বাঁ দিকে, গৌরচন্দ্র মণ্ডল। মাঝে, সুনীল মণ্ডল। ডান দিকে, নন্দলাল পণ্ডিত। —ফাইল চিত্র।
তিনি এখন আর এই কেন্দ্রে নেই। তবু আলোচনায় তিনি। শাসক কিংবা বিরোধী, ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে পারছে না কোনও পক্ষই।
তিনি সুনীল মণ্ডল। গত বিধানসভা ভোটে গলসি থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে জিতেছিলেন তিনি। এ বার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সে কারণেই উপ-নির্বাচন হচ্ছে এই গলসি বিধানসভায়।
স্বাধীনতার পরে মাত্র এক বারই জোড়া বলদ চিহ্ন নিয়ে গলসি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিল কংগ্রেস। সেটা ১৯৬২ সালে। তার আগে বা পরে গলসি বামফ্রন্ট, বিশেষত ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি। এ বার উপ-নির্বাচনে সেই ঘাঁটিতে হাওয়া ঘোরাতে নেমেছেন তৃণমূলের গৌরচন্দ্র মণ্ডল। কাঁকসা হাইস্কুলের বাংলা শিক্ষক গৌরবাবু সুনীল মণ্ডলের সহকর্মীও বটে। ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়ার মধ্যেও সুনীলবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে প্রায় ১০ হাজার ভোটে জেতেন।
সুনীলবাবু তাঁর পুরনো দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে প্রচারে অভিযোগ করছে বামফ্রন্ট। তাতে আপনার প্রচারে সমস্যা হচ্ছে না? তৃণমূলের প্রার্থী গৌরবাবু বললেন, “সুনীলবাবু এখনও গলসিতে প্রচারে আসতে পারেননি। তাঁর কথা বলে ভোট চাইতে হবে কেন আমাদের? উনি বিধায়ক হয়ে কাজ করতে পারছিলেন না বলেই তো তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। মানুষ তা জানেন। তাই আমার ভোটের প্রচারে এই প্রসঙ্গ উঠছে না।” তাঁর দাবি, “আমাদের এই গলসি বিধানসভা এলাকা বরাবরই অনুন্নত। ধান চাষ ছাড়া আর কোনও বিকল্প আয়ের পথ নেই। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, শিক্ষা সবই খুব দুর্বল। তাই এই বাম আমলের অনুন্নয়নের কথা বলে আমি ভোট চাইছি।”
দলের অন্যতম পর্যবেক্ষক পুলক চক্রবর্তী গৌরবাবুকে জেতাতে কার্যত ভোট ঘোষণার পর থেকেই গলসির পুরষায় ঘাঁটি গেড়েছেন। প্রচারের সমস্ত খুঁটিনাটি তিনি নিজে দেখছেন। এমনকী, বুথ স্লিপ বিলি পর্যন্ত হচ্ছে তাঁর তত্ত্বাবধানে। দেখা হতে বলছেন, “বামফ্রন্টের রেকর্ড নিয়ে চিন্তা করার দিন আর নেই। ওরা তো বছর-বছর জিতে গলসিকে কিছু দেয়নি। তাই গরিব মানুষের অনুন্নয়কেই পাখির চোখ করেছি আমরা।”
স্থানীয় শিল্লাঘাটের বাসিন্দা সুমন রায়ের আবার দাবি, “গলসির বাইরে তো খুব নামডাক। এই এলাকায় দু’টি ব্লক ধান উৎপাদনে রাজ্যের প্রথম। কিন্তু কৃষির বাইরে আর কিছুই হয়নি এখানে। এমনকী, উৎপন্ন ফসলের বিপণনেরও কোনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তাই এ বার ভোটে যে-ই জিতুন না, এ দিকে তাঁকে নজর দিতে হবে।” পুলকবাবু বলেছেন, “গলসিতে এসে প্রচুর অনুন্নয়ন দেখছি। এই সমস্ত অনুন্নয়নের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। আমার সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের কথাও হয়েছে। ভোটের পরেই এখানে একটি কৃষি খামার ও একটি আলুবীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।”
তৃণমূলের ভোটের প্রচারে অনেক কর্মীকে দেখা গেলেও দেওয়াল লিখন ও ফ্লেক্স ছাড়া ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নন্দলাল পণ্ডিতের প্রচারে তেমন কিছু দেখা গেল না। তৃণমূলের গলসি ১ ব্লক যুব সভাপতি জাকির হোসেনের দাবি, “ফরওয়ার্ড ব্লকের এখন কোনও সংগঠনই গলসিতে নেই। এ বার পরিস্থিতি খারাপ বুঝে সিপিএম-ও হাত তুলে নিয়েছে। তাই ওদের দেখা মিলছে না।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে এই উপ-নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক দেবরঞ্জন সেনের ছেলে পিনাকী সেন। প্রচারে দল অনুপস্থিত, এই দাবি হেসে উড়িয়ে দেন তিনি। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমরা প্রবল ভাবে প্রচার করছি। এই আসনটি জিতে প্রমাণ করতে হবে, মানুষ সুনীল মণ্ডলের মতো বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করে না। সিপিএম-সহ সমস্ত বাম কর্মীরা আমাদের সঙ্গে আছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, “সুনীল মণ্ডল লোকসভায় তৃণমূলের হয়ে দাঁড়াতে আমাদের সুবিধাই হয়েছে। মানুষ তো বুঝে গিয়েছেন, তাঁর কী রকম প্রতারিত হয়েছেন। টাকা বা ব্যক্তিগত সুবিধার লোভে এক জন বাম বিধায়কের দল পাল্টানোও তো প্রথম ঘটল। তাই এই আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকই জিতছে।”
না থেকেও তাই তাঁর নামই উঠছে ঘুরে-ফিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy