Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশকে গোল দিয়ে পগার পার ‘চোর’

ছবি ছাড়াই ‘চোর’ (আসলে প্রতারক) ধরতে বেরিয়েছিল পুলিশ। পাড়ার গলিতে সেই চোরের সঙ্গেই দেখা। চোরের নাম জানিয়ে তার কাছেই পুলিশ জানতে চাইল, এর বাড়ি কই?

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৪
Share: Save:

ছবি ছাড়াই ‘চোর’ (আসলে প্রতারক) ধরতে বেরিয়েছিল পুলিশ।

পাড়ার গলিতে সেই চোরের সঙ্গেই দেখা। চোরের নাম জানিয়ে তার কাছেই পুলিশ জানতে চাইল, এর বাড়ি কই?

চোর বলল, ‘ওই দেখা যায় চোরের বাড়ি।’

পুলিশ গেল চোরের বাড়ি। এ দিকে, চোর পালাল বাড়ি ছেড়ে!

ঘটনাস্থল বর্ধমান। কিন্তু, পুলিশ দুই— বর্ধমান জেলা ও কেরল রাজ্য।

কেরল পুলিশের এক কর্তার দাবি, বর্ধমানের বাসিন্দা অভিযুক্ত সুদীপ নাগ ওরফে বাবাই পাসপোর্ট, ভিসা বানিয়ে কানাডার নাগরিক করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাত। অনেকেই সে ফাঁদে পড়ে ৮-১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। সম্প্রতি একজনকে গ্রেফতার করে সুদীপের নাম, ঠিকানা মেলে। জানা যায়, তাঁর বাড়ি বর্ধমান শহরের ৫ নম্বর ইছালাবাদে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, গত কয়েক দিনে সুদীপের বর্ধমানের শাখার একটি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। পুলিশের দাবি, কেরল থেকে ওই টাকা সুদীপের অ্যাকাউন্টে ঢোকে।

তথ্য হাতে সুদীপের খোঁজে কেরল পুলিশের চার সদস্যের দল এ দিন দুপুরে বর্ধমান থানায় আসে। বর্ধমান থানার পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ভাবে সুদীপের খোঁজে ইছালাবাদে যায় দলটি। এক পুলিশ কর্মী বলেন, “ইছালাবাদে ঢুকে সুদীপের খোঁজ করছিলাম। সুদীপের কোনও ছবি না থাকায় স্থানীয় মানুষজনের থেকে খোঁজ নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি বুঝে এক যুবকের কাছে অভিযুক্তের নাম জানিয়ে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। এরপরেই সে একটি গলির ভিতর ঢুকিয়ে সাদা রঙের বাড়ি দেখিয়ে দেয়।”

কথামতো সেই বাড়ি পৌঁছে ভুল ভাঙে পুলিশের। এ তো সুদীপের বাড়ি নয়! কী হল? পরে খোঁজ করে সুদীপের বাড়ি গিয়ে ছবি দেখে সম্বিত ফেরে পুলিশের। ওমা! রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে ছেলেটা ঠিকানা দেখিয়ে দিল সেই তো সুদীপ! ততক্ষণে যা হবার হয়ে গিয়েছে। এলাকা ছেড়েছে অভিযুক্ত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সুদীপ এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪৯ অংশের বুথে শাসক দলের এজেন্ট ছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম কর্মীকে মারধরের ঘটনাতেও তার নাম উঠে আসে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনুল হক বলেন, “ফের প্রমাণিত হল, তৃণমূলে কোন কোন রত্ন মজুত রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, সেই রত্নসমূহ বাইরে বেরিয়ে আসছে।” যদিও ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের শক্তিরঞ্জন মণ্ডলের দাবি, “ওই নামে দলের কোনও সক্রিয় কর্মী নেই।”

এ দিকে, সুদীপের কাজকর্ম সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন বাডির লোকজন। কেরল পুলিশের থাম্পানুর চক্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, “অভিযুক্ত সুদীপ বর্ধমানে বসে প্রতারণা চক্র চালাত। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে এই চক্রের দিল্লির বসন্তকুঞ্জ ও সরকার ফোর্টে দফতর রয়েছে। সেখানে হানা দিয়ে জানা যায়, এই চক্রের টাকা মজুত থাকত সুদীপের অ্যাকাউন্টে। সুদীপকে ধরতে পারলে আরও অনেক অজানা তথ্য উঠে আসবে।’’

প্রশ্ন উঠছে, বর্ধমান পুলিশ সঙ্গে থাকতেও কেন হাতছাড়া হল অভিযুক্ত? নিজের এলাকায় পুলিশেরই কি ‘সোর্স’ কমছে? অভিযোগ মানতে চাননি জেলা পুলিশের কর্তারা। কিন্তু, যে ভাবে অভিযুক্ত পুলিশকে বোকা বানিয়েছে, তাতে তাজ্জব দুঁদে পুলিশ কর্তারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE