সেচখালের পাড় জবরদখলের জেরে সমস্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ। ছবি: উদিত সিংহ।
শহরের দু’পাশে রয়েছে দু’টি সেচখাল। সেই খালের উপরে ভরসা করে আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছিল অনেক দিন আগে। কিন্তু সেই কাজ রয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমেই। ফলে, নিকাশি নিয়ে সমস্যা মেটেনি মেমারি শহরে। গত বর্ষাতেও শহরের বেশির ভাগ ওয়ার্ডের রাস্তা চলে গিয়েছিল জলের তলায়।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি-র দু’টি সেচখালকে কাজে লাগিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। কিন্তু, এখনও শহরের নোংরা জল মান্ধাতার আমলে তৈরি সরু নর্দমা দিয়ে বয়ে গিয়ে মিশছে ওই সব সেচখালে। যার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ভুক্তভোগী হন বাসিন্দারা। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে সেচখালের পাড় দখল করে তৈরি হওয়া বসতি। শহরবাসীর আশঙ্কা, একে তো নিকাশির হাল ফেরাতে হিমসিম খাচ্ছে পুরসভা, তার উপরে এ ভাবে জবরদখল শুরু হলে গোটা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে।
শহর ঢোকার মুখে মেমারি-মালডাঙা রোডের উপরে সেচখালের সেতুতে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে, সার দিয়ে তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে অস্থায়ী ঘরের কাঠামো। পরস্পরের গা ঘেঁষে থাকা ওই ঘরগুলির উপরে টিনের ছাউনি দেওয়ার কাজ চলছে। আবার কয়েকটিতে ইটের গাঁথনি দিয়ে শেষ মুহুর্তের কাজ করছেন নির্মাণকর্মীরা। কিছু-কিছু ঘরে মানুষজন থাকতেও শুরু করেছেন। নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির কর্ত্রী আবিদা বিবির দাবি, ‘‘পার্টির লোকেরা আমাদের এখানে বসিয়েছেন। তাঁরাই মাপজোক করে জায়গা ঠিক করে দিয়েছেন।’’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েক জন বলেন, ‘‘এ জন্য যার কাছে যেমন পেয়েছে, তেমন টাকা নিয়েছে।’’ তাঁদের দাবি, ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে পার্টির লোকেরা। স্বপন দত্ত নামে এক জন আবার বলেন, ‘‘আমি এক নেতার কাছে থাকি। আমাকে কোনও টাকা দিতে হয়নি।’’
সেচখালের জায়গা দখল করে বসতি গড়ে তোলার পিছনে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল, এমনকী পুরসভার কিছু লোকজনের মদতের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেমারির উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত সাফ বলেন, ‘‘ওঁরা গরিব মানুষ। অনেকে খুব কষ্ট করে দীর্ঘদিন শহরে বাড়ি ভাড়া দিয়ে রয়েছেন। তাঁদের ফাঁকা জায়গায় বসানো হয়েছে। সেচ দফতরের যখন দরকার হবে, তখন নিয়ে নেবে।’’ উল্টে তিনি দাবি করেন, এখনকার বিরোধী দলও আগে ওই সেচখালের ধারে অনেক লোক বসিয়েছিল। কিন্তু এ ভাবে জবরদখলের জেরে শহরে যে নিকাশির সমস্যা হচ্ছে, সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন পুরকর্তারা।
ওই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন সেলিম মোল্লা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বছরই শহরের মানুষের নিকাশির হাল নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছ। তার উপরে এ ভাবে সেচখালের ধারে জবরদখলে মদত দিয়ে পুরসভা নিকাশি ব্যবস্থাই বেহাল করে তুলছে।’’ বাসিন্দারা জানান, আগের পুরবোর্ড নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল। ২০১০ সালে বোর্ডে ক্ষমতার হাতবদলের পরেও নিকাশির উন্নতির জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বড়-বড় নর্দমা তৈরি, গাঙ্গুর নদীর সংস্কার হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, ওই সব নর্দমা বা নদী সংস্কার উপযুক্ত পদ্ধতিতে হয়নি। শাসক পক্ষের প্রাক্তন কাউন্সিলর স্বপন ঘোষালেরও অভিযোগ, ‘‘তার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই শহরের একটা বড় অংশ জলে ডুবে থাকে। নর্দমা হলেও জল বেরোতে পারে না। পলি জমে গিয়েছে। জমা জলে মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে।’’
এই পরিস্থিতি সরব হয়েছে শহরের বিরোধী দলের নেতারা। কংগ্রেসের শ্যামল সরকার থেকে সিপিএমের সনৎ সিংহ, সকলেরই অভিযোগ, উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা তো দূর, পুরনো ব্যবস্থাটাই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্তের অবশ্য আশ্বাস, বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিকল্পনা করে নিকাশির হাল ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy