তখনও থামেনি উত্তেজনা। ছবি: নির্মল বসু।
বিরোধী শিবির যখন আন্দোলনের দিশা খুঁজতে হালে পানি পাচ্ছে না, তখন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরাই মারপিট বাধিয়ে হাওয়া গরম করে চলেছেন। কখনও কলেজে মনোনয়ন ঘিরে মারপিট বাধাচ্ছে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের দু’পক্ষ। কখনও দলের মেজো-সেজো নেতানেত্রীরাও আস্তিন গুটিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন একে অন্যের দিকে। আখেরে, মুখ পুড়ছে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।
সোমবার বসিরহাটে তো রীতিমতো ধুন্ধুমার বাধিয়েছেন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকেরা। মার খেয়েছেন কয়েকজন কাউন্সিলরও। দলের এক ছাত্রনেতাকে ভর্তি করা হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। ভাঙচুর হয়েছে গাড়ি। ছেঁড়া হয়েছে ঘাসফুল ছাপ পতাকাও।
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকালে। বসিরহাটের রবীন্দ্রভবনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্মশালার আয়োজন চলছিল। সেখানে ছিলেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, পুরপ্রধান তপন সরকার-সহ অনেকে।
অন্য দিকে, সকাল থেকে রবীন্দ্রভবনের কাছে পুলিশ ফাঁড়ি-লাগোয়া ক্লাবের মাঠে জমায়েত শুরু হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। তাদের দাবি, এ দিনই রবীন্দ্রভবনে সাংগঠনিক সভার অনুমোদন দিয়েছিল পুরসভা। পরে তা বাতিল হলেও কাউকে জানানো হয়নি। পুরপ্রধানের দাবি, একজন কাউন্সিলর নিজের প্রয়োজনে এ দিনের জন্য হল বুক করেছিলেন। সরকারি অনুষ্ঠান থাকায় তাঁকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সোমবার হল দেওয়া সম্ভব নয়।
দু’পক্ষকে নিয়ে আগে আলোচনা হয়নি। ফলে উত্তেজনা ছিলই। গোলমালের আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
তাও এড়ানো যায়নি গোলমাল। বেলা ১১টা নাগাদ মাঠে, রবীন্দ্রভবনের সামনে মারপিট বাধে দু’পক্ষের ছেলেদের। প্রহৃত হন তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের মহকুমা সভাপতি শমীক রায় অধিকারী, কাউন্সিলর অসিত মজুমদার, অদিতি মিত্র-সহ অনেকে। ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয় কয়েকজন মহিলাকে। বাদল মিত্র নামে তৃণমূলের যুব ও ছাত্রনেতা বাদল মিত্রের মাথা ফাটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতাল থেকে পরে পাঠানো হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। প্রহৃত হন এক তৃণমূল নেতার স্ত্রীও।
ঘটনা চলাকালীন বসিরহাটে আসেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পারমিতা সেন। প্রথমে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রবীন্দ্রভবনে আমাদের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। তা না করতে দিয়ে পুলিশের সামনে দলেরই কয়েকজন আমাদের ছেলেদের মারধর করল। আর পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দিল।’’ পরে অবশ্য এসডিপিওর দফতরে দীপেন্দুবাবুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে তিনি বলেন, ‘‘দলের মধ্যে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেনি। আমরা বিধায়কের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। সে সময়ে একদল গরুপাচারকারী হামলা চালায়। এই ঘটনায় দলের চারজন গুরুতর জখম হয়েছেন। মহিলারা আক্রান্ত হয়েছে।’’ তিনি জানান, এফআইআর করার পাশাপাশি বিষয়টি বিধায়ককেও বলা হয়েছে। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকেও জানানো হবে।
দীপেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘দলের নিয়ম, সরকারি অনুষ্ঠান হলে সেখানে অন্য কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না। এ বিষয়ে বিধায়ককে সব জানাতে হয়। আমরা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আগে থেকে জানিয়ে অনুষ্ঠান করছি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করলে হয় তো এমনটা হতো না।’’ তিনি বলেন, ‘‘একদল জোর করে এখানে অনুষ্ঠান করতে চাইছিল বলে গণ্ডগোল হয়েছে বলে শুনেছি। তবে হলের ভিতর অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় বাইরে ঠিক কী ঘটেছে বলতে পারব না।’’
গরু পাচারকারীদের তাণ্ডবের তত্ত্ব মানতে নারাজ দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বড় অংশই। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশের সামনে শহরে ঢুকে গরু পাচারকারীরা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে গেল, এতটাই কী খারাপ অবস্থা হয়েছে শাসক দলের!’’ দলের ওই অংশটির মতে, সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে এক নেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই বসিরহাটের তৃণমূলের কোন্দল বেড়েছে। যার পরিণতিতে এ দিনের মারপিট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy