রাহুল সর্দার
একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল বারুইপুর এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্মার্টফোনের বায়না করে সেটা পাননি রাহুল সর্দার নামে ১৮ বছরের ছাত্র। তার জেরেই মানসিক অবসাদ থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে বারুইপুর থানার লাঙলবেড়িয়া এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের বাড়ির নিজের ঘর থেকে ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, মাস তিনেক আগে দুর্ঘটনায় আহত হন রাহুল। তার পর থেকে বাড়িতেই থাকতেন তিনি। রাহুলের মা ঝুমা সর্দার বারুইপুর এলাকার বিভিন্ন ফলের বাগানে দিনমজুরের কাজ করেন। বাবা রঙের মিস্ত্রি।
ঝুমাদেবী জানিয়েছেন, দু’মাস ধরে একটি স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার জন্য বায়না করছিলেন রাহুল। ‘‘আমরা হাজার পাঁচেক টাকার একটা ফোন কিনেও দেব বলেছিলাম। কিন্তু রাহুল ১০ হাজার টাকার ফোনের জন্য চাপ দিচ্ছিল।’’—বললেন তিনি। আরও জানান, মোবাইল ছাড়াও একটি সাইকেলও চেয়েছিলেন রাহুল। মাস তিনেক পরে কিনে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রবিবার রাহুলের বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। ঠাকুমাও এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাতে বাবা বাড়ি ফিরে দেখেন, রাহুলের ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকি করে সাড়া না-পেয়ে, ঘরের জানলার ফাঁক দিয়ে দেখেন ছেলের দেহ ঝুলছে সিলিং থেকে। আশপাশের বাসিন্দারা এসে মৃতদেহ উদ্ধার করেন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, মানসিক অবসাদের জেরেই আত্মঘাতী হয়েছে ওই ছাত্র। বাবা-মায়ের কাছে বেশ কিছু দিন ধরে পছন্দের স্মার্টফোন চাইছিলেন রাহুল। না পেয়ে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তবে রাহুলের ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
মনোবিদেরা বলছেন, এখনকার সময়ে এ ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই প্রজন্ম স্বভাবগত ভাবেই খানিক অধৈর্য্য, অসহিষ্ণু। কিছু চেয়ে না-পেলে প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ বেশি মাত্রায় তীব্র হয়ে ওঠে প্রায়ই। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যাতে পারে, বাড়িতে দিন কাটাতে হচ্ছিল রাহুলকে। ফলে তিনি মোবাইলের মাধ্যমে বহির্জগতের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। আবার এমনটাও হতে পারে, সমবয়সি বন্ধুদের সকলেরই দামি স্মার্টফোন আছে অথচ তাঁর নেই— এই ভাবনাটি তাঁকে হীনমন্যতায় ভোগাচ্ছিল।
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, ‘‘ছেলেটির আগে থেকে কোনও মানসিক সমস্যা ছিল কি না, জানা দরকার। তবে অনেক সময়েই সমস্যা না থাকলেও, মুহূর্তের হঠকারিতায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অনেকে। এ ক্ষেত্রেও হয়তো তা-ই হয়েছিল। বেশ কিছু দিন ধরে চাওয়ার পরেও না-পেতে পেতে অবসাদ তৈরি হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy