চলছে মহড়া। নিজস্ব চিত্র।
আর ক’দিন পরেই পুজো। পাড়ায়-পাড়ায় মণ্ডপ তৈরির ব্যস্ততা তুঙ্গে। কুমোর পাড়ায় প্রতিমা তৈরীর কাজ চলছে জোরকদমে। কচিকাঁচারা পড়া শেষ হলেই বড়দের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ছে নতুন জামা কিনতে।
কিন্তু দুর্গাপুরের নন-কোম্পানি এলাকার ছবিটা বেশ আলাদা। পাড়ার প্রমিলা বাহিনী এখন তুমুল ব্যস্ত ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ পালার মহড়ায়। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে খুদেরাও। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের চতুরঙ্গ পুজো ময়দানে পরিবেশিত হবে পালা। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
শুরুটা পাঁচ বছর আগে।
এই মহিলাদের কেউ অবসরপ্রাপ্ত স্কুল-শিক্ষিকা, কেউ ব্যবসা করেন। কেউ নাচ শেখান, কেউ গান। কেউ আবার শুধুই গৃহবধু। বয়স ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। পুজোর আগে তিন মাস ধরে সেই তাঁরাই প্রতি দিন এক জায়গায় জড়ো হন পালার মহড়ায়। পড়াশোনা শেষ হলে মা-বাবার হাত ধরে নতুন জামা কিনতে যাওয়ার বদলে খুদেরাও চলে আসছে । তাদের কথায়, ‘‘জামা তো মা-বাবা এমনিই কিনে আনবে। কিন্তু এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ তো সহজে মেলে না!’’
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রত্না দত্ত পাঁচ বছর আগে মহিলাদের জন্য ‘সদিচ্ছা সাংস্কৃতিক মহিলা মঞ্চ’ গড়ে তুলেছিলেন। রোজকার ‘থোড় বড়ি খাড়া-খাড়া বড়ি থোড়’ জীবন থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার তাগিদে পাড়ার মহিলারা মঞ্চে সামিল হন। সদস্যার সংখ্যা ১৭। মাসে এক বার করে বৈঠকি আড্ডা হয়। বিষয় মতো সাজানো হয় অনুষ্ঠান। মহালয়ার আগে প্রস্তাব ওঠে, ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী পালা’ মঞ্চস্থ করলে কেমন হয়? যা ভাবা তা-ই কাজ। হাতে আর বেশি সময় ছিল না। সবাই মিলে নেমে পড়েন নতুন উদ্যোগে। টানা মহড়া। খুব প্রশংসিত হয় মহিলাদের এমন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তার পর থেকেই প্রতি বছর তাঁরা অনুষ্ঠানটি পরিবেশন করে চলেছেন চতুরঙ্গ পুজো ময়দানে ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়। এ ছাড়া ভারতী, এমএএমসি প্রভৃতি এলাকাতেও তাঁরা এই পালা মঞ্চস্থ করেছেন বলে জানান মহিলা মঞ্চের সভাপতি রত্নাদেবী।
এ বারও ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় পালা মঞ্চস্থ হবে চতুরঙ্গ পুজো ময়দানে। পুজো কমিটির সেক্রেটারি পরিমল অগস্তি জানিয়েছেন, মহিলাদের এই পরিবেশনা পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। এ বারের পালায় ভাষ্যপাঠ করবেন রত্নাদেবী ও রীতা রাহা। নৃত্যে থাকবেন সোমা চাকমা, শম্পা চক্রবর্তী, মিঠু চক্রবর্তীরা। গানে শর্মিষ্ঠা ঘোষ, বীথি রায়, মৌসুমী ঘোষ, মণীষা দত্ত, কাকলি লাহিড়ি। এ ছাড়া দেবীর সন্তান-সন্ততির ভূমিকায় রয়েছে পাড়ার খুদে বৃষ্টি দত্ত রায়, মাহি, সৌভিক রায়, দেবমাল্য ঘোষ। রত্নাদেবী বলেন, ‘‘বরাবর আমাদের উৎসাহ দিয়ে আসছেন এমএএমসি এলাকার বাসিন্দা শংকরলাল চট্টোপাধ্যায়।’’ শংকরলালবাবু বলেন, ‘‘কাজের ফাঁকে ফাঁকে মহিলারা যে ভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy