Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সহায় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত, ব্যাঙ্ককে টাকা ফেরতের নির্দেশ

ভুয়ো চেক দিয়ে এক দম্পতির অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ১০ হাজার তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে টাকা ফেরত চেয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হুগলির সিয়াখোল শাখায় বারবার আবেদন করেন তাঁরা। কিন্তু ব্যাঙ্কের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত বর্ধমানের কোরার এলাকার ওই দম্পতি বর্ধমান ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৩
Share: Save:

ভুয়ো চেক দিয়ে এক দম্পতির অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ১০ হাজার তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে টাকা ফেরত চেয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হুগলির সিয়াখোল শাখায় বারবার আবেদন করেন তাঁরা। কিন্তু ব্যাঙ্কের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত বর্ধমানের কোরার এলাকার ওই দম্পতি বর্ধমান ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার ওই আদালতের বিচারক অশোক কুমার মন্ড ও শিল্পী মজুমদার ওই টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। পাশাপাশি মানসিক হয়রানি করার জন্য ৭৫ হাজার টাকা ও মামলার খরচ চালানোর জন্য আরও ৫ হাজার টাকা রায়ের ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দেওয়ার জন্য বিচারকরা নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারকের রায়ে জানা যায়, বর্ধমানের ওই দম্পতি বিশ্বনাথ মণ্ডল ও সবিতা মণ্ডল ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলেন। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার ১৬৮ টাকা ১৫ পয়সা ছিল। ওই দিনই অসীম সাউ নামে এক ব্যক্তিকে ১২ হাজার টাকার চেক দেন ওই দম্পতি ( চেক নম্বর: ৫৩২৫১৪)। সেই হিসেব মতো ওই দম্পতির অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ১৬৮ টাকা ১৫ পয়সা থাকার কথা। কিন্তু ২৮ জুলাই চেকবই আপডেট করতে গিয়ে ওই দম্পতি জানতে পারেন, হাবিবুল ইসলাম মল্লিক নামে এক ব্যক্তি তাঁদের অ্যাকাউন্ট ১৪ জুলাই থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন ( চেক নম্বর: ৫৩২৫১৬)। ওই দিনই তাঁরা ব্যাঙ্কে লিখিত ভাবে জানান, ভুয়ো চেক দিয়ে ওই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ, ওই চেকটি তাঁদের কাছেই রয়েছে। সেই প্রমাণ দিয়ে তাঁরা ব্যাঙ্কের প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরে চিঠি দেন। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত তো দূরের কথা কোনও জবাবই দেয়নি।

ব্যাঙ্কের উপর বিরক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বর্ধমান ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। বিচারক ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির হয়ে কিংবা ডাক মারফত কোনও রিপোর্ট আদালতে জমা দেননি। পরেও বারবার সময় দেওয়া হলেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোনও রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়নি। সওয়াল জবাবের দিন নির্দিষ্ট হওয়ার পরে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সময় চান। কিন্তু আদালত সেই সময় দিতে নিমরাজি হয়। বরং ২৮ জানুয়ারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শোনা হবে বলে বিচারক জানিয়ে দেন। কিন্তু ওই দিন দুপুরেই বেলা আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

বিচারকেরা তাঁদের রায়ে জানিয়েছেন, অভিযোগকারীদের পাস বই ও চেক বই খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে ওই চেক (নম্বর: ৫৩২৫১৬) তো রয়েছেই, তার আগের চেকটিও অক্ষত রয়ছে। সে জন্য ব্যাঙ্ক ওই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। ওই টাকা ৪৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতেও বলে আদালত। এ ছাড়াও মানসিক হয়রানি ও মামলা চালানোরও খরচ দেওয়ার নির্দেশ হয়। অভিযোগকারীর আইনজীবী তমাল দে বলেন, “গ্রাহকদের কষ্টার্জিত টাকা সুরক্ষার বিষয়টি দেখার কথা ব্যাঙ্কের। অথচ ব্যাঙ্ক সুরক্ষা তো দূরের কথা গ্রাহককে এ ক্ষেত্রে হয়রানি করেছে। সব কিছু বিচার করে আদালত এই রায় দিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE