Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

একাধিক তালা ভেঙে মন্দিরে চুরি কালনায়

ফের মন্দিরে চুরি। এ বার তালিকায় ঢুকে পড়ল কালনার প্রাচীন গোপাল জিউ মন্দির। সোমবার রাতে মন্দিরে হানা দিয়ে গর্ভগৃহের কাঠের ও গ্রিলের দরজা ভেঙে এক দল দুষ্কৃতী সোনা-রুপোর গয়না এবং কাঁসা, পিতলের বেশ কিছু বাসনপত্র নিয়ে পালায়। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা পুজো দিতে এলে বিষয়টি নজরে আসে।

চুরির পরে মন্দিরে ঝোলানো হয়েছে নোটিস। —নিজস্ব চিত্র।

চুরির পরে মন্দিরে ঝোলানো হয়েছে নোটিস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৭
Share: Save:

ফের মন্দিরে চুরি। এ বার তালিকায় ঢুকে পড়ল কালনার প্রাচীন গোপাল জিউ মন্দির।

সোমবার রাতে মন্দিরে হানা দিয়ে গর্ভগৃহের কাঠের ও গ্রিলের দরজা ভেঙে এক দল দুষ্কৃতী সোনা-রুপোর গয়না এবং কাঁসা, পিতলের বেশ কিছু বাসনপত্র নিয়ে পালায়। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা পুজো দিতে এলে বিষয়টি নজরে আসে। শহরবাসীর দাবি, এত দিন আশপাশের গ্রামগঞ্জে মন্দিরে চুরি হচ্ছিল। এ বার শহরের মধ্যেই চুরি হয়ে গেল। নিরাপত্তার অভাবেরও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। পুলিশ যদিও দ্রুত চুরির কিনারা করার আশ্বাস দিয়েছে।

কালনা পুরসভা যাওয়ার রাস্তাতেই রয়েছে ১৭৬৬ সালে নির্মিত এই মন্দিরটি। পঞ্চবিংশতি রত্ন মন্দিরটির নজরকাড়া কারুকাজের টানে প্রতি বছরই দেশ বিদেশের বহু মানুষ ছুটে আসেন। মন্দিরে রয়েছে কষ্টিপাথরের গোপাল, কাঠের রাধাগোবিন্দ এবং পিতলের রাধাকৃষ্ণ মূর্তি। রয়েছে চারটি শালগ্রাম শিলাও। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় নিয়ম করে পুজো হয়। দু’বেলায় ভিড় থাকে ভক্তদের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে এক দল দুষ্কৃতী মন্দিরে হানা দেয়। প্রথমে ঢোকার দরজা, পরে মন্দিরের গর্ভগৃহের কাঠ এবং গ্রিলের দরজার তালা ভাঙে তারা। পরে মূর্তির গা থেকে সমস্ত গয়নাগাঁটি খুলে নেয়। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় মানুষজন পুজো দিতে গেলে বিষয়টি ধরা পরে। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পুলিশও। মন্দিরের পুরোহিত তিমির চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে সোনার জল করা পাঁচটি রুপোর মুকুট, ৯টি রুপোর ও একটি সোনার হার, তিনটি রুপোর পৈতে, রুপোর ছাতা এবং ১০টি রুপোর চুরি ও দুটি বালা চুরি গিয়েছে। এ ছাড়া প্রণামী বাক্স ভেঙেও টাকা লুঠ করা হয়েছে। চোরেরা নিয়ে গিয়েছে ঘণ্টা-সহ কাঁসার নানা সামগ্রীও।’’ তিমিরবাবু আরও বলেন, ‘‘পুজো করে আমারও হাজার খানেক টাকা জমেছিল। সে টাকা মন্দিরেই রাখা ছিল। দুষ্কৃতীরা তাও নিয়ে গিয়েছে।’’ মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগেও মন্দিরের জলট্যাঙ্কের পাশে একটি পাইপ দিয়ে মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। তবে কাছাকাছি বাড়ির লোকজনেরা জেগে গেলে তারা পালিয়ে যায়। মন্দিরের তরফে নোটিস ঝুলিয়ে ভক্তদের মুক্ত হস্তে দান করারও আর্জি জানানো হয় এ দিন।

কালনা শহরের ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি দেখভাল করেন কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ। চুরির খবর শুনে তাঁরাও ঘুরে যান মন্দিরটি। ক্ষোভ ছড়া ভক্তদের মধ্যেও। শহরের বাসিন্দা রতন সরকারের অভিযোগ, ঢিল ছোড়া দূরত্বে থানা। তার মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। দ্রুত দোষীদের গ্রেফতারের দাবিও করেন তাঁরা। শহরের আর এক গৃহবধূ কমলিকা পালের কথায়, ‘‘কয়েকমাস আগে মহকুমার গ্রামগঞ্জের মন্দিরগুলিকে নিশানা করেছিল দুষ্কৃতীরা। এ বার শহরেও শুরু হল।’’ পুলিশের যদিও দাবি, তদন্ত শুরু হয়েছে।

তবে এর আগে বেশ কয়েকটি মন্দিরে চুরির ঘটনারই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। মাস তিনেক আগে মন্তেশ্বরের বিভিন্ন গ্রামের মন্দিরে পরপর চুরি হয়। চুরি হয় পুড়শুরি এলাকার গোপীনাথ, ব্রজকালী, পঞ্চানন মন্দিরে এবং মন্তেশর থানা লাগোয়া সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, সিংহালী গ্রামের রঘুনাথ মন্দির, হাটপাড়া এলাকার তারা মা মন্দির-সহ প্রায় ২০টি মন্দিরে। সবগুলি মিলে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার গয়না চুরি যায়। মন্তেশ্বরের ব্যাবসায়ী মহল প্রতিবাদে ক্ষোভও দেখান। তবে একটিতেও দোষীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু মন্তেশরই নয়, বছর দুয়েক আগে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের জামালপুর বুড়রাজের মন্দির থেকেও দুষ্কৃতীরা একটি রুপোর সাপ চুরি করে। সেটিরও কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। ব্যর্থতার কারণ জানতে চাইলে অবশ্য মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শুধু একটি দল নয়, এই ধরনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের একাধিক দল যুক্ত। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna temple Ratan Sarkar police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE