বিচারকের বদলির দাবি তুলে ফের এজলাস বয়কট শুরু করলেন আইনজীবীরা। ডায়মন্ড হারবারের অতিরিক্ত জেলা বিচারক অঞ্জলি সিংহের এজলাস বৃহস্পতিবার থেকে ওই বয়কট শুরু করেছে দেওয়ানি আইনজীবীদের সংগঠন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রের খবর, এই ঘটনার উপরে নজর রাখা হচ্ছে। বিষয়টি দেখছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা জজ। তিনি হাইকোর্ট রেজিস্ট্রারকে রিপোর্ট দিতে পারেন।
কেন এই বয়কট? আইনজীবীদের ওই সংগঠনের অভিযোগ, অঞ্জলিদেবী আইনজীবীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং অসহযোগিতা করছেন। প্রসঙ্গত, হুগলির শ্রীরামপুরে দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার বিরুদ্ধেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৫০ দিনেরও বেশি এজলাস বয়কট করেছিলেন আইনজীবীরা। এর পিছনে কিছু ‘প্রভাবশালী’ আইনজীবীর ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়। জেলা বিচারক এমনকী হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের বয়কট তোলার আর্জিও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুল্লা চেল্লুরের নির্দেশে দুই বিচারপতি গিয়ে আইনজীবীদের কাজে ফিরতে রাজি করান। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও এজলাস বয়কটের ঘটনা নতুন নয়। গত সাত মাস ধরে ডায়মন্ড হারবারের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দেওয়ানি বিচারক (জুনিয়র ডিভিশন) সোনালি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করছে দেওয়ানি আইনজীবীদের ওই সংগঠনটি। ওই বিচারকের বিরুদ্ধেও তাঁদের নানা অভিযোগ আছে। এ বার তালিকায় যুক্ত হল অঞ্জলি সিংহের এজলাসও।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এক শ্রেণির আইনজীবীর এই বিশৃঙ্খল কাজ কোনও ভাবেই কাম্য নয়। আদালত বয়কট করা অত্যন্ত অন্যায় হচ্ছে।” কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দান ফৌজদারি অপরাধের সামিল। এর শাস্তি জেল। আইনজীবীরা আদালতে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না।”
তবে ডায়মন্ড হারবারের দেওয়ানি আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ দিন এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, অঞ্জলি সিংহের এজলাসে বারবার এসেও বিচারপ্রার্থীদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত। সংগঠনের সভাপতি স্বপনকুমার চক্রবর্তীর অভিযোগ, “শুনানির দিন পড়লেও বেশির ভাগ দিনই মামলা শোনেন না বিচারক। সাত-দশ দিন অন্তর একবার যেটুকু বা শোনেন, সেগুলির ক্ষেত্রে একেবারেই সময় দিতে চান না।” তাঁর আরও অভিযোগ, ওই বিচারক প্রবীণ আইনজীবীদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ বসুর কথায়, “এক জন বিচারপ্রার্থীর ৮-১০টি তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু একটিও শুনানি হয়নি, এ রকম নজিরও রয়েছে। এ সবের সুরাহা হলে সাধারণ মানুষ এমনিতেই বিচার পাবেন।” স্বপনবাবুর হুমকি, “যত দিন পর্যন্ত ওই বিচারক বদলি না হচ্ছেন, ততদিন বয়কট চালিয়ে যাওয়া হবে।” সংগঠনের নেতাদের দাবি, এই সিদ্ধান্তের কথা লিখিত ভাবে জেলা বিচারক ও রাজ্য বার কাউন্সিলের কাছেও জানানো হয়েছে।
বয়কট শুরুর আগে বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কথা তাঁকে, বা জেলা জজকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন আইনজীবীরা? সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, বিচারক ও জেলা জজের সঙ্গে মৌখিক আলোচনা হলেও লিখিত আকারে কিছু জমা দেওয়া হয়নি। বিচারক অঞ্জলি সিংহের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি অনুমতি দেননি। তবে আদালত কর্মীদের একটি সূত্রের বক্তব্য, মামলার চাপ সামলাতে যত কর্মী দরকার, তা নেই। সে বিষয়ে হাইকোর্টকে বলাও হয়েছে।
এ দিন আদালত চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, দেওয়ানি আইনজীবীদের সংগঠনের দফতরে অনেকটা ছুটির পরিবেশ। অনেকেই চোখ রেখেছেন ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের দিকে। দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। জমি-সংক্রান্ত বিবাদে বিচারের আর্জি নিয়ে মগরাহাট থেকে এসেছিলেন নারায়ণ হালদার। তাঁর কথায়, “অনেক দূর থেকে বিচারের আশায় এখানে আসেন আমার মতো মানুষেরা। পুরো দিনটা বেরিয়ে যায়।” ডায়মন্ড হারবার ফৌজদারি বার অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য এই বয়কট সমর্থন করছে না। সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা মামলা না লড়ার এই নীতি সমর্থন করি না। তাই আমরা কাজ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy