Advertisement
০৫ মে ২০২৪

‘স্মার্ট ১০০’ শহরের তালিকায় দুর্গাপুরও

রাজ্যের ১৫ লক্ষ মানুষ এবার ‘স্মার্ট সিটি’-র বাসিন্দা হতে চলেছেন। নিউ টাউন, বিধাননগর, দুর্গাপুর ও হলদিয়া—‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পে এই চারটি শহরের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। দেশের ১০০টি শহরকে ‘স্মার্ট সিটি’-তে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিশ্ব মানের পরিকাঠামো, পার্কিং-জঞ্জাল সাফাই-নিকাশি-ট্রাফিক-জল সরবরাহর মতো নাগরিক সমস্যার অত্যাধুনিক সমাধান, ই-পরিষেবা এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে নাগরিক পরিষেবা—সব মিলিয়ে শহরগুলোকে আরও উন্নত মানের জীবনযাত্রা, এই স্বপ্নের কথাই শুনিয়েছিলেন মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০১:১২
Share: Save:

রাজ্যের ১৫ লক্ষ মানুষ এবার ‘স্মার্ট সিটি’-র বাসিন্দা হতে চলেছেন। নিউ টাউন, বিধাননগর, দুর্গাপুর ও হলদিয়া—‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পে এই চারটি শহরের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল।

দেশের ১০০টি শহরকে ‘স্মার্ট সিটি’-তে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিশ্ব মানের পরিকাঠামো, পার্কিং-জঞ্জাল সাফাই-নিকাশি-ট্রাফিক-জল সরবরাহর মতো নাগরিক সমস্যার অত্যাধুনিক সমাধান, ই-পরিষেবা এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে নাগরিক পরিষেবা—সব মিলিয়ে শহরগুলোকে আরও উন্নত মানের জীবনযাত্রা, এই স্বপ্নের কথাই শুনিয়েছিলেন মোদী। আজ কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্পের জন্য ৯৮টি শহরের নাম ঘোষণা করেছে। বাকি দু’টি নাম পরে ঘোষণা হবে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ওই চারটি শহর রয়েছে। যারা ‘স্মার্ট সিটি’ হওয়ার দৌড়ে রাজ্যেরই অন্যান্য শহর ও পুরসভা এলাকাগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।

পাঁচ বছরের এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম বছরে প্রতি শহরের জন্য ২০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করবে। বাকি চার বছরে প্রতি বছর প্রতিটি শহরে ১০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ হবে। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে কেন্দ্র ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করবে। রাজ্য সরকার ও পুরসভাগুলি একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। যার অর্থ সব মিলিয়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।’’ এর সঙ্গে যোগ হবে বেসরকারি বিনিয়োগ। অত্যাধুনিক পরিষেবার জন্য অবশ্য ‘ফেলো কড়ি, মাখো তেল’-এর নীতিই প্রযোজ্য হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রী।

কী থাকবে ‘স্মার্ট সিটি’-তে?

কেন্দ্রের বক্তব্য, স্মার্ট সিটি-র কোনও বাঁধাধরা সংজ্ঞা নেই। ইউরোপে স্মার্ট সিটি-র যে চেহারা, ভারতে যে তেমনটাই হবে তা নয়। আবার ভারতেও একেকটি স্মার্ট সিটি-র চেহারা একেকরকম হতে পারে। তবে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, সুষ্ঠু জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা, বহুমুখী গণ পরিবহণ ব্যবস্থা, গরিবদের জন্য সস্তায় আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো ও ডিডিটাল সংযোগ, ই-গভর্ন্যান্স, পরিবেশ-বন্ধু প্রযুক্তি, মহিলা-শিশু-বৃদ্ধদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো দশটি মূল পরিকাঠামো থাকতেই হবে।

এর সঙ্গে বাড়তি কী কী পরিকাঠামো থাকবে, তা স্থানীয় পুরসভাগুলিই ঠিক করবে। তা সে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত পার্কিং ব্যবস্থা হতে পারে আবার জলের পাইপে কোথায় ফুটো তৈরি হয়েছে, তা তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে চিহ্নিত করে ফেলার ব্যবস্থা হতে পারে। জঞ্জাল থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে আবার তা শহরেই ব্যবহার করার মতো পরিবেশ-বন্ধু ব্যবস্থাও তার মধ্যে থাকতে পারে।

প্রথম বছরে ২০টি শহরকে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে। কীভাবে বাছাই করা হবে এই ২০টি শহরকে? স্মার্ট সিটি-র পরিকল্পনা তৈরির জন্যই আগামী দু’দিনের মধ্যে প্রতিটি বাছাই করা শহরের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। এরপর সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতখানি বিশ্বাসযোগ্য, তার আর্থিক ও পরিবেশগত প্রভাব, খরচের কার্যকারিতা, নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে—এই সব কিছু খতিয়ে দেখে ২০টি শহরকে বেছে নেওয়া হবে।

নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে ১০০টি শহরের নাম ঠিক করার ক্ষেত্রে অবশ্য কেন্দ্রের বিশেষ ভূমিকা ছিল না। রাজ্যগুলির জনসংখ্যা ও শহরের সংখ্যার ভিত্তিতে কোন রাজ্যে ক’টি স্মার্ট সিটি হবে, তা ঠিক হয়। এরপর রাজ্যগুলিই কেন্দ্রের কাছে নাম প্রস্তাব করে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যেমন মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই কমিটি পুরসভাগুলিকে তাদের বর্তমান পরিকাঠামো ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা জমা দিতে বলে। সেই অনুযায়ী প্রতিটি পুরসভার জন্য নম্বর বরাদ্দ হয়। তার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ ওই চারটি শহরের নামই প্রস্তাব করেছিল।

রাজ্যের চারটি প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটি-র মধ্যে নিউটাউনের জনসংখ্যা ১ লক্ষেরও কম। ৩৬ হাজারের কিছু বেশি। বিধানগর ও দুর্গাপুরের জনসংখ্যা ৫ থেকে ১০ লক্ষের মধ্যে। হলদিয়ার ৩ লক্ষেরও কম। ৯৮টি স্মার্ট সিটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। দেশের মোট শহুরে বাসিন্দার প্রায় ৩৫ শতাংশ এই শহরগুলিতে বাস করেন। এর মধ্যে ২৪টিই রাজধানী শহর। উত্তরপ্রদেশে সবথেকে বেশি, ১৩টি স্মার্ট সিটি হবে। যার মধ্যে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীও। কিন্তু সনিয়া গাঁধীর রায়বরেলীর নাম প্রস্তাবের তালিকায় থাকলেও চূড়ান্ত তালিকায় নেই কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেঙ্কাইয়ার জবাব, বিচারে রায়বরেলী ও মীরাট একই নম্বর পেয়েছে। একইভাবে জম্মু ও শ্রীনগরও একই নম্বর পাওয়ায় উত্তরপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরের একটি করে রাজ্যের নাম চূড়ান্ত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE