Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’হাজার দেখেই জবাব ‘খুচরো নেই’

বরাকর বাজার। সকাল সকাল হাতে থলি নিয়ে সব্জি বাজার করতে গিয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু তাঁকে দু’হাজারের নোট বের করতে দেখেই বিক্রেতার বক্তব্য, ‘দাদা খুচরো হবে না।’

নেই একশো, বিজ্ঞপ্তি আসানসোলের এটিএমে। —নিজস্ব চিত্র।

নেই একশো, বিজ্ঞপ্তি আসানসোলের এটিএমে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

বরাকর বাজার। সকাল সকাল হাতে থলি নিয়ে সব্জি বাজার করতে গিয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু তাঁকে দু’হাজারের নোট বের করতে দেখেই বিক্রেতার বক্তব্য, ‘দাদা খুচরো হবে না।’

দৃশ্য দুই: সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক আর এটিএমে হত্যে দিচ্ছিলেন দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকার এক প্রৌঢ়। কলকাতার কলেজে পড়া ছেলেকে টাকা পাঠাবেন। কিন্তু তিনিও টাকা না পেয়ে ঘোর চিন্তায়। — শনিবার দিনভর নোট-ভোগান্তির এমনই বিভিন্ন ছবি দেখা গেল আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়।

আসানসোল, বরাকর, কুলটি ঘুরে দেখা গেল, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছা়ড়া অন্য কোনও ব্যাঙ্কের প্রায় সব এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ। কোথাও বা এটিএম মেশিনের সামনে ঝোলানো বোর্ডে লেখা, ‘নো ক্যাশ।’

শনিবার আসানসোলের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঘুরে দেখা গেল টাকা তোলার লাইন আগের তুলনায় বেশ কম। তবে অধিকাংশ ব্যাঙ্কই দু’হাজার টাকার নোট দিচ্ছে বলে গ্রাহকেরা জানান। এমনকী দিনে ২৪ হাজার টাকার বদলে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা দিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। গ্রাহকেরা জানান, খুচরোর আকাল এমনই যে, টাকা তোলার চেকে পাঁচ হাজার লিখলে ব্যাঙ্ক কর্মীরা বলছেন, ‘চার বা ছ’হাজার টাকা লিখুন।’ শনিবারেও আসানসোলের কোথাও পাঁচশো টাকার নোট মেলেনি বলে জানা গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কে আবার সাড়ে ১২টার মধ্যেই টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সমিতেন্দ্র লাহিড়ী নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘দিনভর লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা মিলল না। ফের কাক ভোরে হত্যে দেব ব্যাঙ্কে।’’

প্রায় একই হাল দুর্গাপুরেও। ডিএসপি-র অবসরপ্রাপ্ত কর্মী স্বপন দাস জানান, এক আত্মীয় মারা গিয়েছেন। সে জন্য কিছু খরচাও হবে। শনিবার পাঁচটি এটিএম ঘুরে দু’হাজার টাকার নোট পেয়েছেন বলে জানান স্বপনবাবু। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘মিষ্টির দোকান থেকে বাসের ভাড়া মেটানো— খুচরোর অভাবে প্রতি পদে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাঙ্কে গিয়েও লাভ হচ্ছে না।’’

মাসের শুরুতে মাইনের টাকা হাতে পেয়েও সমস্যা মিটছে না বলে জানান একাধিক সরকারি কর্মচারী। স্কুল শিক্ষক জইনুল হক জানান, দু’হাজারের নোট নিয়ে মামরা বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু খুচরো না থাকায় ধারে জিনিস নিতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, ১০টা-৪টের কাজের জন্য ব্যাঙ্কে লাইন দিতে পারছেন না। এটিএম-এ গিয়েও সমস্যা মিটছে না। এর মধ্যেই ফুলঝোড়ের বাসিন্দারা জানান, এলাকার তিনটি এটিএমেরই ঝাঁপ বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে বাজার-হাট, ট্রেন-বাস থেকে অফিস পাড়া সকলেরই প্রশ্ন, ‘‘নিজের টাকা তুলতে পারছি না। হাতে যা আসছে, তাতেও কাজ হচ্ছে না। এ ভাবে আর কত দিন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATM Demonetisation Asansol-Durgapur Industrial Zone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE