বন্ধ কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা ফের খোলার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই আশ্বাসবাণীতে বিশেষ ভরসা নেই কারখানার প্রাক্তন কর্মী থেকে এলাকার বাসিন্দাদের।
হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কারখানা (এইচএফসিএল) আদৌ আর খুলবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ তপন সেনও। তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল, সার কারখানা ফের চালু করা হবে। কারখানা চালু হবে না এ কথা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বলা মুশকিল। তবে কারখানা খোলার কোনও উদ্যোগ নজরে আসছে না।”
১৯৬৫ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও সার মন্ত্রকের অধীনে দুর্গাপুর সার কারখানার শিলান্যাস করেন। প্রায় ছ’শো একর এলাকায় কারখানা এবং চারশো একর জায়গায় কর্মীদের জন্য টাউনশিপ গড়ে ওঠে। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৭৩ সালে। পরের বছর থেকে ইউরিয়া সার উত্পাদন শুরু হয়। নয়ের দশকের গোড়া থেকে কারখানা রুগ্ণ হতে শুরু করে। কাঁচামাল হিসেবে তখন ন্যাপথা ব্যবহার করা হত। ন্যাপথা ব্যবহার করে ইউরিয়া উত্পাদনে খরচ বেশি পড়ায় বিদেশ থেকে কম দামে ইউরিয়া আমদানি শুরু করে কেন্দ্র। ১৯৯৮ সালে উত্পাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা চলে যায় বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন (বিআইএফআর)-এর হাতে। ২০০৩ সালে কারখানার ১১২৫ জন শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেন। পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কারখানা।
তার পর থেকেই ফের কারখানা চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে সিপিএম। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে অর্থনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি দুর্গাপুরে এইএফসিএল-এর পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে সায় দেয়। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তত্কালীন সার প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনা সংসদে জানান, কারখানা পুনরায় চালুর উদ্দেশ্যে বিআইএফআর-এর কাছে ড্রাফট রিহ্যাবিলিটেশন স্কিম (ডিআরএস) জমা দেওয়া হয়েছে। তারা তা যাচাই করে দেখার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত ২৭ নভেম্বর বিআইএফআর সর্বশেষ ঘোষণায় জানায়, চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও আসেনি।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ফের সরব হয় সিপিএম। গত ১৮ জুলাই সাংসদ তপনবাবু রাজ্যসভায় নতুন সার প্রতিমন্ত্রী নিহাল চাঁদকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানোর আর্জি জানান। মন্ত্রী জানান, দেশে এমন আটটি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি সরকারি উদ্যোগে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচটি খোলার জন্য নিলাম করে বেসরকারি উদ্যোগ চাওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে দুর্গাপুরের কারখানাটি। সরকারি উদ্যোগ কিছুটা এগোনোর পরেই বেসরকারি উদ্যোগে কারখানা খোলার বিষয়টি হাতে নেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত না থাকায় এবং কয়লাখনি সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় দুর্গাপুরের কারখানাটিকে কয়লাভিত্তিক সার কারখানা হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে কেন্দ্রীয় সার প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দেন তপনবাবু।
কারখানার প্রাক্তন কর্মীরা জানান, কারখানা নতুন করে খোলার আশা তাঁরা আর করেন না। কারণ, দীর্ঘদিনের অব্যবহারে কারখানার পরিকাঠামো কার্যত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তপনবাবুও বলেন, “বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানা খোলার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের কোনও উচ্চবাচ্য নেই। কাজেই কিছু আশা করা মুশকিল।” তবে ফের কেন্দ্রী সরকারের কাছে দরবার করবেন বলে তাঁর আশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy