Advertisement
১১ মে ২০২৪

ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় মহেন্দ্র

সংসারে চরম অনটন। তারই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে ছেলেটি। মাধ্যমিকে এ বার ৫৫৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ক্যানিংয়ের রায়বাঘিনি হাইস্কুলের ছাত্র মহেন্দ্র মণ্ডল। স্কুলের মধ্যে প্রথম সে। ক্যানিং ১ ব্লকের দিঘিরপাড় পঞ্চায়েতের দক্ষিণ করাকাটি গ্রামে বিচুলির ছাউনি দেওয়া এক চিলতে মাটির বাড়ি। ঘরে বাবা, মা ও দাদার সঙ্গে সেখানেই থাকে মহেন্দ্র। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা শৈলেন মণ্ডল ক্যানিং লোকাল ট্রেনে লজেন্স বিক্রি করেন।

বাবার সঙ্গে মহেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।

বাবার সঙ্গে মহেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

সংসারে চরম অনটন। তারই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে ছেলেটি। মাধ্যমিকে এ বার ৫৫৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ক্যানিংয়ের রায়বাঘিনি হাইস্কুলের ছাত্র মহেন্দ্র মণ্ডল। স্কুলের মধ্যে প্রথম সে।
ক্যানিং ১ ব্লকের দিঘিরপাড় পঞ্চায়েতের দক্ষিণ করাকাটি গ্রামে বিচুলির ছাউনি দেওয়া এক চিলতে মাটির বাড়ি। ঘরে বাবা, মা ও দাদার সঙ্গে সেখানেই থাকে মহেন্দ্র। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা শৈলেন মণ্ডল ক্যানিং লোকাল ট্রেনে লজেন্স বিক্রি করেন। মা বিজলিদেবী কয়েক বছর ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছেন। মহেন্দ্রর দাদা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দিনমজুরের কাজ করেন। অভাবের সংসারে সাহায্যের জন্য মহেন্দ্রও পড়াশোনার ফাঁকে লোকের বাড়িতে গিয়ে বিদ্যুতের লাইনের কাজ করে। এ ভাবেই নিজের হাত খরচ ও পড়াশোনার কিছুটা খরচ চালাত সে। এখন বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় মহেন্দ্র। তার চোখে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই মণ্ডল পরিবারের। সে কারণে ভাল রেজাল্ট করেও শান্তিতে নেই মহেন্দ্র। ছেলের স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন মণ্ডল দম্পতিও।

ছোট থেকে কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না তার। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা রূপনারায়ণ তাকে বিনা পয়সায় পড়া দেখিয়ে দিতেন। পরীক্ষার আগে অবশ্য দু’জন গৃহশিক্ষক সামান্য টাকায় ছেলেটিকে পড়িয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকেরাই ছিলেন তার একমাত্র ভরসা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস বাগচি বলেন, ‘‘ও আমাদের স্কুলের গর্ব। বিনা পয়সায় বিজ্ঞান বিভাগে ওকে ভর্তি নেওয়া হবে। ওর বইখাতার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করব।’’

বিভূতিভুষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের চরিত্রের ভক্ত মহেন্দ্র চায় এখন থেকেই জয়েন্ট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। শৈলেনবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। মেয়েকেও পড়িয়েছি। কিন্তু তারপরে টাকার অভাবে মেয়ের পড়া বন্ধ করে দিই। ছেলে চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে। কিন্তু কী ভাবে ওর স্বপ্ন পূরণ করব, তা আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE