Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হঠাত্‌ ধর্মঘটে বাসকর্মীরা, দুর্ভোগ দিনভর

আগাম না জানিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত বাসকর্মী সংগঠন ধর্মঘটে নামায় নাকাল হলেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলে আসানসোলে মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেন ওই কর্মীরা। মহকুমা জুড়ে হাজার-হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েন। মহকুমা প্রশাসন ও বাস মালিকেরা জানান, তাঁদের আগে থেকে কিছু না জানিয়েই এমন ধর্মঘট করা হয়েছে। এ ভাবে ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছে অন্য পরিবহণ কর্মী সংগঠনগুলিও।

আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে মিনিবাস।

আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে মিনিবাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৬
Share: Save:

আগাম না জানিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত বাসকর্মী সংগঠন ধর্মঘটে নামায় নাকাল হলেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলে আসানসোলে মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেন ওই কর্মীরা। মহকুমা জুড়ে হাজার-হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েন। মহকুমা প্রশাসন ও বাস মালিকেরা জানান, তাঁদের আগে থেকে কিছু না জানিয়েই এমন ধর্মঘট করা হয়েছে। এ ভাবে ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছে অন্য পরিবহণ কর্মী সংগঠনগুলিও।

আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠন ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর ডাকে এ দিন ধর্মঘট হয়। সংগঠনের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, “বাসকর্মীদের বেতন অনেক কম। তাঁদের সংসার চলছে না। আমরা মালিকপক্ষকে বহু বার বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। দু’মাস আগেও চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই কর্মবিরতি শুরু করেছি।” তাঁদের সংগঠন ধর্মঘট শুরু করায় মঙ্গলবার ভোর থেকে বাসকর্মীরা মিনিবাস নিয়ে রাস্তায় নামেননি। আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে সার বেঁধে মিনিবাস দাঁড়িয়ে থাকে।

বাস ধরতে এসে বিপাকে পড়েন শহরবাসী। ধর্মঘটের কথা তাঁদের জানা ছিল না। ফলে, কাজে বেরিয়ে বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। পরে অনেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হন। জরুরি কাজ হাতে নিয়ে বেরোনো যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে অন্য উপায়ের খোঁজ শুরু করেন। সুযোগ বুঝে চড়া ভাড়া হাঁকেন অটোচালকেরা। আসানসোল, কুলটি, বরাকর, নিয়ামতপুর, বার্নপুর, রূপনারায়ণপুর, বারাবনি সর্বত্র একই ছবি দেখা গিয়েছে।

দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন ধরে আসানসোলে পৌঁছনো মানুষজনও মুশকিলে পড়েন। এ দিন সকালে সিটি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, পুরুলিয়া থেকে সপরিবারে শহরে ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রমাপতি অধুর্য্য। তিনি বলেন, “জানতামই না যে এখানে বাস ধর্মঘট। কী ভাবে বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না!” নিয়ামতপুরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন সরকারি কর্মী স্নেহাশিস দাস। তিনি বলেন, “কী যন্ত্রণা বলুন তো! আচমকা এ ভাবে কেউ বাস বন্ধ করে? আমাকে চিত্তরঞ্জন যেতেই হবে। অটো ইচ্ছে মতো ভাড়া চাইছে। কিন্তু উপায় নেই, সে সব মেনে নিয়েই যেতে হবে।” যাত্রীরা অভিযোগ করেন, অনেক অটো চালক এ দিন অন্য দিনের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া হেঁকেছেন।

আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “বাস বন্ধ রাখার বিষয়ে আমাকে কোনও পক্ষ আগাম কিছু জানায়নি।” এর ফলে শহরবাসী যে বিপাকে পড়েছেন, সে কথা মেনে নিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন। ধর্মঘটের কথা জানানো হয়নি মিনিবাস মালিকদেরও। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “আমরা বেশ অবাক হয়েছি। দু’মাস আগে কর্মী সংগঠনের তরফে বেতন বাড়ানোর যে দাবি জানানো হয়েছিল, আমরা সে নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম। কিন্তু এর পরে আর কোনও কথা হয়নি। আচমকা এই ধর্মঘটে কষ্ট পেলেন সাধারণ মানুষ।” সুদীপবাবুর দাবি, যে কোনও সমস্যা তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে চান। সেই পথও খোলা আছে।


অটোর জন্য হুড়োহুড়ি।

এ ভাবে ধর্মঘটের বিরোধিতা করে মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করে চিঠি দিয়েছে আইএনটিইউসি। সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “এই লাগামছাড়া আন্দোলনে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন।” সিটু নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকদের বেতন বাড়ুক আমরাও চাই। কিন্তু, সব আন্দোলনের একটা পদ্ধতি আছে। এই ধরনের ধর্মঘটে শহরবাসী বিপাকে পড়লেন।” বিজেপি-র আসানসোল জেলার সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর দাবি, “ওরা আসলে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। তাই এ ভাবে লাগামছাড়া আন্দোলন করছেন।”

যাত্রীদের দুর্ভোগে অবশ্য হেলদোল নেই ধর্মঘট ডাকা বাসকর্মীদের। এ দিন যে আচমকা ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, সে কথা মেনে নিয়ে ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া দাবি করেন, “আমরা তো দু’মাস ধরে মালিকদের বেতন বাড়াতে বলছি।” তবে এই পরিবহণ কর্মী ইউনিয়ন যে সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের কাছে ধর্মঘটের ব্যাপারে অনুমতি নেননি, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” তবে তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন, তা ঠিক। কিন্তু যতদূর জানি, ওঁরা মিনিবাস মালিকদের ধর্মঘটের কথা বলেছিলেন। দ্রুত বিষয়টি মেটানো উচিত।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

strike bus workers harrassment asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE