Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হোম থেকেই সেন্টারে বিয়ে রোখা অঞ্জলি

বিয়েতে আপত্তি জানিয়ে পড়তে চেয়ে চাইল্ডলাইনের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল বছর ষোলোর অঞ্জলি মান্ডি। তার বর্তমান ঠিকানা বর্ধমানের ঢলদিঘির শিশুকল্যাণ কমিটির (সিডব্লুসি) হোম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

বিয়েতে আপত্তি জানিয়ে পড়তে চেয়ে চাইল্ডলাইনের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল বছর ষোলোর অঞ্জলি মান্ডি। তার বর্তমান ঠিকানা বর্ধমানের ঢলদিঘির শিশুকল্যাণ কমিটির (সিডব্লুসি) হোম। সেখান থেকেই বুধবার পুলিশের ঘেরাটোপে সুভাষপল্লির একটি স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল অঞ্জলি।

মেরুন রঙের চুড়িদারে সকাল দশটা নাগাদ পুলিশের গাড়িতে সুভাষপল্লির স্কুলে পৌঁছয় অঞ্জলি। তিন তলার একটি ঘরে পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা শেষ হতেই স্কুলের অন্য একটি দরজা দিয়ে তাকে বের করে হোমে পৌঁছে দেয় পুলিশ। পরীক্ষা কেমন হল? — ওড়নায় ঢাকা মুখটা খুলে হেসে হোমে ঢুকে যায়। তারপরেই হোমের কোলাপসিবল গেট লাগিয়ে পর্দা টেনে দেওয়া হয়।

হোমের এক কর্ত্রী বলেন, “শিশুকল্যাণ কমিটির অনুমতি ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে না আবাসিকরা। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার সময় বাবা-মা না থাকায় অঞ্জলি কষ্ট পেয়েছে। পরীক্ষা মোটামুটি হয়েছে বলেও জানিয়েছে।” হোমে আসা ইস্তক সে পরীক্ষা দিতে চায় বলে জিদ ধরে থাকায় কর্তৃপক্ষ ও চাইল্ডলাইন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ওই পরীক্ষার্থীর স্কুল রসুলপুর বৈদ্যডাঙার প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে বর্ধমান শহরেই পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে হোম কর্তৃপক্ষকে জানায়। ওই চিঠি পাওয়ার পর হোম কর্তৃপক্ষ পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালকে চিঠি দিয়ে পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য চিঠি দেয়। কুণালবাবু পুলিশ লাইনে থাকা বিশেষ মহিলা কর্মী নিয়োগ করে ওই নাবালিকা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, সে ব্যবস্থা করেন।

চাইল্ডলাইনের বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর অভিষেক বিশ্বাস বলেন, “প্রথম দিন হাতে গোনা কয়েক’টা বই এনেছিল অঞ্জলি। পরে বাড়ি থেকে আরও কিছু বই আনা হয়। খাতা-পেনেরও ব্যবস্থা করে দিই।” অঞ্জলির বাড়ি মেমারির উল্লেরা-সোয়েরা পাড়া গ্রামে। এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বিয়ে হচ্ছিল শক্তিগড়ের কাছে। বিয়েতে আপত্তি জানিয়ে মেমারি থানা ও পঞ্চায়েত সদস্যের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সেখান থেকে সাহায্য না পেয়ে নিজেই চাইল্ডলাইনের নম্বরে (১০৯৮) ফোন করে।

ওই ফোন পেয়ে বর্ধমান থেকে চাইল্ডলাইনের কর্মীরা বাড়িতে গেলে ওই পরীক্ষার্থীর বাবা রঘুনাথ মান্ডি মেয়ের বিয়ে দেব না বলে মুচলেকায় সই করেও দেন। চাইল্ডলাইনের কর্মীরা যখন বাড়ি ছাড়ব ছাড়ব করছেন, তখনই অঞ্জলি আর্তনাদ করে ওঠে, ‘ও দিদি, আমাকে তোমরা নিয়ে চলো! তোমাদের কাছে থেকেই পরীক্ষা দেব। তোমরা চলে গেলেই মা-বাবা বিয়ে দিয়ে দেবে!’ তারপরই ঠাঁই হয় বর্ধমানের হোমে। সেখানকার সুপার বলেন, “মেয়েটি পরীক্ষা দেবে বলে বাড়ি থেকে চলে এল। হোমে রয়েছে জানার পরেও বাড়ি বা গ্রাম থেকে কেউ খোঁজ নিতে এল না! অবাক লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Candidate Examination Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE