উদ্ধার: এই বিএমডব্লু চেপেই টাকা ছিনতাই করতে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। নিজস্ব চিত্র
এক লপ্তে কয়েক লক্ষ টাকা যে হাতে আসতে চলেছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল দুষ্কৃতীরা। নিজেদের মধ্যে শলা পরামর্শ করে ঠিক করে, ‘ভাল গাড়ি’ নিয়ে যাবে ‘অ্যাকশনে।’ সেই মতো ৮ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে বিএমডব্লু।
হিসেবটা খুব ভুলও কষেনি। কারণ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসিরহাটের ভবানীপুরের দিনান্তিকায় গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর ভাস্কর চত্রবর্তীর কাছ থেকে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে আনতে পেরেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বসিরহাট থানার পুলিশের তৎপরতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরা পড়ে যায় ৪ দুষ্কৃতী। দু’জন পলাতক। তবে উদ্ধার হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। আটক হয়েছে গাড়িটি। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক সকলকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভাস্করবাবুর উপরে রাগ ছিল বসিরহাটের কলেজপাড়ার চাঁপাপুকুর রোডের বাসিন্দা শুভঙ্কর দাসের। এক সময়ে সে ভাস্করবাবুর কাছে কাজ করত। নানা কারণে চাকরি যায়। সেই থেকে রাগ শুভঙ্করের।
আরও পড়ুন: অযোধ্যা নিয়ে সাড়া পাচ্ছেন না রবিশঙ্কর
বাঁশবেড়িয়ায় শ্বশুরবাড়ি ওই যুবকের। সেখানে যাতায়াতের সূত্রে আলাপ হয় কয়েকজন দুষ্কৃতীর সঙ্গে। ছিনতাইয়ের ছক কষা হয়। যে কোনও উপায়ে ভাস্করবাবুর ক্ষতি করতে মরিয়া ছিল শুভঙ্কর— পুলিশের দাবি, জেরায় সে কথা স্বীকার করেছে ছেলেটি।
দলবল জুটিয়ে হুগলির শ্রীরামপুর থেকে গাড়িটি নেয় তারা। ভাস্করবাবু কোথায় টাকা পয়সা রাখেন, কখন সে সব নিয়ে বাড়ি ফেরেন, আগে কাজ করার সূত্রে সে সব তথ্য আগে থেকেই কিছুটা ছিল শুভঙ্করের কাছে। তারপরেও ‘অপারেশন’ চালানোর আগে বার কয়েক এলাকায় ঘুরে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজেও আসে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাস্করবাবুর এক কর্মীকে মারধর করে, ওই ব্যবসায়ীর কপালে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ লুঠ করে পালায় শুভঙ্করেরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য মিনাখাঁর মালঞ্চ সেতুর উপর থেকে বসিরহাট থানার পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। গাড়ির চালক লোকেশ শর্মার বাড়ি শ্রীরামপুরে। ধৃত মৃণাল ঘোষ ও মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে সাহেব বাঁশবেড়িয়ার বাসিন্দা।
কী ভাবে এত দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারল পুলিশ?
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরেই ভাস্করবাবু বসিরহাট থানার আইসি বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোবাইলে সব জানান। বিশ্বজিৎবাবু আবার সে সময়ে কলকাতায় কাজ সেরে বাসন্তী রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন। গাড়িতে ছিলেন তিনি ও তাঁর চালক।
বিএমডব্লু করে এসেছিল ছিনতাইকারীরা, এই তথ্য শুনে বিশ্বজিৎবাবু রাস্তায় উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির উপরে নজর রাখতে শুরু করেন। গাড়ির নম্বরও তাঁকে জানিয়েছিলেন ভাস্করবাবু। মিনাখাঁ থানার মালঞ্চ সেতুর উপরে উঠতেই আইসি লক্ষ্য করেন, উল্টো দিক থেকে একটি বিএমডব্লু আসছে। গাড়ির গতি খুব বেশি ছিল না। চোখে পড়ে, চালক সহ-৬ জন যুবক আছে গাড়িতে। সন্দেহ হওয়ায় আইসি গাড়ি ঘুরিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে বিএমডব্লুর পথ আটকান।
উর্দি পরা অফিসারকে দেখেই দু’জন ওই গাড়িটি থেকে নেমে দৌড় লাগায়। গাড়িতে বসা একজন রিভলভার বের করে গুলি চালানোর চেষ্টা করেন। বিশ্বজিৎবাবু তার হাত চেপে ধরেন। ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করলে আশেপাশে লোক জড়ো হয়ে যায়। ধরা পড়ে চারজন। গাড়িতেই মেলে টাকার ব্যাগ। ততক্ষণে মিনাখাঁ থানার পুলিশও পৌঁছে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy