রাজ্য কমিটির নির্দেশ, জোনাল ও লোকাল কমিটি ভেঙে এরিয়া কমিটি গঠনের কাজ সারতে হবে জুনের মধ্যেই। তা করতে গিয়ে বেজায় বিপাকে বর্ধমানের সিপিএম নেতৃত্ব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এরিয়া কমিটি গঠনের কাজ হয়ে যাবে, তা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু, বাদ পড়া নেতাদের ক্ষোভ কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ এখন সেটাই।
সম্প্রতি বর্ধমান জেলা ভাগ হলেও সাংগঠনিক ভাবে সিপিএম ভাগ হয়নি। তবে, ভাগের প্রস্তুতি চলছে দলে। সম্প্রতি রাজ্য কমিটির বৈঠকে বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব জানান, এরিয়া কমিটি করতে গিয়ে লোকাল ও জোনাল কমিটির বহু সদস্যকে বাদ দিতে হবে। ফলে ক্ষোভ তৈরি হবে। রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়ে দেন, এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা কার্যকর করতেই হবে।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, পরপর নির্বাচনী বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনা করে দলের নেতারা দেখেন, জোনাল কমিটির নেতাদের বড় অংশ দলীয় কার্যালয়েই দিন কাটান। মানুষের বিপদে-আপদে তাঁদের পাশে থাকতে দেখা যায় না। আবার লোকাল কমিটির অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও উদ্ধত আচরণের অভিযোগ রয়েছে। সবেচেয়ে বড় ব্যাপার, ৩৪ বছর দল ক্ষমতায় থাকায় অনেকেই আত্মতুষ্ট হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। আবার পালাবদলের পরে বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন।
সংগঠনের ধস রুখতে এবং মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তুলতে গত বছর জোনাল ও লোকাল কমিটি ভেঙে এরিয়া কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। নিষ্ক্রিয় বা বয়সের ভারে ন্যুব্জ নেতা-কর্মীদের সরিয়ে কমবয়সী উদ্যোমী নেতাদের সামনের সারিতে আনার লক্ষ্যে ৩১ বছরের নীচে কমপক্ষে এক জনকে নতুন কমিটিতে রাখা আবশ্যিক করা হয়। ৩১ থেকে ৩৭ বছরের মধ্যেও দু’তিনজন থাকতে হবে। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ না থাকাই ভালো। গণ আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, এমন নেতা-কর্মীদেরই রাখার কথা নতুন কমিটিতে।
এখন জেলায় এরিয়া কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ৩ জুলাই বর্ধমানে এসে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র তাতে সিলমোহর দেবেন। সিপিএম সূত্রের খবর, জেলায় এখন পার্টি সদস্য রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। ২৭টি জোনাল ও ১৬০টি লোকাল কমিটি মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৬০০। জেলায় এরিয়া কমিটি হবে প্রায় ৬০টি। কমিটি পিছু ১৫-১৭ জন হিসাবে মোট সদস্য হবেন প্রায় হাজার জন। নতুন কমিটিতে বয়স ও অন্য যোগ্যতা ধরে রাখতে গেলে বর্তমান লোকাল, জোনাল বা জেলা কমিটির বাইরে থেকেও অনেককে আনতে হবে। বাদ পড়া নেতা-কর্মীদের শাখা কমিটিতে ফিরে যেতে হবে।
এই আশঙ্কায় ইতিমধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। যেমন, খাস বর্ধমান শহর। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং বর্ধমানের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক আইনুল হকের বহিষ্কারের পরে এমনিতেই জোনাল কমিটি নড়বড়ে। এখন এরিয়া কমিটি গড়তে গিয়ে আরও পুরনো মুখ বাদ পড়া নিশ্চিত। তাঁদের ক্ষোভ সামলে সংগঠন ধরে রাখা কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বয়স্ক, নিষ্ক্রিয় বা অসুস্থ নেতাদের সরাসরি সরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। চিন্তা অপেক্ষাকৃত সক্রিয় ও কমবয়সিদের বাদ দেওয়া নিয়ে। দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের দলে যা হচ্ছে সহমতের ভিত্তিতেই হচ্ছে। কোনও অসন্তোষ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy