Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কয়লা চুরি বন্ধ করতে মাইকে প্রচার পুলিশের

বেআইনি ভাবে কয়লা কাটা হলে বিপদে পড়বেন স্থানীয় বাসিন্দারা— মাইক নিয়ে দিনভর প্রচার করল পুলিশ। রানিগঞ্জের ঘনশ্যাম খোলামুখ খনি এলাকায় বুধবার এই প্রচার চালানো হয়। কয়লা চুরি হলে খনিগর্ভে আগুন ও ধসের জেরে জনপদ বিপন্ন হতে পারে বলে জানানো হয় তাতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের যদিও দাবি, চোরাই কয়লা বাজেয়াপ্ত করার বদলে এ ভাবে প্রচার সারা নেহাতই পুলিশের লোক দেখানো কাজ।

পুলিশের প্রচার।

পুলিশের প্রচার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

বেআইনি ভাবে কয়লা কাটা হলে বিপদে পড়বেন স্থানীয় বাসিন্দারা— মাইক নিয়ে দিনভর প্রচার করল পুলিশ। রানিগঞ্জের ঘনশ্যাম খোলামুখ খনি এলাকায় বুধবার এই প্রচার চালানো হয়। কয়লা চুরি হলে খনিগর্ভে আগুন ও ধসের জেরে জনপদ বিপন্ন হতে পারে বলে জানানো হয় তাতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের যদিও দাবি, চোরাই কয়লা বাজেয়াপ্ত করার বদলে এ ভাবে প্রচার সারা নেহাতই পুলিশের লোক দেখানো কাজ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন আগে ঘনশ্যাম খোলামুখ খনি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এডিডিএ নির্মিত মঙ্গলপুর শিল্পতালুকের লাগোয়া এলাকার এই পরিত্যক্ত খনি থেকে কারখানাগুলির জল নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, চোরেরা ওই জল শুকিয়ে কয়লা কাটতে শুরু করে। কিছু দিনের মধ্যে এই এলাকা কয়লা চোরেদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত খনিতে কয়লা কাটার সময়ে অভিযানে চালালেও চোরেদের সবাইকে ধরা যায় না। পুলিশ আসতে দেখলেই মেঠো রাস্তা ধরে তারা পালিয়ে যায়। শাবল, গাঁইতি নিয়ে কয়লা কাটার পরে ছোট গাড়িতে করে নানা জায়গায় পাচার করা হয়। মাসখানেক অভিযান চালিয়ে রানিগঞ্জের পুলিশ জনা কুড়ির বেশি লোককে কয়লা-সহ গ্রেফতার করতে পারেনি।

ওই এলাকায় ইসিএলের খনি থেকে তোলা কয়লা পরিবহণ খরচ ছাড়া প্রতি টন ৬১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সেখানে অবৈধ উপায়ে কাটা কয়লার দাম পরিবহণ খরচ-সহ ৪৭০০ টাকা, দাবি স্থানীয় নানা সূত্রের। পুলিশ জানায়, কোনও ভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় কয়লা কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না দেখে সারা দিন মাইকে করে প্রচার করা হয়। তাতে বলা হয়, “এ ভাবে কয়লা তস্কররা কয়লা কেটে নিলে সমগ্র জনপদ বিলীন হয়ে যেতে পারে। গ্যাস, ধোঁয়া, আগুন লাগার ঘটনা ঘটতে পারে।”

পুলিশের এই প্রচারকে অবশ্য নেহাতই মগজ ধোলাই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ। তাঁরা জানান, এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই চোররা কয়লা কাটছে। সেই কয়লা পাচারের ব্যাপারে মদত দিয়ে থাকেন পুলিশকর্মীদের একাংশও। চোরেরা পরিত্যক্ত খনি এলাকায় চল্লিশটির বেশি অবৈধ কুয়োখাদ তৈরি করে কয়লা কেটে ছোটখাট কারখানাগুলিতে পাচার করে বলে ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ।

দামোদরের গা ঘেঁষে ইসিএলের পরিত্যক্ত নারায়নকুড়ি খোলামুখ খনি থেকেও একই ভাবে চোররা কয়লা কেটে পাচার করছে বলে অভিযোগ। সাইকেল, ঠেলা রিকশা ও ছোট গাড়িতে করে সেই কয়লা বাকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাচার হয় বলে এলাকার বাসিন্দাদের দাবি। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অভিযোগ করেন, ঘনশ্যাম এলাকায় কয়লা চুরির খবর বিভিন্ন মহলে আলোচনা হওয়ায় পুলিশ প্রচারের লোক দেখানো নাটক করছে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে বাসিন্দাদের অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, চোরেরা কয়লা কাটার জন্য অনায়াসে পৌঁছে গেলেও পুলিশ সেখানে পৌঁছতে পারছে না কেন? চুরির কয়লা প্রকাশ্যে রাস্তা দিয়ে পার করা হচ্ছে। সেখান থেকেই বা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে না কেন? এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ অবশ্য জানান, বেআইনি কয়লা খননের অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE