ব্যালট-বক্স: পুকুর থেকে তুলে আনছে শিশুরা। আমডাঙায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ভোর থেকেই শুরু হয়েছিল বোমাবাজি। তাতেই মোটামুটি এলাকা ফাঁকা। বুথমুখো হননি অনেকেই। বহু জায়গায় ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যেখানে সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে উঠতে দেখা গিয়েছে, সেখানেই শাসক দলের সঙ্গে মারপিট বেধেছে বিরোধীদের। প্রহৃত হয়েছেন সাংবাদিকেরাও। আহতদের গ্রাম থেকে হাসপাতালে পাঠাতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে।
আমডাঙা, দেগঙ্গা, দত্তপুকুরে এই ছিল মোটের উপরে ভোটচিত্র।
দেগঙ্গা ২ পঞ্চায়েতের ঘোষালের আবাদ গ্রামে কানাই পারুই বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল। নির্দলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন ভোটে। অভিযোগ, সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁকে মারধর করে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন। নির্দল প্রার্থীর সমর্থকেরা তাতে বাধা দেন। দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বোমা-গুলির লড়াই চলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের আশেপাশে। ততক্ষণে সাধারণ ভোটারেরা লাইন ছেড়ে পালিয়েছেন। গুলিতে জখম হন দুখে পাড়ুই, কংস পারুই। মনু পারুইকে কোপায় হামলাকারীরা। হামলার অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল এলাকায়। অভিযোগ, তাদের ঢুকে বাধা দেওয়া হয়। গ্রামে ঢুকতে পারেনি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। এমনকী, হামলাকারীদের জমায়েতের মধ্যে দিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা পায় পুলিশ। বাধ্য হয়ে বিদ্যাধরী নদী পেরিয়ে হাড়োয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় জখমদের।
দেগঙ্গার আমুলিয়া পঞ্চায়েতের বোড়ামারি গ্রামে বোমাবাজির জেরে সকালের দিকে বিশেষ কেউ ভোট দিতেই বেরোননি।
সকাল ১০টা নাগাদ আমডাঙার রামপুরে গিয়ে দেখা গেল, একের পর এক বুথ সুনসান। কোথাও ভোটারদের লাইন নেই। আলোকমালা স্কুলের বুথ আবার লন্ডভন্ড অবস্থায় ছিল। বুথের বাইরে ব্যালট বাক্স পড়ে থাকতে দেখা গেল। পুকুরে ভাসছিল ব্যালট। নির্দল প্রার্থীর সমর্থক সুকুর আলি বিশ্বাস, আলমগিররা কেউ বোমার স্প্লিন্টার লেগে, কেউ ছুরির ঘা খেয়ে জখম। অভিযোগ, তৃণমূল ছাপ্পা দিতে এলে বাধা দিয়েছিলেন কিছু গ্রামবাসী। সে সময়ে আক্রমণ করা হয় তাঁদের উপরে। ৭-৮ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
বেড়িবেড়ির গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়ছেন পাপিয়া ঘোষ। তাঁর এজেন্ট সুকুমার ঘোষকে মেরেধরে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
হাদিপুর ঝিকরা ২ পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি ভোটে লড়তে হচ্ছে ঘাসফুল প্রতীককে। প্রার্থী জহুরা বিবির স্বামী মিন্টু মণ্ডল বলেন, ‘‘ভোট চলাকালীন সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে। এজেন্টকে মারধর করে।’’ এক অন্তঃসত্ত্বাকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলছে নির্দল।
এই ঘটনার পরে কয়েকশো লোক হাড়োয়া স্টেশনের কাছে রেল অবরোধে বসে পড়ে। প্রায় দেড় হাসনাবাদ-শিয়াসদহ শাখার ট্রেন বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন, স্টেশন ম্যানেজার গৌতম বিশ্বাস। ওই সব বুথে পুনরায় ভোট গ্রহণের আশ্বাস দেয় পুলিশ। এরপরেই অবরোধ ওঠে।
দেগঙ্গার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী মইদুল ইসলামের মারধরে মাথা ফেটেছে।
চাকলা পঞ্চায়েতে সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন প্রধান কোহিনুর রহমান। তাঁর বুথেও ভয় দেখিয়ে ছাপ্পা ভোট শুরু চলছিল বলে অভিযোগ। রুখে দাঁড়ান কোহিনুর। তাঁকে ব্যালট বাক্স দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বামেদের। যদিও কোনও অভিযোগই মানতে চায়নি তৃণমূল। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যেখানে গোলমালের খবর এলেছে, সেখানেই আমরা পৌঁছে গিয়েছি।’’
আমডাঙায় বাম সমর্থক খুনের প্রতিবাদে বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে অবরোধ করে বামেরা। সোমবার বিকেলে অবরোধ আধ ঘণ্টা চলে। হাসনাবাদ-শিয়ালদহ শাখায় ভাসলিয়া স্টেশনে বিরোধীদের ট্রেন অবরোধ হয়।
আমডাঙার বহিসগাছিতে বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ গেলে ইট ছোড়া হয়। বড়গাছিয়া, বোদাইতে বোমাবাজি হয়েছে। বামুনগাছি চৌমাথায় তৃণমূলের কাউন্সিলররা ভোট পরিচালনা করছিলেন। তখন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা এসে তাঁদের বেধড়ক মারে বলে অভিযোগ। এক কাউন্সিলর-সহ তিন তৃণমূলের নেতা চিকিৎসাধীন। মারধরের অভিযোগ অবশ্য মানেনি বিজেপি।
বামনগাছিতে সকাল থেকেই শুরু হয় বিক্ষিপ্ত অশান্তি। কিছু জায়গায় ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে। নির্দল প্রাথী এবং তাঁদের এজেন্টকে মেরে বুথ থেকে বার করে দেওয়ার অভিয়োগ উঠেছে। দত্তপুকুরে ইসুবাটি, তেঁতুলতলা, দেবীপুর চন্দ্রপুর, কাশিমপুরে সকাল থেকেই শুরু হয় বোমাবাজি। নির্দল প্রাথীকে মেরে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সকাল থেকে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল ভোটগ্রহণ। কদম্বগাছিতে বিজেপি প্রাথীকে মেরে বার করে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মারধরের অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।
দত্তপুকুরে ব্যালট ছিনতাই এবং ব্যালট পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy