Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শাসকের ছায়াতেই উত্থান, দাবি শহরে

যদিও সাবেক বা বর্তমান শাসক দল, উভয়েরই দাবি, কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে কোনও কালেই তাদের কোনও রকম যোগাযোগ ছিল না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অল্প বয়স থেকেই অপরাধ জগতে হাতপাকানো। পুলিশ ও ব্যবসায়ী মহলের একাংশের দাবি, সেই সূত্রেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ওঠাবসা শুরু বার্নপুরের ডলি লজের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই ‘যোগসূত্র’-এর কারণেই একের পর এক নানা অপরাধের অভিযোগে কৃষ্ণেন্দুর নাম সামনে এলেও সে পুলিশের নাগালের বাইরে থেকেছে দীর্ঘকাল। সাহস করে অতীতে ব্যবসায়ীদেরও কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হতে দেখা যায়নি।

যদিও সাবেক বা বর্তমান শাসক দল, উভয়েরই দাবি, কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে কোনও কালেই তাদের কোনও রকম যোগাযোগ ছিল না।

কিন্তু কী ভাবে কৃষ্ণেন্দুর উত্থান? পুলিশ সূত্রের খবর, আসানসোলের এক নামী স্কুল থেকে পাশ করা এক সময়ের মেধাবী ছাত্র কৃষ্ণেন্দুর উচ্চশিক্ষা আসানসোলেরই একটি কলেজ থেকে। অতীতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল থাকলেও পরের দিকে তা খারাপ হয়। এই পরিস্থিতিতে কলেজে পড়াকালীনই অপরাধ জগতে হাত পাকানোর কাজ শুরু করে সে। একাধিক সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে গোলমালের ঘটনায় পুলিশেরও নজরে পড়ে সে। এর পরে,বাম আমলে, ৯০-এর দশকের শেষ দিকে শিল্পাঞ্চলের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সংস্পর্শে আসে সে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বেশ কিছু রাজনৈতিক গোলমালেও নাম জড়ায় কৃষ্ণেন্দুর। ব্যবসায়ী মহলের একাংশের দাবি, এই সময় থেকে ইস্কোর ছাঁট লোহা ও কয়লার কারবার শুরু করে কৃষ্ণেন্দু।

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও কৃষ্ণেন্দুর ‘কারবার’ চালাতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি বলে মত ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অভিযোগ, এই সময় থেকেই শাসক দলের নেতাদের একাংশের ছায়ায় নিজের কারবার-সাম্রাজ্য ছড়িয়ে দেয় কৃষ্ণেন্দু। অপহরণ, লুঠ-সহ নানা ঘটনায় নাম জড়ায় তার। কিন্তু কোনও ব্যবসায়ীই তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি। তার পরেও সে কখনও জেলে যায়নি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। কী এমন ঘটল, যে এই কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে ‘সক্রিয়’ হল পুলিশ? ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, সম্প্রতি তাঁরা নবান্নের শীর্ষ স্তরে কৃষ্ণেন্দু-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগ জানায়। তার পরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হিরাপুর থানার পুলিশ জানায়, সম্প্রতি বার্নপুরের নিউটাউনের বাসিন্দা, ইস্কোর এক ঠিকাদারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তোলা আদায়ের ঘটনাতেও নাম জড়ায় কৃষ্ণেন্দুর। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস জানান, অভিযোগ ফিরিয়ে নিতে ঠিকাদারের বাড়িতে চড়াও হওয়া, বাড়ির সামনে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে কৃষ্ণেন্দু ও তার দলবলের বিরুদ্ধে।

এলাকায় কৃষ্ণেন্দুর ‘সমাজসেবী’ পরিচয়ও রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক হাজার দুঃস্থ পড়ুয়াকে সাহায্য করা, শহরে প্রায় পাঁচ হাজার মোটরবাইক আরোহীকে নিখরচায় হেলমেট দেওয়া, দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুলের আর্থিক অনুদান-সহ নানা কাজে দেখা যায় কৃষ্ণেন্দুকে। ব্যবসায়ীদের আশা, কৃষ্ণেন্দুকে ধরা হলে, এলাকার নিরাপত্তা-পরিস্থিতিরই উন্নতি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE