Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে জল-বিদ্যুৎ ছাড়াই

ঘড়িতে সময় তখন দুপুর ১টা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢোকার মুখে দেখা গেল, ডাক্তার বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর তো আরও ঘণ্টাখানেক থাকার কথা? প্রশ্ন শুনে ডাক্তার হেসে বললেন, “পাল্স পোলিও নিয়ে একটা বৈঠক আছে। তাই একটু তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছি।” বেরোনোর আগে অবশ্য যতটা সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করে গেলেন, যৎসামান্য এই পরিকাঠামোর মধ্যেও কী ভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভাল পরিষেবা দেওয়ার।

মরিচকোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

মরিচকোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

ঘড়িতে সময় তখন দুপুর ১টা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢোকার মুখে দেখা গেল, ডাক্তার বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর তো আরও ঘণ্টাখানেক থাকার কথা? প্রশ্ন শুনে ডাক্তার হেসে বললেন, “পাল্স পোলিও নিয়ে একটা বৈঠক আছে। তাই একটু তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছি।” বেরোনোর আগে অবশ্য যতটা সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করে গেলেন, যৎসামান্য এই পরিকাঠামোর মধ্যেও কী ভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভাল পরিষেবা দেওয়ার।

সম্প্রতি এই চিত্র দেখা গেল আসানসোল পুরসভার এক প্রান্তে মরিচকোটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ১৯৭৮ সালে তৈরি হয়েছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এথোড়া, মরিচকোটা, মেলেকোলা, চন্দ্রচুর, রঘুনাথবাটী, গাড়ুই, কন্যাপুর-সহ আশপাশের প্রায় ২২ হাজার মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য তৈরি এই কেন্দ্রটিকে দেখলে এখন অবশ্য পোড়োবাড়ি ছাড়া কিছু মনে হয় না। ঝোপজঙ্গলে ঘেরা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে, ছাদ থেকে ভেঙে পড়েছে চাঙড়। দরজা-জানালাও ভাঙা। কর্মীরা জানালেন, বর্ষাকালে ছাদ চুঁইয়ে অঝোরে জল পড়ে। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ নেই। এমনকী শৌচাগারের ন্যূনতম বন্দোবস্তও নেই।

মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল শহরে যে সব বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র আছে, তার বেশ কয়েকটিতে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই কেন্দ্রগুলিতে শৌচাগার তৈরি করা না হলে তাদের অনুপতিপত্র নবীকরণ করা হবে না। মরিচকোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মহিলা কর্মীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তোলেন, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই, সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না কেন।

চিকিৎসক স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, যথাসাধ্য ভাল চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু চিকিৎসা কেন্দ্রে কিছু ক্ষণ থাকার পরেই বোঝা যায়, কী হাল পরিষেবার। ডাক্তার চলে যাওয়ার পরে ওষুধ নিতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আন্না পাল ও রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ। তাঁদের ‘নিরাশ’ করেননি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। রোগের উপসর্গ জেনে নিয়ে ওই কর্মী তাঁদের হাতে কয়েকটি ট্যাবলেট ধরিয়ে দিলেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দেওয়া কী ঠিক হল? ওই কর্মীর সাফ জবাব, “তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা। বুঝতে পারি কার কী হয়েছে। ডাক্তার নেই বলে ওদের ফিরিয়ে দেব কী করে?” এলাকাবাসী জানালেন, তিন বছর আগে পর্যন্ত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোজ ডাক্তার আসতেন। এখন আসেন সপ্তাহে মাত্র দু’দিন। চিকিতসক স্বাতীদেবী জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তিনি এখানে সপ্তাহে দু’দিন আসেন।

আরসিএইচ কেন্দ্র। ছবি: শৈলেন সরকার।

শহরের অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির তুলনায় অনেকটা ঝকঝকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ধাদকা কেন্দ্রটি। এলাকার অনেকের মতে, এই কেন্দ্রটি আসানসোলে মডেল হতে পারে। পরিকাঠামো নিয়ে খুশি এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁরা জানান, সপ্তাহে সব দিনই ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়। এখানকার চিকিৎসক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, সম্প্রতি সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করে কেন্দ্রটি নতুন করে সাজানো হয়েছে। তার পরে চিকিৎসার জন্য আশপাশের বাসিন্দাদের আনাগোনাও বেড়েছে। শিবাশিসবাবুর দাবি, বছরে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের চিকিৎসা হয় এখানে। তবে এখানে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থার আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ছাড়াও আসানসোল পুর এলাকার প্রসূতি ও শিশুদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানে তৈরি হয়েছিল আলাদা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালের অগস্টে চালু হয় এই ‘রিপ্রোডাকটিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ’ (আরসিএইচ) প্রকল্প। ১৫টি শয্যা ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বিশিষ্ট দু’টি হাসপাতাল তৈরি হয়। এ ছাড়াও গড়া হয় ৯৭টি সাব-সেন্টার। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রসবের ব্যবস্থা নেই। অনেকটা পথ উজিয়ে পৌঁছতে হয় আসানসোল হাসপাতালে। সে জন্য শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকার অন্তঃসত্ত্বা ও শিশুদের সুসংহত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এই আরসিএইচ প্রকল্প চালু হয়। কিন্তু ডাক্তার-কর্মীর অভাব-সহ নানা সমস্যায় পড়ে সেই প্রকল্পও এখন রীতিমতো খুঁড়িয়ে চলছে।

(চলবে)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর আসানসোল’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE