Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাগরে ভাঙা মেলায় নানা ঝুঁকি

সিলিন্ডার থেকে হোগলার ছাউনিতে আগুন ধরার ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নেয়নি কেউই।

অসচেতন: আগুনের পাশেই রাখা গ্যাসের সিলিন্ডার। —নিজস্ব চিত্র।

অসচেতন: আগুনের পাশেই রাখা গ্যাসের সিলিন্ডার। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
সাগর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় তিনটি বাস দুর্ঘটনায় কম করে ৫০ জন আহত হয়েছিলেন। সিলিন্ডার থেকে হোগলার ছাউনিতে আগুন ধরার ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নেয়নি কেউই।

ভাঙা মেলায় গিয়ে তেমনই পরিস্থিতি নজরে এসেছে। দেখা গিয়েছে, কয়লার উনু‌নের আগুনের পাশে ব্যবহার করা হচ্ছে বেআইনি গ্যাস সিলিন্ডার। বাসের ভেতরে খালি থাকলেও মাথার উপরে ঝুঁকি নিয়ে চাপানো হচ্ছে যাত্রী। তার মধ্যে মোবাইল বাথরুম তুলে নেওয়ায় উন্মুক্ত শৌচের মুক্তাঞ্চল হয়ে গিয়েছে কপিলমুনির পবিত্রভূমি।

ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু ভাঙা মেলা চলছে। রোজই প্রায় ৭০ হাজার মতো মানুষ আসছেন। তাদের বেশিরভাগই এ রাজ্যের। সোমবার পর্যন্ত ভিড় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু মেলায় আসা যাত্রীদের নিরাপত্তা একেবারে শিকেয়।

পথেই নজরে এল বাস এবং ছোট গাড়ির মাথায় লোকজন নিয়ে চলাচল হচ্ছে। অথচ ভেতরে বাস খালি। স্কুলছাত্রেরাও উঠছে বাসের মাথায়। পথে কোথাও পুলিশের চেকিং নেই। কচুবেড়িয়া-গঙ্গাসাগর বাস ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের দাবি, স্থানীয় মানুষের বাসের মাথায় চাপার একটা প্রবণতা রয়েছে। বারণ শোনে না কেউ।

মেলা চত্বরেও ঝুঁকিপূর্ণ ছবি সামনে এল। এখনও সব হোগলা পাতার ঘর ভাঙার কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু তার পাশে বিপদ ঘনিয়ে তুলছে কিছু চা এবং খাবারের দোকান। ১ নম্বর ব্রিজ থেকে শুরু করে কপিল মুনির আশ্রমের সোজাসুজি সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত এ রকম বেশ কয়েকটি খাবারের দোকানে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বেআইনি গ্যাস সিলিন্ডার। এ রকম একটি সিলিন্ডার থেকেই মেলা ভাঙার আগের দিন হোগলা পাতার ছাউনিতে আগুন লেগে ৫০০ তীর্থযাত্রীর প্রাণসংশয় হতে বসেছিল।

বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বদলে ডোমেস্টিক সিলিন্ডার নিয়ে কয়লা বা খড়ির উনুনের একদম পাশেই রাখা রয়েছে কয়েকটি দোকানে। চেমাগুড়ি থেকে মেলায় এসেছেন চা দোকানি বিশ্বজিৎ গিরি। কেন বাণিজ্যিক সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন না? আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘এমন করতে হয়, তাই জানি না।’’ বুঝিয়ে দিতে দোকানের পিছন থেকে সেটি টেনে আনা হল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশকে সকলেই নীল রঙের বাণিজ্যিক সিলিন্ডার দেখিয়ে দোকান দিয়েছিল। তারপরে আর নজরদারি হয়নি বলে সেগুলি মজুত রেখে রান্নাঘরের (ডোমেস্টিক) সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে। কয়েকটি দোকানে নীল সিলিন্ডারও রয়েছে।

মেলার শেষ প্রান্তে সমুদ্র সৈকতে মোবাইল বাথরুম তুলে নেওয়া হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের ফেলে যাওয়া হোগলা পাতার ঘরেই বাথরুম সারছেন একাধিক তীর্থযাত্রী। চার দিকে ছড়িয়ে আবর্জনা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিন সাফাই অভিযান চলবে মেলায়। তবে আগামী মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত রোজই প্রায় ৪০-৫০ হাজার মানুষ আসবেন। তাঁদের জন্য অন্তত কিছু শৌচালয় এবং রাতে আলোর ব্যবস্থা রাখার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।

এ দিকে, সাগর মেলায় দানধ্যানের অন্ত নেই। পুণ্যার্থীদের জন্য বহু শিবির খোলা হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, দরিদ্র পুণ্যার্থীদের কম্বল বিতরণ ও পাত পেড়ে খিচুড়ি খাইয়েছেন মহেশতলা থানার সাব ইন্সপেক্টর মানিক সমাজদার। চাল–ডাল আর শ’ দুয়েক কম্বলের ব্যবস্থা করেছিলেন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এবং নিজের বেতনের টাকা জমিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhanga Mela Sagar Island Danger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE