Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে ঢুকে মদ্যপদের মার, নিহত বৃদ্ধ

রাতে দোকান বন্ধ করার সময়ে এসে হুজ্জুতি শুরু করেছিল জনা কয়েক মদ্যপ যুবক। রেহাই পেতে দোকান লাগোয়া নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন বৃদ্ধ ব্যবসায়ী। কিন্তু তাতেও রক্ষা হল না। বাড়িতে ঢুকে ওই যুবকেরা বেধড়ক মারধর করায় মৃত্যু হল তাঁর।

রামবিলাস সাউয়ের বাড়ির সামনে ভিড় পড়শিদের।— নিজস্ব চিত্র।

রামবিলাস সাউয়ের বাড়ির সামনে ভিড় পড়শিদের।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৫
Share: Save:

রাতে দোকান বন্ধ করার সময়ে এসে হুজ্জুতি শুরু করেছিল জনা কয়েক মদ্যপ যুবক। রেহাই পেতে দোকান লাগোয়া নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন বৃদ্ধ ব্যবসায়ী। কিন্তু তাতেও রক্ষা হল না। বাড়িতে ঢুকে ওই যুবকেরা বেধড়ক মারধর করায় মৃত্যু হল তাঁর। বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয় তাঁর স্ত্রীকেও।

শনিবার রাতে কালনার মহিষমর্দিনীতলায় মাথায় গুরুতর চোট পাওয়া ওই ব্যবসায়ী রামবিলাস সাউকে (৬৫) প্রথমে কালনা হাসপাতাল, পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার সেখান থেকে কলকাতার এক নার্সিংহোমে নিয়ে যান পরিজনেরা। রবিবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে রাকেশ সাউ কালনা থানায় ছ’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক।

রামবিলাস সাউ।— নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামবিলাসবাবু দীর্ঘদিন ধরে বস্তা সেলাইয়ের ব্যবসা করেন। নিজের দোতলা বাড়ির একতলায় তাঁর দোকান। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে তালা ঝোলাচ্ছিলেন রামবিলাসবাবু। সেই সময়ে জনা ছয়েক যুবক সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। পরিবারের অভিযোগ, মদ্যপ ওই যুবকেরা রামবিলাসবাবুর কাছে জল চায়। কিন্তু দোকান বন্ধ করে ফেলেছেন জানিয়ে তিনি সামনের টিউবওয়েল থেকে তাদের জল নিয়ে নিতে বলেন। আর তাতেই খেপে উঠে ওই যুবকেরা গোলমাল শুরু করে। তাদের হাত থেকে বাঁচতে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ঢুকে পড়েন বৃদ্ধ। কিন্তু যুবকেরা পিছু ছাড়েনি। তারাও বাড়িতে চড়াও হয়।

রামবিলাসবাবুর স্ত্রী গীতাদেবী জানান, ভিতরে ঢুকে মদ্যপ যুবকেরা ঢেকির কাঠ ও বাঁশ দিয়ে স্বামীকে পেটাতে শুরু করে। গোলমালের আওয়াজ শুনে তিনি ও তাঁর মেয়ে অর্চনা দোতলা থেকে নেমে আসেন। স্বামীকে বেধড়ক মারতে দেখে তিনি ছুটে বাঁচাতে যান। তখন তাঁকেও মারধর করা হয়। সঙ্গে যথেচ্ছ গালিগালাজ। চেঁচামেচি শুনে আশপাশ থেকে লোকজন আসার আগেই ওই যুবকেরা পালিয়ে যায়।

রামবিলাসবাবুর ছেলে রাকেশ গৃহশিক্ষকতা করেন। সেই সময়ে তিনি পড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘খবর পেয়ে বাড়িতে ফিরে দেখি, বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রথমে তাঁদের কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। বাবার অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাতেই সেখান থেকে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় আমরা পরে নাগেরবাজারের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। কিন্তু বাবাকে বাঁচানো যায়নি।’’ গীতাদেবী জানান, ওই যুবকদের মধ্যে হরি মল্লিক, লেলো লোহার ও নিমো বাগ নামে স্থানীয় তিন জন ছিল। বাকিরা অপরিচিত। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঢেকির কাঠের অংশ উদ্ধার করেছে।

গীতাদেবীকে রবিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন বাড়িতে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে তিনি বলেন, ‘‘টিউবওয়েল থেকে জল নিতে বলায় এ ভাবে কেউ কারও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে, ভাবতেই পারছি না!’’ রাকেশ বলেন, ‘‘বাবা নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন। কোনও সংঘাতে জড়াতেন না। তাঁকে যাঁরা এ ভাবে খুন করল তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

রামবিলাসবাবুর মৃত্যুর খবর আসার পরেই এ দিন সকাল থেকে প্রতিবেশীদের ভিড় তাঁর বাড়ির সামনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের নানা জায়গায় বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি চলছে। তার জেরেই অসামাজিক কাজকর্ম বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের কাছে এ দিন এ ব্যাপারে পদক্ষেপের আর্জিও জানান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE