Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লোধনায় ধৃত ৩, ক্ষোভ পুলিশের ভূমিকায়

ভোট মেটার পরেই খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামে অশান্তির ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে দু’জন তৃণমূলের এবং এক জন সিপিএমের কর্মী। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিপিএমের দুই কর্মী খুনে অভিযুক্ত দু’জন তৃণমূল কর্মীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার, তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগে ধরা হয়েছে সিপিএমের এক জনকে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধৃত দুই তৃণমূল কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধৃত দুই তৃণমূল কর্মী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

ভোট মেটার পরেই খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামে অশান্তির ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে দু’জন তৃণমূলের এবং এক জন সিপিএমের কর্মী। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিপিএমের দুই কর্মী খুনে অভিযুক্ত দু’জন তৃণমূল কর্মীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার, তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগে ধরা হয়েছে সিপিএমের এক জনকে। তবে তদন্তকারী অফিসার আদালতে হাজির না থাকায় শনিবার বর্ধমান আদালত সিপিএম কর্মী খুনের মামলা শুরু করার নির্দেশ দেয়নি। আজ, রবিবার তদন্তকারী অফিসারকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, শুক্রবার সকালে তৃণমূল সমর্থক এক মহিলা হামলার যে অভিযোগ করেন, সেটিতে অভিযুক্তদের তালিকায় প্রথম দু’টি নাম নিহত দুই সিপিএম কর্মীর। এই মামলায় এক জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালেও ওই দুই অভিযুক্ত যে খুন হয়েছেন, শনিবার তা আদালতকে জানায়নি পুলিশ। সে কারণে লোধনার এই গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। বর্ধমানের আইনজীবীদের একাংশেরও দাবি, মামলা দু’টিতে পুলিশ আদালতে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করেনি। জেলার পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা অবশ্য কোনও গাফিলতির কথা মানতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আমরা খুনের মামলা রুজু করার জন্য আদালতে আবেদন করেছি।”

বৃহস্পতিবার ভোট শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন সিপিএমের এজেন্ট, খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামের মল্লিকপাড়ার শেখ ফজল হক ও তাঁর বন্ধু মেটেপাড়ার দুখীরাম ডাল। তাঁদের পিছনে ছিলেন দুখীরামবাবুর ছেলে বিজয় ও আরও কয়েক জন। অভিযোগ, সেই সময়ে আচমকা জনা তিরিশ লোক তাঁদের আক্রমণ করে। সকলের চোখের সামনে ওই দু’জনকে টানতে টানতে মল্লিকপাড়ার কালভার্টের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁদের পিটিয়ে, হাতে, পায়ের শিরা কেটে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। বোমাবাজির জন্য আহতদের কাছে তাঁরা ভিড়তে পারেননি বলে পরিজনদের দাবি।

পুলিশ ঘণ্টাখানেক পর আহতদের উদ্ধার করে খণ্ডঘোষ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানেই পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে অভিযোগ করেন শেখ ফজল হকের স্ত্রী হেনা বিবি। তখনও বেঁচে ছিলেন সিপিএমের ওই দুই কর্মী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁদের মৃত্যু হয়। এর পরেই ফজল হকের ছেলে সজল খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ করেন, খণ্ডঘোষের তৃণমূল প্রার্থী নবীনচন্দ্র বাগের নেতৃত্বে তাঁর বাবা ও দুখীরাম ডালকে নৃশংস ভাবে বোমা ও টাঙি দিয়ে খুন করা হয়েছে।

শুক্রবার বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওমর আলি ও শেখ শওকত নামে ওই দু’জন তৃণমূলের সমর্থক এবং ফজল-দুখীরামকে খুনে জড়িত বলে অভিযোগ। পুলিশ শনিবার আদালতে লোধনা গ্রামের হেনা বেগমের অভিযোগের সঙ্গে খুনের ধারা যোগ করার অনুমতি চায়। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার নিজে আদালতে হাজির না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত। আজ, রবিবার তদন্তকারী অফিসারকে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান আদালতের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, “পুলিশের গাফিলতিতে দু’দিন পরেও খুনের মামলা চালু হল না, এটা বিস্ময়কর!”

লোধনা গ্রামেরই এক মহিলা শুক্রবার সকালে খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ শেখ ফজলু হক ও দুখীরাম ডালি-সহ ১১ জনের নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে হামলা হয়। ভয়ে তাঁর স্বামী শেখ কাবলু খেত দিয়ে পালাতে বাধ্য হন। দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট ও শ্লীলতাহানি করে। অভিযোগ পেয়ে খণ্ডঘোষ থানার তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন এবং ইদ্রিশ আলি নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছেন। আইনজীবী কমলবাবুর প্রশ্ন, “তদন্তকারী অফিসার জানাচ্ছেন, তিনি তদন্তে ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। অথচ, তিনি আদালতকে জানালেন না, মূল অভিযুক্তেরা খুন হয়ে গিয়েছেন।’’ তিনি আরও জানান, এফআইআরে ১১ জনের নাম থাকলেও পুলিশ ‘ফরওয়ার্ডিং লেটারে’ লিখছে অভিযুক্ত ১৪ জন।

ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে পুলিশ নানা রকম মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, “ভোটের পরে তৃণমূলের সন্ত্রাস ও পুলিশের গাফিলতির অভিযোগে রবিবার জেলা জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।” জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। সিপিএম মিথ্যে অভিযোগ করে নাটক করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patient tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE