গোলমালে আহত। —নিজস্ব চিত্র।
বোমা-গুলির পাল্টা তিন-ধনুক।
বন্ধের সকালে দফায় দফায় সিপিএম-তৃণমূলের এমনই লড়াই দেখল আউশগ্রাম। জখম হলেন দু’দলের ১৩ কর্মী। ছররা লেগে জখম হলেন এক সিপিএম কর্মী। বোমার টুকরো লেগে আহত হন এক পুলিশ আধিকারিকও। বিকেলেও গুসকরা লাগোয়া নওদায় তৃণমূলের এক নেতা ও দলীয় দফতর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে।
বেশ কিছু দিন ধরেই আউশগ্রামের নানা জায়গায় সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষ চলছিল। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও খাদ্য সুরক্ষার ফর্ম বিলি নিয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে দু’দলের ঝামেলা বাধে। বিডিও স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করায় দফতর ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে কৃষকসভার বিরুদ্ধে। এরপরে প্রতাপপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামেও মারধর, ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। প্রতাপপুরে সিপিএমের ‘ভয়ে’ তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা গ্রামছাড়া হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। সবমিলিয়ে বন্ধে সংঘর্ষের জমি যেন তৈরি হয়েই ছিল।
স্থানীয়দের দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বোমাবাজি হয়। বুধবার দোকানপাট খোলার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপর ‘চাপ’ তৈরি করে তৃণমূল। ভোরে ঘুম ভাঙেও বোমার আওয়াজে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিনের মতো বেশ কিছু দোকান খুলে ফেলেছিলেন তাঁরা, বাজারের পিছনে, আউশগ্রাম থানা যাওয়ার রাস্তাতেও হাট বসতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তখনই আচমকা বন্ধ সমর্থককারীরা তির-ধনুক হাতে রাস্তায় নেমে দোকান বন্ধ করতে বলে। গুসকরা-ইলামবাজার রোডে আউশগ্রাম থানার মোড় পর্যন্ত মিছিল জমে যায়। আসরে নেমে পড়ে আউশগ্রাম বাসস্টপে জড়ো হয়ে থাকা তৃণমূলের লোকেরাও। বন্ধ সমর্থককারীদের উদ্দেশে একের পর এক বোমা ছুড়তে থাকে তারা। পাল্টা চলে তির-ধনুকও। এরপরেই বোমার সঙ্গে ছররা চালাতে শুরু করে তৃণমূলের লোকজন। আউশগ্রাম থানা মোড়ে দাঁড়ানো পুলিশ তখন স্রেফ দাঁড়িয়েছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে বেশ কিছুটা দূরে গাছপালা ঘেরা একটি জায়গায় আশ্রয় নেয়। তবে হামলা থামে না। সিপিএমের অভিযোগ, আউশগ্রাম থানা লাগোয়া মোজাফ্ফর পল্লিতে সিপিএমের লোকাল কমিটির দফতরে হামলা চালায় তৃণমূল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সিপিএম কর্মী প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “তখন সাড়ে ন’টা। দফতরের সামনেই দাঁড়িয়েছিলাম। দেখি, প্রচুর তৃণমূল কর্মী থানার দিকের রাস্তা ধরে এসে দাঁড়াল। তারপর আমাদের দলীয় দফতরে ঢুকে বোমা ছোড়ে, ভাঙচুর চালায়। দফতরের বাইরে রাখা মোটরবাইক ও সাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারপর বোম মারতে মারতে চলে যায়।” পুলিশের হিসাবে, এ দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শতাধিক বোম পরেছে। ১০-১২ রাউন্ড গুলিও চলেছে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আউশগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার সুখেন্দু সেনগুপ্তর পেটে বোমার টুকরো ছিটকে লাগে। তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দুপুর গড়ালেও দেখা যায়, গুসকরা-ইলামববাজার রোডে অজস্র বোমার দাগ রয়েছে। রাস্তার দু’ধারে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। বর্ধমানের ডিএসপি গুলাম সারওয়ারের নেতৃত্বে প্রচুর পুলিশ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিছুটা দূরে সিপিএমের আউশগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটির দফতরে গিয়ে দেখা যায়, ৬টি সাইকেল ও একটি মোটরবাইক অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দফতরে ভাঙচুরের চিহ্নও স্পষ্ট। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে কুলুপ।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মজুমদারের অভিযোগ, “আমাদের আদিবাসী তরুণ কর্মীকে গুলি করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। বোমার আঘাতে আরও সাত জন জখম হয়েছেন। তৃণমূলের বর্বরোচিত আক্রমণ মানুষই শেষ করবেন।”
তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, তাঁদের দুই কর্মী চালকল থেকে কাজ সেরে ফেরার পথে আউশগ্রামের নওদা বাসস্টপে তাঁদের উপর হামলা চালায় সিপিএম। দু’জনেই গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি। পরে সিপিএমের ওই দুষ্কৃতীরা নওদা গ্রামের বাসিন্দা, গুসকরা ২ অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি দেবব্রত মণ্ডলের বাড়িতেও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। আউশগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি রহমান সালেক শেখ বলেন, “বন্ধের নামে সিপিএম সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy