বাড়ির দরজার কড়া নেড়ে কলেজ-ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালাল হামলাকারী। চিত্কার করে দরজাতেই লুটিয়ে পড়লেন ঝলসে যাওয়া তরুণী। বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান শহরের পাড়াপুকুরের জিএন মিত্র লেনে ঘটনাটি ঘটেছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর ডান চোখটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুখের ডান পাশ ও ডান পায়ের কিছুটা পুড়ে গিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন অংশে কখনও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, কখনও ব্যর্থ প্রেমের ‘বদলা’ নিতে মহিলাদের উপরে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনা লেগেই রয়েছে। ২০১৩ সালের ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসিড বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পরে বছর ঘুরলেও পরিস্থিতি যে বিশেষ বদলায়নি বর্ধমানের ঘটনা তারই প্রমাণ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯ বছরের ওই মেয়েটি বর্ধমান রাজ কলেজের ভূগোল অনার্সের দ্বিতীয় বষের্র ছাত্রী। তাঁর মা গলসির একটি স্কুলের শিক্ষিকা। বাবা অনেকদিন ধরেই তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। আর দাদা কর্মসূত্রে কলকাতার বাসিন্দা। বর্ধমান থানায় দায়ের করা অভিযোগে ওই ছাত্রীর মা জানিয়েছেন, এ দিন তিনি স্কুলে বেরনোর পরে বাড়িতে একাই ছিলেন মেয়ে। সকালের দিকে একটি ব্যাঙ্কের তরফ থেকে এক যুবক তাঁদের বাড়ির দরজায় এসে কলিং বেল বাজালে ছাত্রীটি দরজা খুলে দেন। কিছু কাগজে সই করিয়ে নিয়ে চলে যান ওই যুবক। কিছুক্ষণ পরে ফের কলিং বেল বাজে। ছাত্রীটি দরজা খুলতেই তার মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়। তরুণীর মায়ের দাবি, মেয়ের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন, হামলাকারীর মুখ হেলমেটে ঢাকা ছিল। ফলে, তিনি তাঁকে চিনতে পারেননি।
তবে তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, কিছু দিন আগে এক যুবক ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ছাত্রীটি তাতে রাজি না হওয়াতেই এই হামলা। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাও বলেন, “ওই যুবককে চিহ্নিত করেছি। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। ওই যুবককে ধরা গেলেই অ্যাসিড ছোড়ার কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।” তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ওই যুবকের নাম জানাতে চায়নি।
গত ১৭ জুন বর্ধমান জেলাতেই হয়েছিল আর এক অ্যাসিড-হানা। আসানসোলের চিত্তরঞ্জন স্টেশনে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিবাহবিচ্ছিন্না এক মহিলাকে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ ওঠে নদিয়ার রানাঘাটের যুবক রিপন দাসের বিরুদ্ধে। তবে এখনও খোঁজ মেলেনি রিপনের। পশ্চিম মেদিনীপুরের পাঁশকুড়াতেও ৩ জুলাই বিয়ে করতে নারাজ ছাত্রীকে তাক করে অ্যাসিড ছোড়া হয়। তবে জানালা দিয়ে ছোড়া অ্যাসিডে ওই তরুণীর সঙ্গে ঝলসে যায় তার মা এবং বোনও।
এ দিন দুপুরে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি থেকে বেরোনোর দু’টি দরজা রয়েছে। একটি গ্যারাজের দরজা। তার পাশেই রয়েছে আরেকটি ছোট দরজা। কলিংবেলের শব্দ শুনে ওই দরজা খুলেই বেরিয়েছিলেন ছাত্রীটি। দরজার এক দিকে অ্যাসিডে পোড়ার দাগ রয়েছে। পাশেই পড়ে রয়েছে তরুণীর লাল রঙের ওড়নার পোড়া অংশ। পড়শি কাজল দাস ও মহম্মদ সবুর বলেন, “আচমকা ওই ছাত্রীর চিত্কার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি, ওর মুখ ঝলসে গিয়েছে, হাতও পুড়েছে। তবে আমরা যাওয়ার আগেই হামলাকারী পালায়।” তাঁদের আতঙ্ক, “সাতসকালে বর্ধমান শহরে এ সব কী ঘটছে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy