Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়া আনতে বাড়িতে হাজির

রোজই নিয়ম করে ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল-সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। উদ্দেশ্যে, দূরের অন্য নামী স্কুলে না পাঠিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যেন বাড়ির কাছের স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেন।

জানা-বোঝা: অভিভাবকের বাড়ি গিয়ে কথা বলছেন শিক্ষকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

জানা-বোঝা: অভিভাবকের বাড়ি গিয়ে কথা বলছেন শিক্ষকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৭
Share: Save:

শীতের দুপুরে হঠাৎ বাড়ি বয়ে হাজির কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাড়ির মালিক কার্তিক সূত্রধর চিরুনি শ্রমিক। আমতা আমতা করে জানতে চাইলেন, কোনও অপরাধ আছে স্যার? উত্তর মিলল, নানা, তেমন কোনও ব্যাপার নয়। তবে ছেলেকে যেন তাঁদের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করেন। স্কুলের পঠনপাঠন ও সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে কার্তিকবাবুর ‘ক্লাস’ নেওয়া হল। মাস্টারমশাই-দিদিমনিদের কথাবার্তা শুনে দরিদ্র পরিবারের গৃহকর্তা অবাক। ছেলে কৌশিককে ভর্তি করে দিয়েছেন বনগাঁ শহরের জয়পুর এলাকায় অসিতবিশ্বাস শিক্ষা নিকেতনে।

রোজই নিয়ম করে ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল-সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। উদ্দেশ্যে, দূরের অন্য নামী স্কুলে না পাঠিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যেন বাড়ির কাছের স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেন।

তবে সব বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ভাল নয়। এক শিক্ষক বললেন, ‘‘এমন কথাও শুনতে হয়েছে আমরা নাকি স্কুলের হয়ে দালালি করতে এসেছি।’’ তবে বেশির ভাগ পরিবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা শুনছেন। বুঝছেনও। অভিভাবকদের বোঝানোর সঙ্গে পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুল সম্পর্কে আগ্রহ তৈরির জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা সঙ্গে করে লজেন্স-বিস্কুট নিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টা কাজে আসছে বলে জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে এখন ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। ৩০ জন পড়ুয়া ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে মনে করছে স্কুল। পঞ্চম শ্রেণির পাশাপাশি নবম শ্রেণিতেও ছেলেমেয়েদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রেও বাড়িতে গিয়ে বোঝানোর কাজ চলছে। তবে কেউ কেউ সব বুঝেও অন্যত্র ভর্তি করছেন ছেলেমেয়েদের। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এক দিনে হবে না। তবে ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই সকলে বুঝতে পারবেন, এখানেও ভাল পড়াশোনা হচ্ছে।

কিন্তু কেন এমন পদক্ষেপ?

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জয়িতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিভাবকদের বোঝানোর কারণ, তাঁদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া, সাধারণ মানুষের মধ্যে শহরের বড় বড় স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করার প্রবণতা রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়, স্কুলে পঠনপাঠন কেমন। তাই বাড়িতে গিয়ে বোঝাতে হচ্ছে। একবার স্কুলে ভর্তি হলে অভিভাবকেরা বুঝতে পারছেন, এখানেও পঠনপাঠনের মান এতটা ভাল।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলটি পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। পড়ুয়ারা বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গেলে সাধারণত অন্য স্কুলে কিছু ফি দিতে হয়। পড়ুয়া বাড়াতে ও এলাকায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে অসিত বিশ্বাস শিক্ষা নিকেতনের কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে ভর্তি করছেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানালেন, প্রজেক্টরের মাধ্যমে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভূগোল ও বিজ্ঞান বিভাগ সেই শিক্ষা ছেলেমেদের মধ্যে আগ্রহ তৈরিতে সাহায্য করছে। ১০টি কম্পিউটার কেনা হয়েছে। এত দিন স্কুলের পাঠাগার থাকলেও তা পড়ুয়াদের তেমন আগ্রহের বিষয় ছিল না। প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, পাঠাগারটি নতুন করে সাজা হচ্ছে। পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহ তৈরির চেষ্টা চলছে। স্কুল চত্বরে ফুল ও সব্জি চাষ হচ্ছে। ওই ফসল দিয়ে স্কুলের মিড ডে মিল রান্না হবে বলেও জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE