Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে শিবির, ত্রাণ না মেলায় ক্ষোভ

সকাল থেকে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হলেও বিকেল থেকেই ফের বৃষ্টি শুরু হয়। এর জেরে বৃহস্পতিবারও জেলার গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি ছিল প্রায় একই রকম। আজ, শুক্রবারও বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রশাসনের সূত্রে জানানো হয়েছে। মেমারি, বর্ধমান, জামালপুর, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।

ভেঙেছে নরজা সেতু। ভাতারে।

ভেঙেছে নরজা সেতু। ভাতারে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

সকাল থেকে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হলেও বিকেল থেকেই ফের বৃষ্টি শুরু হয়। এর জেরে বৃহস্পতিবারও জেলার গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি ছিল প্রায় একই রকম। আজ, শুক্রবারও বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রশাসনের সূত্রে জানানো হয়েছে। মেমারি, বর্ধমান, জামালপুর, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।

কেন বিপদ
ভাগীরথীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বলে খবর। জল বেড়েছে খড়ি, বাঁকা ও গুরজোয়ানি নদীতেও। তবে অজয়ের জল খানিকটা হলেও কমেছে বলে খবর। বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে ৪৫ হাজার ৪২৫ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। পূর্বস্থলীর সোনাপুরী গ্রামে খড়ি নদীর উপর একটি বাঁধের একাংশও এ দিন ভেঙে যায়।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
বেশ কিছুক্ষণ নৌকা চলাচল বন্ধ ছিল কাটোয়ার বল্লভপাড়া ঘাটে। জল বের করতে এ দিন নতুন করে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগকারী মেমারি-জামালপুর রাস্তার পাঁচ জায়গায় ও জৌগ্রামের কাছে দু’জায়গাতে রাস্তা কাটা হয়। এর জেরে জামালপুরের সঙ্গে বর্ধমানের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

পাশে প্রশাসন

কাটোয়া-নদিয়া ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েন কয়েকশো যাত্রী। স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা ওই যাত্রীদের কোনও ভাবে নদিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। জেলাশাসকের নির্দেশ মতো সমস্ত নৌকায় ‘লাইফ জ্যাকেট’ রাখা হয়েছে। তবে কাটোয়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার তরফে কোনও ত্রাণ মেলেনি। তাঁদের দাবি, গত ৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাতে হচ্ছে। জামালপুরের ১৫টি আশ্রয় শিবিরেও ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাটোয়া পুরসভায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলাশাসকের নির্দেশ অনুসারে পূর্ত দফতর হিউম পাইপ লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলিকে অস্থায়ী ভাবে মেরামতি করেছে।

ক্ষতির হিসেব

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মোট ১৮৫টি পঞ্চায়েতের মোট দেড় লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষি দফতরের তরফে আশঙ্কা করা হয়েছে, ৮৫ শতাংশ জমির সব্জিই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজার বাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দিন কালনার বিভিন্ন এলাকায় আরও ৪০০ কাঁচা বড়ির ক্ষতি হয়েছে। শ্রীরামপুর, নসরতপুর, সমুদ্রগড়-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৩০০-রও বেশি তাঁতঘরে জল ঢুকে গিয়েছে। জল বাড়তেই শুরু হয়েছে সাপের উপদ্রবও। বুধবার পূর্বস্থলীর গড়াইল গ্রামের বাসিন্দা স্বপন সাঁতরাকে (৪৫) নিজের বাড়িতেই সাপে ছোবল মারে। স্বপনবাবুকে কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে আরও এক যুবককে সাপে ছোবল মেরেছে।

কাটোয়ায় বন্ধ খেয়া।

ত্রাণ শিবির

বুধবার জেলায় ৮০টি ত্রাণ শিবির ছিল। এ দিন শিবিরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৬টি। নাদনঘাট, বগপুর, দোগাছিয়া, নান্দাই, ঝাউডাঙা, পাটুলি, মন্তেশ্বর, দেবনগর-সহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২৩ হাজার মানুষ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

কর্তারা জানান

কাটোয়ার পুর কমিশনার ঝর্ণা হালদার জানান, এখনও পর্যন্ত এলাকার প্রায় ১৮০টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া গিয়েছে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মঙ্গলকোটের কয়েকটি এলাকা জলের তলায় রয়েছে জানিয়ে সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, ইতিমধ্যেই ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়েছে ত্রাণ শিবিরগুলিতে। ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ত্রিপলও। যে সমস্ত স্কুলে ত্রাণ শিবির চলছে, শিক্ষা দফতরের কাছে সেই সব স্কুলগুলিতে ছুটি দেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে বলেও জানান দেবুবাবু। প্রশাসনিক বৈঠক করেন কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ। সব্যসাচীবাবু জানান, কালনায় ব্লক পিছু ৫ কুইন্ট্যাল চিড়ে, ১ কুইন্ট্যাল গুড়, ১০ মেট্রিক টন চাল, ২০ কেজি গুঁড়ো দুধ ও এক হাজার লিটার করে কেরোসিন তেল পাঠানো হয়েছে। এ দিন দুপুরে বিভিন্ন দফতর ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘‘সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালও বলেন, ‘‘প্রতিটি থানাকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’

ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও মধুমিতা মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE