সরু জোড়া তারের গোছায় ঝুলছে পাঁচটা চাবি। কোনওটা ভোঁতা, কোনওটা লম্বাটে আবার কোনওটা বহু ব্যবহারে তামাটে। আর এই পাঁচ চাবির যে কোনও একটা দিয়ে খুলে যেতে পারে সমস্ত ধরনের মোটরবাইকের হাতল।
সম্প্রতি মোটরবাইক চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে এসেছে এমনই পঞ্চবাণ। পুলিশের দাবি, এ ভাবেই কালনা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে দেদার মোটরবাইক পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বাইক চুরির চক্রে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি কালনা ১ ব্লকের মধুপুর এলাকায় নিজের পকেট থেকে চাবির গোছা বের করে মোটরবাইক নিয়ে রওনা দেয় এক যুবক। সন্দেহ হওয়ায় কালনার পুলিশ পিছু নেয় তার। পরে শহরের একটি হোটেলের সামনে থেকে চোরাই মোটরবাইক-সহ শেখ সাজিদ নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে মুখ খুলতে না চাইলেও পরে কালনা থানার ওসি দীপঙ্কর চক্রবর্তীর জেরায় ভেঙে পরে সে। জানায়, তার বাড়ি হুগলির বলাগড়ে। তারপর ওই চক্রে জড়িত আরও পান্ডাদের নাম জানায় সে, যারা রাজ্যের নানা জেলায় মোটরবাইক চুরির সঙ্গে যুক্ত। সাজিদের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে ওই জেলারই শাহরুখ সাহা ওরফে ছোট্টু এবং রাজীব সিংহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বলাগড়ের বাসিন্দা হলেও শাহরুখ লুকিয়ে ছিল কালনার সুলতানপুর পঞ্চায়েত এলাকার কাসিমপুর গ্রামে। তার কাছ থেকে একটি চোরাই মোটরবাইকও পায় পুলিশ। শাহরুখের মোবাইলের নামের তালিকা ধরে চুঁচুড়ার শরত্ সরণীতে ভাড়া থাকা রাজীব সিংহ নামে একজনকেও ধরে পুলিশ। জানা যায়, দিনে টোটো চালালেও রাতে চোরাই বাইকের বিক্রির কারবার করত সে। চুঁচুড়ার আগে উত্তরপাড়া এলাকায় ওই চোরাই বাইকের ব্যবসা চালাত রাজীব। কিন্তু সেখানে চুরির দায়ে পুলিশের কাছে ধরা পরের পরে কারবার গুটিয়ে নেয় সে।
পুলিশ জেরায় জেনেছে, ধৃতেরা সম্প্রতি কালনার নানা জায়গা থেকে খান আটেক দামি মোটরবাইক চুরি করেছে। যদিও পুলিশের সন্দেহ, চুরির সংখ্যাটা আরও বেশি। চুরি করতে সাজিদ, শাহরুখের মতো দুষ্কৃতীদের ভরসা ওই পাঁচ চাবির গোছা। এর জন্য সাধারণত হাট, বাজার বা কোনও জনবহু এলাকাকেই টার্গেট করে তারা। বেশিরভাগ সময়েই রঙিন বছর খানেকের মধ্যে কেনা মোটরবাইর তাদের লক্ষ্য। চাবি লেগে গেলে মুহূর্তে তীব্র গতিতে বাইক চালিয়ে পালায় তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গন্তব্য রাজীবের ডেরা। পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের ডেরা থেকে এক-দেড় দিনের মধ্যে সড়ক পথে চোরাই মোটরবাইক পৌঁছয় নদিয়ার চাকদহ মোড়ে। আগে থেকে ফোনে যোগাযোগ করে সেখানে অপেক্ষা করে এক রিসিভার। তারপরে সীমান্ত এলাকা দিয়ে তা চলে যায় বাংলাদেশে। তবে শুধু রাজীব নয়, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক ব্যক্তি এই কারবারে জড়িত বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, চুরির তিন দিনের মধ্যে মোটরবাইকটি পৌঁছে যায় বাংলাদেশে। মোটরবাইকের হাল দেখে দাম ঠিক হয়। তবে মাঠে-ঘাটে ঘুরে যারা বাইক চুরি করে তারা বাইক পিছু মোটামুটি দাম পায় ৫ থেকে আট হাজার টাকা। এরপরে রিসিভার সে গাড়ি বিক্রি করে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। বাংলাদেশে তা পাচার হয় মোটামুটি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। জানা গিয়েছে, অনেকে নম্বরবিহীন বাইক কিনলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে মোটরভ্যান, ভটভটিতে লাগানো হয়। নামি কোম্পানির বাইকের ইঞ্জিন, হ্যান্ডেলের জন্য আলাদা আলাদা ক্রেতা রয়েছে বলেও জেনেছে পুলিশ। কালনা থানার এক আধিকারিকের কথায়, কার কাছে, কোন জায়গায় চোরাই মোটরবাইক পৌঁছবে তা টেলিফোনেই জেনে নেয় দুষ্কৃতীরা। পুলিশের দাবি, বাইক চুরি চক্রে জড়িত বেশ কয়েকজন পান্ডার নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের ধরতে ফাঁদ পাতা হচ্ছে বলেও পুলিশের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy