Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১৮ জনের 

ঘটনার আট বছর পরে মঙ্গলবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম) শেখ মহম্মদ রেজা। এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ হয় সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।

বুধবার বর্ধমান আদালতে দোষীরা। ছবি: উদিত সিংহ।

বুধবার বর্ধমান আদালতে দোষীরা। ছবি: উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

বাম আমলের শেষ দিকে তৃণমূলের দুই কর্মীকে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মুণ্ডেশ্বরী নদীর চরে পিটিয়ে, তির মেরে খুনের দায়ে ১৮ জন সিপিএম কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিল বর্ধমান আদালত। ঘটনার আট বছর পরে মঙ্গলবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম) শেখ মহম্মদ রেজা। এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ হয় সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।

এ দিন আদালতের রায়ের পরে মামলার সরকারি আইনজীবী শিবরাম ঘোষাল বলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় এই নির্দেশ দেয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে বিচারক। অনাদায়ে আরও তিন মাস জেলের কথা জানিয়েছেন বিচারক।”

পুলিশ জানায়, ২০১০-র ১৪ সেপ্টেম্বর জামালপুরের উজিরপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। নদী-চর থেকে মেলে স্থানীয় অমরপুর গ্রামের ঈশা হক মল্লিক (৫৪) ও উজিরপুরের পাঁচু দাসের (৬২) দেহ। এই ঘটনায় পাঁচুবাবুর ভাইপো প্রবীর দাস সিপিএমের ১৮ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার পরেই চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পুলিশ চার্জশিট দেওয়ার পরে ১৮ জন অভিযুক্তই জামিন পান।

ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার সুজিত ভট্টাচার্য একটি রিপোর্টে আদালতকে জানান, নদীর পার থেকে প্রায় পাঁচ ফুট নীচে চরের ভিতরে তিরবিদ্ধ অবস্থায় দেহগুলি মেলে। ওই সময়ে এলাকা এতটাই তেতে ছিল যে, দেহ দু’টি শনাক্ত করার জন্য পরিজনরা কেউ এগিয়ে আসেননি! পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দেহ দু’টি শনাক্ত করেন পরিজনেরা।

প্রবীরবাবু পুলিশকে জানান, গ্রাম দখলের নামে স্থানীয় মুইদিপুর পচা মার্কেট থেকে ঘটনার দিন সকাল থেকে তাণ্ডব শুরু করে সিপিএম। সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য মিলন মালিকের নেতৃত্বে অমরপুর, উজিরপুর, রেশালতপুর গ্রামে একের পর এক তৃণমূলের দফতর, তৃণমূল কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। সেই সময় রাস্তা থেকে ঈশা হক মল্লিককে ও বাড়ি থেকে পাঁচুবাবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়।

২০১৪-র ২ মে থেকে পাঁচ জন প্রত্যক্ষদর্শী-সহ ১৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হয়। আইনজীবীরা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন, মাথায় লাল ফেটি বেঁধে সিপিএম লাঠি-রড-তির নিয়ে তাণ্ডব চালায়। সেই সময়ে তাঁদের চোখের সামনে দু’জনকে খুন করা হয় বলে জানান। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁদের সংযোজন, খুন হতে দেখেও ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পরে থেকেই তাঁরাও গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দোষী ১৮ জনের মধ্যে মিলন মালিক ছাড়াও তাঁর দুই ছেলে ঝন্টু মালিক ও মনোজ মালিক রয়েছেন। মিলন মালিকের ভাইপো সিপিএমের পার্টি সদস্য সুদেব মালিককেও আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এ দিন তিনি অবশ্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘ঘটনার সময় এলাকাতেই ছিলাম না। স্নাতক হওয়ার পরে মামার বাড়ি থেকে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সিপিএম সূত্রে খবর, এ বছর অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিদপুর থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন হাবল সাঁতরা। তিনিও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। একই পরিবারের চার ভাইকে আদালত যাবজ্জবীন সাজা দিয়েছেন।

এ দিন আদালতের সাজাঘোষণার পরে যোগাযোগ করা হয় সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমর ঘোষের সঙ্গে। তিনি অবশ্য বলেন, “ভোটই তো হচ্ছে না, তা হলে আর অস্বস্তি কী! সংঘর্ষে দু’জন মারা গিয়েছিলেন। জেলা আদালত সাজা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে যাব।”

এ দিন সকাল থেকেই আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক। রায় ঘোষণার পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সে খবর দেওয়ার ফাঁকেই তাঁর প্রতিক্রিয়া, “জামালপুরে সিপিএম গ্রাম দখলের নামে কী অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছিল, আদালতের এই রায়ে এ দিন ফের তা প্রমাণিত হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman court CPM বর্ধমান
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE