শহরের সরকারি হোম থেকে পাঁচ কিশোরীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার দশ দিনের মধ্যে মূক ও বধিরদের আবাসিক হোম থেকে পালাল আট বছরের এক বালক। পরে অবশ্য জানা যায়, ৩০ কিলোমিটার দূরে রায়নায় নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছে সে। তবে আট বছরের একটা ছেলে কীভাবে পালাল, কখন পালাল-- হোম কর্তৃপক্ষ তার কোনও হদিশ দিতে পারেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ হোম কর্তৃপক্ষের খেয়াল হয় যে রাধারমন পোড়েল নামের ওই বালক হোমে নেই। তারও আড়াই ঘণ্টা পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ হোম কর্তৃপক্ষ তথা ডাক্তার শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় মূক ও বধির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল সরেন ওই নিখোঁজ সংক্রান্ত খবর পুলিশকে জানান। তবে পুলিশকে ওই বালকের কোনও ছবি দিতে পারেননি হোম কর্তৃপক্ষ। শহর জুড়ে বর্ধমান থানার পুলিশ তল্লাশি শুরু করার পরে হোমের তরফে পুলিশকে জানানো হয়, ছেলেটি রায়নার হরিহরপুরে নিজের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে।
গত ২০ অগস্ট বর্ধমানের ঢলদিঘির একটি সরকারি হোম থেকে পাঁচ আবাসিক কিশোরী পালিয়ে গিয়েছিল। কী করে তারা পাঁচিলে ঘেরা তিনতলার এই হোম থেকে পালায় সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি হোম কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনার পরে হোমের সুপারকে শো-কজ করা হয়। পরে রাঁচি স্টেশনে দুই কিশোরীর খোঁজ মেলে। তিনজন এখনও নিখোঁজ। এই ঘটনার পরে জেলা প্রশাসনের তরফে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “ওই রিপোর্টে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা রুখতে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। বসবে সিসি ক্যামেরা ও কাঁটা তারের বেড়া। এ নিয়ে হোমের সঙ্গে বৈঠক করব।” ওই হোমটিকে বামচাঁদাইপুরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ওই বালকের পালিয়ে যাওয়া আবারও প্রমাণ করল হোমগুলি আবাসিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নয়। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার দাবি, “এই ঘটনায় ওই হোম কর্তৃপক্ষকেও শো-কজ করা হবে। ছেলেটি নিজের বাড়িতে কেন চলে গেল, তার সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করা হতো কি না, অথবা কোনও ধরণের নির্যাতন করা হত কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।” তাঁর অভিযোগ, “আট বছরের ওই মূক ও বধির শিশু রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তার দায় নিত কে?”
শহরের চাঁদনি মোড়ের ওই হোমে প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানো হয় বলে হোম সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু কতজন প্রতিবন্ধী রয়েছে, তাদের বয়েস কত, এ ধরণের কোনও তথ্য জানাতে চাননি প্রধান শিক্ষক। শুক্রবার বারবার তিনি বলেন, “ছেলেটি তো হারিয়ে যায়নি। ওর বাবা শ্রীকান্ত পোড়েল আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন, ছেলেটি বাড়ি চলে গিয়েছে। সেখানে সে ভালই রয়েছে। তাহলে এসব লিখে কী লাভ হবে?” কিন্তু কি করে ছেলেটি হোম থেকে বেরিয়ে একা অতদূরে গেল, হোমের কেউ জানতে পারেনি কেন, সে ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি তিনি। সুনীলবাবু শুধু বলেন, “দুপুরে টিফিন ছিল, তারপরেই দেখা যায় ওই ছেলেটি হোমে নেই। তবে কী করে ও বের হয়ে গেল তা বলতে পারব না।”
কিন্তু আড়াইটে নাগাদ ছেলেটি হোমে নেই জানার পরেও পুলিশ খবর দিতে আরও আড়াই ঘণ্টা লাগল কেন? পুলিশের প্রবল ভর্ৎসনার মুখে হোম কর্তৃপক্ষের জবাব, ছেলেটির বাড়িতে খবর দেওয়া হলে তার বাবা ও মা ছুটে আসেন। তাঁরাই কয়েকটি জায়গায় রাধারমণের খোঁজ করতে শুরু করেন। খোঁজ না পাওয়ায় পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy