাউন হল। সেটির কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি।’’ তবে আরও কিছু প্রত্যাশা আছে তাঁর। তিনি চান, গোবরডাঙা শহরকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক। যে সূর্য ঘড়ি রয়েছে, তার সংস্কার করা হোক। আর মজে যাওয়া যমুনা নদীর সংস্কারের ব্যবস্থা করা হোক।
গড়পাড়ার বাসিন্দা মহুয়া মিত্র। তিনি গোবরডাঙা হিন্দু কলেজে শিক্ষকতা করেন। বললেন, ‘‘পুর পরিষেবায় আমরা সন্তুষ্ট। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করে বলে যানজট তেমন হয় না ইদানীং। তবে তাঁর কথায়, ‘‘আমি চাই, গোবরডাঙায় যে শ্মশানটি রয়েছে সেখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হোক।’’
গড়পাড়ার গৃহবধূ আইসিডিএস কর্মী কবিতা রায় জানালেন, অতীতে রাস্তায় নোংরা আবর্জনা পড়ে থাকত। এখন তা দেখা যায় না। রাতে ট্রেন থেকে নেমে নিরাপদে বাড়ি ফেরা যায়। তবে এখান থেকে কলকাতা বা বারাসতে যাওয়ার কোনও বাস নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ট্রেনের উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই এখান থেকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হোক। আর এলাকায় যে হাসপাতালটি রয়েছে, সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না। সেখানকার পরিষেবা উন্নত করা হোক।’’
মনসাতলা এলাকার গৃহবধূ শোভা মুখোপাধ্যায় জানালেন, এলাকায় শেষ বোমা-গুলির শব্দ শুনেছেন তা-ও প্রায় ন’বছর আগে। পুর এলাকার নাগরিক হিসাবে তাতে বেশ স্বস্তিতে তিনি। তবে কঙ্কনা বাওরে যে পার্ক রয়েছে, সেখানে যদি বোটিং ও রোপওয়ের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে ভাল হয় বলে জানালেন তিনি।
বাবুপাড়ার বধূ সোমা মল্লিকের ক্ষোভ, রাতে হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক না থাকায়। তিনি চান, হাসপাতালে যেন সর্ব ক্ষণের চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy