Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কন্যাশ্রীর অ্যাকাউন্টে প্রতারণা

লাখুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মদনমোহন চৌধুরী জানান, গত শুক্রবার পম্পা এসে পাসবইটি দেখায় তাঁকে। দেখা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকেই তানভির আহমেদ খান, জাহির আহমেদ খান নামে একাধিক ব্যক্তি বেশ কয়েকবার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করেছে। উত্তরপ্রদেশের তিওয়ারিপুর শাখা, রোহতাস অ্যপার্টমেন্ট শাখার নামও রয়েছে পাসবইয়ে।

ধাপে ধাপে লক্ষাধিক টাকা জমা ও তোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট থেকে। তুলে নেওয়া হয়েছে কন্যাশ্রীর টাকাও। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের মদতেই এমনটা হয়েছে।— প্রতীকী ছবি।

ধাপে ধাপে লক্ষাধিক টাকা জমা ও তোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট থেকে। তুলে নেওয়া হয়েছে কন্যাশ্রীর টাকাও। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের মদতেই এমনটা হয়েছে।— প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০০:২০
Share: Save:

চার বছর ধরে কন্যাশ্রীর অ্যাকাউন্ট রয়েছে ওই ব্যাঙ্কে, কিন্তু কখনই টাকা তোলা-জমা হয়নি। এমনকী, ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পাসবই আপডেট করতেও দেয়নি বলে অভিযোগ। ২০১৬-র শেষে পাসবই আপডেট হওয়ার পরে দেখা যায়, ধাপে ধাপে লক্ষাধিক টাকা জমা ও তোলা হয়েছে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে। সঙ্গে তুলে নেওয়া হয়েছে মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর কন্যাশ্রীর টাকাও। ওই পরিবারের অভিযোগ, ব্যাঙ্কের মদতেই এমনটা হয়েছে। কাশেমনগরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ যদিও অভিযোগ মানতে চাননি।

মঙ্গলকোটের কোটালঘোষ গ্রামের দিনমজুর পরিবারের নবম শ্রেণির ছাত্রী পম্পা মাজির অভিযোগ, ২০১৪ সালের পর থেকে একাধিকবার পাসবই আপডেট করাতে চেয়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছে সে। কিন্তু প্রতিবারই জানানো হয়েছে টাকা ঢোকেনি। অথচ তাঁর সহপাঠীদের টাকা ঢুকেছে। বিষয়টি স্কুলেও জানায় সে। কখনও ভাই, কখনও বাড়ির অন্য লোক গিয়েও পাসবইটি আপডেট করার আর্জিও জানান। শেষমেশ, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লেনদেনের হিসেব দেওয়া হয় পাসবইয়ে। তাতেই দেখা যায়, উত্তরপ্রদেশের একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে বারেবারে টাকা জমা ও তোলা হয়েছে। এটিএম ব্যবহার করেও টাকা তোলা হয়েছে। অথচ কন্যাশ্রীর ওই অ্যাকাউন্টে এটিএম সুবিধে নেই। এরপরেই বিষয়টি গৃহশিক্ষক ও স্কুলে জানায় মেয়েটি। পম্পার দাবি, ব্যাঙ্কেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল সে। কিন্তু নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে বলা হয়।

লাখুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মদনমোহন চৌধুরী জানান, গত শুক্রবার পম্পা এসে পাসবইটি দেখায় তাঁকে। দেখা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকেই তানভির আহমেদ খান, জাহির আহমেদ খান নামে একাধিক ব্যক্তি বেশ কয়েকবার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করেছে। উত্তরপ্রদেশের তিওয়ারিপুর শাখা, রোহতাস অ্যপার্টমেন্ট শাখার নামও রয়েছে পাসবইয়ে। শুধু তাই নয়, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ‘এনইএফটি’ও করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কে বিষয়টি জানতে গেলে ওই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়।’’ আরও ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টেও কোনও গোলমাল রয়েছে কি না, সে আশঙ্কা করছেন তিনি।

পম্পার জ্যাঠামশাই তুফান মাজিরও অভিযোগ, “পম্পার বাবা নেই। মা কষ্ট করে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। পড়াশোনার জন্য পাওয়া সরকারি সাহায্য এ ভাবে নয়ছয় হয়ে গেলে খুবই মুশকিল।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কে গেলে তারা সহযোগিতা করছে না। আমাদের অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা আসবে কী ভাবে?’’

যদিও ওই ব্যাঙ্কের দাবি, ওই অ্যাকাউন্ট নম্বরটি কোনও ভাবে হয়তো পরিবারের তরফেই জানানো হয়েছে। ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। এরকম হওয়ার কথা নয়।’’ বিষয়টি জেলা স্তরে খোঁজ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী জানান, এরকমটা হওয়ার কথা নয়। অভিযোগ পেলে ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE