Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হেনস্থা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেই, ক্ষুব্ধ কর্তারা

তিন কর্তা প্রহৃত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পরেই কোনও আধিকারিক কাজ করতে চাইছেন না জানিয়ে খনিতে নোটিস দিলেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে ঝোলানো ওই নোটিসে জানানো হয়, কোনও আধিকারিক এখানে কাজ করতে চাইছেন না। তাই কর্তৃপক্ষ খনিটি বন্ধের চিন্তাভাবনা করছেন। খনিকর্মীরা তিন দিনের মধ্যে পছন্দের জায়গায় বদলির আবেদন জানাতে পারেন।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৪
Share: Save:

তিন কর্তা প্রহৃত হওয়ার অভিযোগ ওঠার পরেই কোনও আধিকারিক কাজ করতে চাইছেন না জানিয়ে খনিতে নোটিস দিলেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে ঝোলানো ওই নোটিসে জানানো হয়, কোনও আধিকারিক এখানে কাজ করতে চাইছেন না। তাই কর্তৃপক্ষ খনিটি বন্ধের চিন্তাভাবনা করছেন। খনিকর্মীরা তিন দিনের মধ্যে পছন্দের জায়গায় বদলির আবেদন জানাতে পারেন।

সোমবার অন্ডালের কেন্দা এরিয়ার ৭/৯ পিটে উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফর্মার বসানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে এজেন্ট, সহকারী ম্যানেজার ও ম্যানেজারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এক দল বহিরাগত ও কিছু খনিকর্মীর বিরুদ্ধে। খনি কর্তৃপক্ষ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তারা অধরা। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও কেন অভিযুক্তদের ধরা গেল না, সে প্রশ্নে অন্ডাল থানার পুলিশ জানায়, তাদের খোঁজ চলছে। খনি কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ওই গোলমালের পুরোভাগে থাকার অভিযোগে তিন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

এই ঘটনা নিয়ে ওই খনিতে এ দিন কোলিয়ারির শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক হয়। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় এ দিন প্রশ্ন তোলেন, “সংযুক্ত পরামর্শদাতা কমিটি থাকা সত্ত্বেও তার মাধ্যমে দাবি না জানিয়ে খনি চত্বরে বহিরাগত ঢোকে কী করে? কোনও দাবি থাকলে নিয়ে তো কথা বলা উচিত ওই কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সেখানে সব পক্ষের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।” কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে সোমবার রাতে ঝোলানো নোটিস প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনা করতে পারেন কর্তৃপক্ষ।

খনিকর্তাদের অবশ্য অভিযোগ, একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও খুব কম ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল সোদপুর এরিয়ার সোদপুর ৯-১০ নম্বর খনি বন্ধ করে দেওয়ার বিঞ্জপ্তি জারির প্রতিবাদে এক তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে মারধর করা হয় খনির ম্যানেজার পার্থ রায়কে। বর্তমানে পারবেলিয়া কোলিয়ারিতে কর্মরত পার্থবাবু জানান, ওই খনিটির উৎপাদন অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুধু দু’টি পাম্পের সাহায্যে খনির ভিতরের জল নিয়ন্ত্রণের কাজ হচ্ছিল। এরই মধ্যে ডিজিএমএস খনি নিরীক্ষণ করে জানিয়ে দেয়, ডুলির অবস্থা ভালো নয়। ডিজিএমএস খনিটি বন্ধের নির্দেশ জারি করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের চিঠি দেয়। সেই মতো পার্থবাবু ২ এপ্রিল খনি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেন। পার্থবাবু অভিযোগ করেন, সে দিন সকালে তিনি ওই কোলিয়ারির অন্য একটি খনিতে গিয়েছিলেন। সকাল ১১টা নাগাদ বিরাট মোটরবাইক মিছিল সেখানে গিয়ে তাঁকে জোর করে একটি মোটরবাইকে চাপিয়ে এই খনিতে নিয়ে আসে। তার পরে ওই নেতার উপস্থিতিতে তাঁর অনুগামীরা তাঁকে মারধর করে।

তার আগে ২০০৭ সালে পুজোর আগে বোনাসের টাকা কর্মীদের ব্যাঙ্ক চেকের বদলে নগদে মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে অন্ডালের সিঁদুলি কোলিয়ারির ম্যানেজার মণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে ঘেরাও করা হয়। অভিযোগ, এক শ্রমিক নেতার নেতৃত্বে সংগঠনের সমর্থকেরা ম্যানেজারকে কার্যালয় থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে। শাস্তি বলতে, ওই শ্রমিক নেতাকে সংস্থার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বছর বয়কট করেছিল। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাঁকোলা এরিয়া কার্যালয়ে এক কর্মী অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁর হাজিরা হল, এ নিয়ে কৈফিয়ত তলব করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মীর রোষে পড়েন এরিয়ার ওয়েলফেয়ার অফিসার (ট্রেনি) দিব্যেন্দু ঘোষ। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

২০১৩ সালের গোড়ার দিকে জে কে নগর কোলিয়ারির এজেন্ট অম্বুজাক্ষ পাণ্ডেকে জলের দাবিতে মারতে মারতে কার্যালয় থেকে বের করে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে এক তৃণমূল নেতা তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে ওই নেতা-সহ লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেনি। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের দাবি, পরে চাপে পড়ে পুলিশ অভিযোগ নিলেও অভিযুক্তেরা প্রথম দিনই জামিন পেয়ে যান।

২০০৮ রতিবাটি কোয়ারডি কোলিয়ারির সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পি কে মুখোপাধ্যায়ের কাছে দাবি আদায় করতে গিয়ে এক সিটু নেতা তাঁর হাতে ছুঁচ ফুটিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ২০১২ সালে পরাশিয়া কোলয়ারিতে শবদাহের জন্য প্রয়োজনের অনেক বেশি জ্বালানি কয়লার দাবি জানাতে আসেন এক দল বাসিন্দা। নেতৃত্বে ওই খনির তিন কর্মী। অভিযোগ, তাঁদের দাবি না মানতে চাওয়ায় দুই আধিকারিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধান্ডাডিহি গ্রামে আটকে রাখা হয়। পরে অভিযুক্ত তিন খনিকর্মীকে বরখাস্ত করে সংস্থা। একমাত্র এই ঘটনাতেই এ অবধি শাস্তি হয়েছে বলে আধিকারিকদের থেকে জানা গিয়েছে।

কোল ইন্ডিয়া অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ইসিএল শাখার সম্পাদক দামোদর বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, অভিযুক্তদের ধরা হলেও তারা জামিন পেয়ে যায়। তেমন কোনও শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ খনিকর্তাদের। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের তরফে অবশ্য জানানো হয়, অভিযোগ পেলে তার ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

তা সত্ত্বেও হেনস্থার অভিযোগের বিরাম নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nilotpol roy chowdhury andal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE