মেলার উদ্বোধনে কৃষিমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) ও রাজ্য কৃষি দফতর আয়োজিত কৃষিমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে বৃহস্পতিবার কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।
বর্ধমানের উৎসব ময়দানে আয়োজিত তিন দিনের কৃষি উন্নয়ন মেলায় এ দিন মন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। গোটা রাজ্য জুড়ে কিষান মাণ্ডি, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার, সমবায় প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষি বিপণন ব্যবস্থার পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখানে বেসরকারি কৃষিভিত্তিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলি বাজারে আসার সময়ে তার গুণমান দেখে ট্রেডিং ও গ্রেডিং বিবেচনা করে কৃষি বিপণনের নতুন বড় সুযোগ মিলতে পারে বিনিয়োগকারীদের।’’ প্রয়োজনে কৃষিভিত্তিক শিল্পের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলও অনুসরণ করা যেতে পারে বলে মন্ত্রীর প্রস্তাব। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শিল্পের সঙ্গে কেন কৃষিকে ‘সমতুল’ করে দেখা হবে না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই ধরনের আরও কৃষি উন্নয়ন মেলা আয়োজন করার জন্য সিআইআই-র আধিকারিকদের আহ্বান জানান পূর্ণেন্দুবাবু। মন্ত্রীর আক্ষেপ, পশ্চিমবঙ্গের জন্য দিল্লিতে বা গোটা দেশে কোনও ‘কৃষি লবি’ নেই। মন্ত্রী সিআইআই-কে অনুরোধ করেন, দিল্লিতে রাজ্যে উৎপাদিত ধান, আলু প্রভৃতির জন্য ‘কৃষি লবি’ তৈরি করতে। শক্তিশালী ‘কৃষি লবি’ তৈরি হলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিজাত পণ্যগুলির বাজার খুলে যেতে পারে বলে মন্ত্রীর আশা।
সিআইআই-র ইস্টার্ন রিজিয়নের ট্রেড ফেয়ার টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান সঞ্জীব পল জানান, গত বছর সিআইআই-র উদ্যোগে নদিয়ার কল্যাণীতে কৃষি উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়। এ বার বর্ধমানে দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলাকে নিয়ে মেলা হচ্ছে। চলতি বছরের নভেম্বর মাসের গোড়ায় কোচবিহারেও এ ধরনের মেলার আয়োজন করা হবে বলে সিআইআই-র তরফে জানানো হয়েছে। সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘রাজ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে আমাদের সংস্থা উদ্যোগপতি ও সরকারের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করব।’’ এ রাজ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মত সঞ্জীববাবুর মত। ‘কৃষি লবি’ প্রসঙ্গে সিআইআই আধিকারিকদের আশ্বাস, এর জন্য রাজ্য সরকারের পাশে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে চেষ্টা করা হবে। তবে কৃষি বিপণনে উন্নতির জন্য সেচ পরিকাঠামো, ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার, খাদ্য ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার বলে জানান সঞ্জীববাবু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপকুমার মজুমদার জানান, কৃষি বিপণন ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্য রাজ্যে মোট ১৮০টি কিষাণ মাণ্ডি গড়ে তোলা হবে। ৯৫টির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে বলে তাঁর দাবি। ২০১১ সালের তুলনায় কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ২ শতাংশ বেড়েছে বলেও দাবি। সরকারের তরফে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, নিখরচায় ক্ষুদ্র চাষিদের যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান প্রদীপবাবু। এ বছর সরকারের তরফে নভেম্বর মাস থেকে ১৪১০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে ‘অভাবী’ ধান কেনা হবে বলেও ঘোষণা করা হয়। তবে প্রদীপবাবুর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের তরফে পঞ্জাব, অন্ধপ্রদেশ, ছত্তিশগড় থেকে যথাক্রমে ৮২, ৬২ ও ৬০ শতাংশ করে চাল কেনে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাত্র ৮ শতাংশ ধান কেনা হয় বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকারের কৃষি সচিব পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চাষিদের ছোট যন্ত্রপাতি কিনতে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।’’ এ ছাড়া বড় যন্ত্রপাতি স্বল্প টাকাতে ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পরিতোষবাবু। তবে পরিতোষবাবুর আক্ষেপ, রাজ্য এখনও ডাল উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে। পূর্ণেন্দুবাবুও জানান, ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনে রাজ্যের ঘাটতি রয়েছে। গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন, সমবায়, ফার্মার্স ক্লাব-এর মতো বিভিন্ন পরিকাঠামোরও উন্নতি করা দরকার বলে মন্ত্রীর মত। এ দিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু, রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সচিব রাজেশ সিংহ প্রমুখ।
মেলার সঙ্গে চলছে কৃষি পাঠশালাও। সিআইআই-এর আঞ্চলিক অধিকর্তা সৌগত মুখার্জী জানান, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন মোট দু’হাজার করে চাষিকে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। পাঠশালায় যোগ দিয়ে খুশি মেমারির মাধব মণ্ডল, হুগলির ফকির চন্দ্র আদকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy